সিরীয় মহাবিদ্রোহ
সিরীয় মহাবিদ্রোহ (আরবি: الثورة السورية الكبرى) বা দ্রুজ মহাবিদ্রোহ (১৯২৫–১৯২৭) মেন্ডেটরি সিরিয়া ও লেবানন সংঘটিত একটি গণ অভ্যুত্থান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী ফরাসিদের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এই অভ্যুত্থানটি সংঘটিত হয়।[১] এতে কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকলেও সুন্নি, শিয়া, দ্রুজ, আলাউয়ি ও খ্রিষ্টানরা ফরাসি শাসনের সমাপ্তি ঘটানোর অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে ফরাসিরা শেষপর্যন্ত এই অভ্যুত্থান দমন করতে সক্ষম হয়।
সিরীয় মহাবিদ্রোহ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
হাওরানে শেখ হিলাল আল-আত্রাশ, ১৪ আগস্ট ১৯২৫ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
সিরীয় বিদ্রোহী | |||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মরিস সারাইল রজার মিকাওড মরিস গেমেলিন হেনরি দা জুভেনাল চার্লস এন্ড্রিয়া |
সুলতান পাশা আল-আত্রাশ ফাওজি আল-কায়ুকজি হাসান আল-খাররাত † সাইদ আল-আস ইজ্জউদ্দিন আল-হালাবি নসিব আল-বাকরি মুহাম্মদ আল-আশমার রামাদান আল-শাল্লাশ (পরে ফ্রান্সের পক্ষে যোগদান) |
পটভূমি
সম্পাদনাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯১৮ সালে মিত্রশক্তি ও হাশেমি আরব মিত্রদের কাছে পরাজয়ের পর উসমানীয় সেনারা সিরিয়া থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। ইতিপূর্বে ব্রিটিশরা হাশেমিদেরকে একটি অখণ্ড আরব রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে অন্যদিকে মিত্রপক্ষ এই অঞ্চলের ভবিষ্যত নিয়ে নিজেদের মধ্যে সাইকস-পিকট চুক্তিতে উপনীত হয়।
সিরিয়া ও আরব স্বাধীনতার ধারণা নতুন ছিল না।[২] সিরিয়ায় প্রবেশকারী ফরাসি বাহিনী ১৯১৯ সালে উত্তরে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েছিল। এসময় খ্যাতনামা আলাউয়ি শেখ সালেহ আল-আলি উপকূলীয় পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্রোহ এবং ইবরাহিম হানানু আলেপ্পো ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। উভয় অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ আমির ফয়সালের অধীনে একটি অখণ্ড সিরিয়া রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন।[৩] ১৯২০ সালের মার্চে দামেস্ককে রাজধানী করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়া জন্মলাভ করে এবং ফয়সাল সিরিয়ার বাদশাহ হন।
১৯২০ সালের এপ্রিলে সান রেমো সম্মেলনে নবগঠিত লীগ অব নেশনস কর্তৃক মিত্রপক্ষকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাবেক আরব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা হয়। এসময় ফিলিস্তিন, ট্রান্সজর্ডান ও ইরাকের উপর ব্রিটেনের এবং সিরিয়ার উপর ফ্রান্সের আধিপত্য কায়েম হয়। উসমানীয়দের কাছ থেকে ফরাসিদের হাতে কর্তৃত্ব চলে যাওয়া বৃহত্তর সিরিয়ার বাসিন্দাদের অধিকাংশের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেয়। তবে লেবানন পর্বতের মেরোনাইট খ্রিষ্টানরা সহ স্থানীয় কিছু খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এর ব্যতিক্রম ছিল।[৪] স্বল্পকালীন ফরাসি-সিরীয় যুদ্ধে আরব বাহিনী ফরাসিদের কাছে পরাজিত হয় এবং নবীন রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। এরপর ফ্রান্স দেশটিকে একাধিক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। এগুলি হল দামেস্ক রাষ্ট্র, আলেপ্পো রাষ্ট্র, বৃহত্তর লেবানন, আলাউয়ি রাষ্ট্র ও জাবাল দ্রুজ রাষ্ট্র।[৫] অনেক জাতীয়তাবাদি এসময় সিরিয়ায় থেকে যায় এবং স্বাধীনতার সপক্ষে অবস্থান নেয়। সিরিয়া ও লেবাননকে উপনিবেশ ঘোষণার ফলে ব্রিটেনও অসন্তুষ্ট হয়েছিল।[২]
