সুজাউদ্দিন খান
সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান ছিলেন বাংলার একজন নবাব। তিনি মুর্শিদ কুলি খানের কন্যা জয়নব উন-নিসা বেগম ও আজমত উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। তার তৃতীয় স্ত্রীর নাম দুরদানা বেগম সাবিহা। ৩০শে জুন ১৭২৭ সালে তার শ্বশুর মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর তিনি নবাব সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান | |||||
---|---|---|---|---|---|
'মুতামুল মুলক (দেশের কর্তা) সুজাউদৌলা (রাষ্ট্রের নায়ক) আসাদ জং (যুদ্ধের সিংহ) | |||||
রাজত্ব | ১৭২৭-১৭৩৯ | ||||
রাজ্যাভিষেক | জুলাই ১৭২৭ | ||||
পূর্বসূরি | মুর্শিদকুলি খাঁ | ||||
উত্তরসূরি | সরফরাজ খান | ||||
জন্ম | ১৬৭০-এর দিকে (তারিখ পাওয়া যায়নি) বুরহানপুর | ||||
মৃত্যু | আগস্ট ২৬, ১৭৩৯ মুর্শিদাবাদ | ||||
সমাধি | রোশনিবাগ, মুর্শিদাবাদ | ||||
স্ত্রীগণ |
| ||||
বংশধর | পুত্র: মির্জা আসাদুল্লাহ খান (সরফরাজ খান) ও মির্জা মুহাম্মদ তাকি খান বাহাদুর কন্যা: নাফিসা বেগম সাবিহা ও দুরদানা বেগম সাবিহা | ||||
| |||||
রাজবংশ | নাসিরি | ||||
পিতা | নবাব জান মুহাম্মদ খান (মির্জা নূর উদ্দিন মুহাম্মদ) | ||||
মাতা | (বিস্তারিত পাওয়া যায়নি) | ||||
ধর্ম | শিয়া ইসলাম |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতিনি দেক্কানের বুরহানপুরে মির্জা সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান (মির্জা দেক্কানী) নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নবাব জান মুহাম্মদ খান (মির্জা নূর উদ্দিন খান)। তিনি ১৭১৯ সালে ওড়িশার সুবেদার (প্রাদেশিক শাসক) হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়াও তিনি ১৭২৭ সালের জুলাইয়ে বাংলা ও ১৭৩১ সালে বিহারের সুবেদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সুবেদার উপাধিটি মুঘল শাসনামল থেকে প্রচলিত।[১] বুরহানপুরে সুজা প্রথম মুর্শিদ কুলি খানের সংস্পর্শে আসেন, যিনি শহর থেকে উৎপত্তি লাভ করেন। তিনি পরবর্তী কন্যা জিনাত উন-নিসাকে বিয়ে করেন যাদের সরফরাজ খান নামে পুত্র ছিল।[২][৩][৪]
ক্ষমতায় আরোহণ
সম্পাদনাসরাসরি উত্তারাধীকারী না থাকায় মুর্শিদ কুলি খান তার নাতি সুজাউদ্দিনের পুত্র সরফরাজ খানকে সিংহাসনের জন্য মনোনীত করেন। মুর্শিদ কুলি খান ১৭২৭ সালে মৃত্যুবরণ করনে ও সরফরাজ খানের সিংহাসন লাভের উপক্রম হয়।
এদিকে সুজা উদ্দিন ছিলেন ওড়িশার সুবেদার ও তার ডেপুটি ছিলেন আলীবর্দী খাঁ। মুর্শিদ কুলি খান সাধারনত সুজা উদ্দিনের জনগনের জন্য গৃহীত সর্বব্যাপী নীতিকে সমর্থন করতেন না। পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী যখন সরফরাজ খানকে সিংহাসনের উত্তারীধার হিসেবে ঘোষণা করা হয় তখন সুজাউদ্দিন নিজ পুত্রের অধীনে চাকরি করতে বিরক্ত ছিলেন। আলীবর্দী খাঁ ও তার ভাই হাজি, সুজা উদ্দিনকে বলেন এই পদের জন্য তিনিই সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি। আলীবর্দী খাঁ ও হাজির সাহায্যে সুজাউদ্দিন সিংহাসন দখলের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এছাড়াও তিনি মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ-এর সাহায্য পেয়েছিলেন, সম্রাট তাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলার নবাবদের রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে গমন করেন। পরিবারের মধ্যে কলহ এড়ানোর জন্য তখন মুর্শিদ কুলি খানের স্ত্রী বৈঠক করেন ও সরফরাজ খান পিতা সুজাউদ্দিনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সিংহাসনে বসতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৭২৭ সালের আগস্টের দিকে সুজা উদ্দিন পরিপূর্ণভাবে সিংহাসন লাভ করেন ও বাংলার দ্বিতীয় নবাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।
সুজাউদ্দিনকে সমর্থন করার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি মুঘল সম্রাটের কাছে বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন পাঠান। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ পরিবর্তে তাকে মুতামুল মুলক (দেশের কর্তা), সুজাউদৌলা (রাষ্ট্রের নায়ক) ও আসাদ জং (যুদ্ধের সিংহ) উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও মুঘল সম্রাট তাকে বিভিন্ন দামি উপঢৌকন দিয়ে সম্মান জানান।
মৃত্যু ও উত্তরাধীকার
সম্পাদনা১৭৩২ সালের দিকে নাদের শাহকে নিয়ে একটি উদ্বেগ ছড়িয়ে পরে। সুজাউদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন ও মৃত্যুভয়ে তিনি তার পুত্র ও দুরদানা বেগমকে ওড়িশা পাঠিয়ে দেন। এছাড়াও তিনি সরফরাজ খানকে তার উত্তারীকারী হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি সবসময় সরফরাজ খানকে হাজি আহমেদ, আলম চাদ ও জগতশেঠের উপদেশ মেনে নিতে বলতেন যদিও সরফরাজ তাদের পছন্দ করতেন না। ২৬শে আগস্ট ১৭৩৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা রেখে যান। তাকে মুর্শিদাবাদের রোশনিবাগে সমাধিস্থ করা হয়। তার মৃত্যুর পর পুত্র সরফরাজ খান সিংহাসনে বসেন এবং এ সময়ই নাদের শাহ দিল্লি আক্রমণ করেন।
সুজা উদ্দিন অত্যন্ত সমৃদ্ধিশীল একটি দেশ রেখে যান ও তার পুত্র ভালোভাবেই দেশ পরিচালনা করেন। নাসিরি রাজবংশ আরো ১৩ মাস স্থায়ী ছিল এবং সরফরাজ খানের সাথে সাথে এই রাজবংশেরও সমাপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ কে.এম করিম (২০১২)। "সুজাউদ্দীন মুহম্মদ খান"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Jadu Nath Sarkar। The History Of Bengal Muslim Period 1200 To 1757। ২। Dhaka: University of Dhaka.। পৃষ্ঠা ৪২২। আইএসবিএন 978-81-7646-239-6।
- ↑ Khan, Shah Navaz (১৯১১)। Ma'asir al-Umara of Shahnavaz Khan Aurangabadi (তুর্কি ভাষায়)। Henry Beveridge কর্তৃক অনূদিত (২য় সংস্করণ)। Patna: Janaki Prakashan। পৃষ্ঠা ৭২০।
- ↑ Subhan, Abdus (১৯৭০)। Journal of Indian History (ইংরেজি ভাষায়)। XLVIII (III)। Trivandrum: University of Kerala: Department of Modern Indian History। পৃষ্ঠা 536।
- Ghulam Hussein Salim, Riyaz-us-Salatin
- Mir Gholam Hussein-Khan Tabtabai, Siyar-ul-Mutakherin
- Purna Chandra Ray, The Musnud of Murshidabad
- Humayun Mirza, From Plassey to Pakistan
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাসুজাউদ্দিন খান জন্ম: ১৬৭০-এর দিকে মৃত্যু: আগস্ট ২৬, ১৭৩৯
| ||
পূর্বসূরী মুর্শিদ কুলি খান |
বাংলার নবাব ১৭২৭-১৭৩৯ |
উত্তরসূরী সরফরাজ খান |