কারণসমূহ
সম্পাদনাঅভিজাতদের বিচ্ছিন্নকরণ
সম্পাদনাস্থানীয় অভিজাতদের সাথে ফরাসিদের সম্পর্ক বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল।[১] উসমানীয় যুগে দৈনন্দিন অনেক প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য স্থানীয় অভিজাতদেরকে অধিকতর কর্তৃত্ব প্রদান করেছিল। উসমানীয় মিল্লাত ব্যবস্থার আওতায় স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব আইনি ব্যবস্থা মেনে চলতে পারত। এই নিয়মের আওতায় মুসলিমদের উপর শরিয়াহ প্রযোজ্য হলেও ইহুদি, ক্যাথলিক বা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের উপর তা কার্যকর হত না।
ইউরোপীয় শক্তিসমূহ এ ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন ছিল না।[১] সিরিয়া নিয়ে ফরাসিদের ধারণা ছিল যে সিরীয়রা স্বশাসন বজায় রাখতে সক্ষম নয় এবং এই ধারণাবশত তারা নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। সরকারের সকল স্তরে ফরাসি প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় এবং তাদের দায়িত্ব ছিল তাদের সিরীয় সহযোগীদেরকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলা। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে ফরাসি উপদেষ্টারা প্রশিক্ষণের বদলে দায়িত্বসমূহ পালন করতে থাকে।[৬] স্থানীয় শাসকরা এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়। এছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে মুষ্টিমেয় পরিবারের হাতে কর্তৃত্বভার প্রদান করা হত। ইউরোপীয়রা এই প্রথা থেকে সরে আসে এবং সাধারণ ব্যক্তিদের জন্যও দপ্তর খুলে দেয়া হয়।
গোত্রসমূহের আনুগত্য
সম্পাদনাফরাসিরা শহরের বাইরের যাযাবর জনগণের সমর্থন পুরোপুরি আদায় করতে পারেনি। তাদের অনেকে ১৯২৫ সালের বিদ্রোহে অংশ নেয়।[৭] গোত্রসমূহের স্থায়ী বসবাসের প্রক্রিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক সূচিত হলেও সিরিয়ায় ফরাসি শাসনের সময় তারা তাদের যাযাবর জীবনধারা হারাতে শুরু করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গোত্রসমূহের বিচরণভূমি তুরস্ক, সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়ার মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। এসব স্থান ভিন্ন ভিন্ন শক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হত। এই বণ্টনের ফলে তাদের বিচরণস্থল সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিরিয়ায় শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ছিল দ্রুতগতির। দ্রুততার সাথে রাস্তা নির্মিত হয় এবং গাড়ি ও বাস সাধারণ হয়ে উঠে। নবগঠিত তুরস্ক থেকে আগত আর্মেনীয় ও কুর্দিরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বসতি স্থাপনের ফলে যাযাবরদের অবস্থা আরো অবনতি হয়।
অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফরাসিরা বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর আওতায় গোত্রের সদস্যরা বসতি এলাকায় অস্ত্র বহন করতে পারত না এবং তাদেরকে গবাদিপশুর উপর কর প্রদান করতে হত।[৮] উপরন্তু ফরাসিরা স্থানীয় নেতাদেরকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ সফল হলে অনেকে এর ফলে ক্ষুব্ধ হয়। ১৯২৫ সালে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার গোত্রীয় সদস্য ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসুক হয়ে উঠে।
জাতীয়তাবাদি মনোভাব
সম্পাদনাফয়সালের শাসনের সময় সিরীয় জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয়। কিন্তু তার পতনের পর সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক জাতীয়তাবাদি ফরাসিদের হাতে মৃত্যুদন্ড, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন এড়ানোর জন্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের কিছু সংখ্যক আম্মান পালিয়ে যায়। ফয়সালের ভাই আমির আবদুল্লাহকে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহমর্মী মনে করত। কিন্তু ব্রিটিশদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আবদুল্লাহ তাদেরকে ট্রান্সজর্ডান থেকে বের করে দেন। এর ফলে অন্যান্য সিরীয় জাতীয়তাবাদিরা ১৯২১ সালে কায়রোতে মিলিত হয় এবং এসময় সিরীয়-ফিলিস্তিনি কংগ্রেস গঠিত হয়।[২]
১৯২৫ সালে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে হাইকমিশনার জেনারেল মরিস সারাইল রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দেন। সিরীয়-ফিলিস্তিনি কংগ্রেস এসময় নিজেদেরকে কার্যকর প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় এবং দলের সিরীয় অংশ সিরিয়ায় ফিরে আসে। তারা দামেস্কে পিপল'স পার্টি গঠন করে। এই দল ছিল স্থানীয় অভিজাতদের প্রতি বিরূপ এবং তাদের কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। একটি অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুত না থাকলেও অভ্যুত্থান সংঘটনের ক্ষেত্রে দামেস্কের জাতীয়তাবাদি উপাদানসমূহ অংশগ্রহণের জন্য ইচ্ছুক ছিল।[৯]
দ্রুজ জনগোষ্ঠীর প্রতি অন্যায় আচরণ
সম্পাদনাদ্রুজ জনগোষ্ঠীর প্রতি অবিচারের ঘটনা সিরীয় মহাবিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত করে।[১০] উসমানীয় যুগের মত একই মাত্রার স্বায়ত্তশাসন পাওয়া যাবে এই ধারণায় ১৯২৩ সালে জাবাল আল-দ্রুজের নেতৃবৃন্দ ফরাসি কর্তৃপক্ষের সাথে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলেন।
দ্রুজ সমাজ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মজলিস কর্তৃক পরিচালিত হত। ১৮৬০ সালে লেবানিজ দ্রুজদের পরাজয়ের পর থেকে ঐতিহ্যগতভাবে আল-আত্রাশ পরিবার এই ভূমিকায় প্রাধান্য পেত।[১০] কিন্তু ফরাসিদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের স্বল্পকাল পর ১৯২৩ সালে সেলিম আল-আত্রাশ পদত্যাগ করেন। উত্তরসুরি নির্বাচন নিয়ে আল-আত্রাশ পরিবারের অনৈক্যের মধ্যে মজলিস কর্তৃক ফরাসি অফিসার ক্যাপ্টেন চারবিলেটকে নির্বাচন করা হয়। প্রথমদিকে তিন মাসের জন্য নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মেয়াদ বর্ধিত করা হয়।
ক্যাপ্টেন চারবিলেট ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু আধুনিকীকরণ করেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় দ্রুজদের কাছ থেকে কর আদায়, জনগণকে নিরস্ত্রকরণ এবং বন্দী ও চাষীদেরকে শ্রম প্রদানে বাধ্য করা হয়। এর ফলে জনগণের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ক্ষুব্ধ হয়।[১০] ইতিমধ্যে সুলতান আল-আত্রাশ বৈরুতে ফরাসি হাই কমিশনার জেনারেল মরিস সারাইলের কাছে প্রেরিত প্রতিনিধিদল মারফত জানান যে ক্যাপ্টেন চারবিলেটের কার্যক্রমসমূহ অধিকাংশ দ্রুজদের ক্ষুব্ধ করছে। সারাইল প্রতিনিধিদের কথা শোনার পরিবর্তে তাদের বন্দী করেন। এ ঘটনা জানার পর দ্রুজরা আল-আত্রাশ পরিবারের প্রতি নিজেদের সমর্থন প্রদান করে এবং ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
অভ্যুত্থান
সম্পাদনা১৯২৫ সালের ২৩ আগস্ট সুলতান আল-আত্রাশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি সিরিয়ার বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দেন। বিদ্রোহ সিরিয়াব্যপী ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে হাসান আল-খাররাত, নাসিব আল-বাকরি, আবদুর রহমান শাহবান্দার ও ফাওজি আল-কায়ুকজির মত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নেতৃত্ব প্রদান করেন।
১৯২৫ সালের ২২ জুলাই আল-কাফরের যুদ্ধ, ২-৩ আগস্টের আল-মাজরার যুদ্ধ ও এর পরবর্তী সালখাদ, আল-মুসাইফিরাহ ও সুওয়াইদার যুদ্ধের মাধ্যমে লড়াই শুরু হয়েছিল। বিদ্রোহীরা প্রাথমিকভাবে ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর ফরাসিরা মরক্কো ও সেনেগাল থেকে আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত কয়েক হাজার সৈন্য সিরিয়া ও লেবাননে পাঠায়। এর ফলে ফলাফলে আকস্মিক মোড় নেয় এবং ফরাসিরা অনেক শহর পুনর্দখল করে। তবে ১৯২৭ সালের বসন্ত পর্যন্ত প্রবল প্রতিরোধ অব্যাহত ছিল। ফরাসিরা সুলতান আল-আত্রাশ ও অন্যান্য জাতীয় নেতাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়। আল-আত্রাশ বিদ্রোহীদের সাথে পালিয়ে ট্রান্সজর্ডান চলে যান। পরে তার সাজা মওকুফ করা হয়। ১৯৩৭ সালে ফরাসি-সিরীয় চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি সিরিয়ায় ফিরে আসেন এবং জনগণের ব্যাপক অভ্যর্থনা লাভ করেন।
যুদ্ধের গতিপ্রবাহ
সম্পাদনাপ্রথমদিকে ফরাসিরা বিদ্রোহ প্রতিরোধ করার মত সুসজ্জিত ছিল না। ১৯২৫ সালে সিরিয়ায় ফরাসি সেনাসংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এসময় সৈনিক ও অফিসার মিলে ছিল ১৪৩৯৭ জন এবং পাশাপাশি ৫৯০২ জন সিরীয় সহায়ক সেনা।[১০] ১৯২৪ সালে স্থায়ী মেন্ডেট কমিশনকে প্রদত্ত রিপোর্টে ফরাসি প্রতিনিধি লেখেন যে “জাবাল দ্রুজের ছোট রাষ্ট্রের তেমন গুরুত্ব নেই এবং এখানে মাত্র ৫০,০০০ এর মত বাসিন্দা আছে।” [১১] এরপর ১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর দ্রুজরা সফল হয় এবং ধারাবাহিক বিজয়ের পর আল-সুওয়াইদার দুর্গ দখল করে নেয়।[১০]
শীতকালে দ্রুজদের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার পরিবর্তে ফরাসিরা সাময়িকভাবে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেয়। ফরাসিদের সামরিক শক্তির প্রদর্শনহীনতা ও বিদ্রোহের জাতীয় আবেদন তৈরী হওয়ায় নতুন হাই কমিশনার হেনরি দা জুভেনেল এই পদক্ষেপকে একটি কৌশলগত ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[১০] ফরাসিদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দুর্বল হওয়ায় স্থানীয় অভিজাত ও দামেস্কের জাতীয়তাবাদিরা এতে যোগ দেয়।
যাযাবর গোত্রসমূহ প্রথমে বিদ্রোহের ফলে সৃষ্ট সুযোগ গ্রহণ করে। অভ্যুত্থানের ছয় সপ্তাহের মধ্যে জাতীয়তাবাদিদের সাথে সুলতান আল-আত্রাশের মিত্রতা স্থাপিত হয়। এসময় জাবাল দ্রুজে একটি জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। আল-আত্রাশ ছিলেন এর প্রেসিডেন্ট ও ড. আবদুর রহমান শাহবান্দার ছিলেন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট।[৯]
সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেসময় বিদ্রোহ আক্রান্ত হয়নি এমন এলাকায় জুভেনাল নির্বাচন ঘোষণা করেন।[১২] তবে হিমস ও হামায় স্থানীয় অভিজাতরা নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করে। ১৯২৫ সালের ৪-৫ অক্টোবর হামায় ফাওজি আল-কায়ুকজি অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন এবং স্থানীয় জনগণ এতে অংশ নেয়। ১৯২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পূর্ণমাত্রায় অভ্যুত্থান চলতে থাকে। এসময় ফরাসিদের সেনাসংখ্যা কম থাকায় হিমস ও হামায় নজর দেয়ার ফলে তাদেরকে অন্য এলাকায় থেকে নজর সরাতে হয় ফলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।[১৩] দুই মাসের মধ্যে হিমস ও হামা অঞ্চলের পতন হয়।[১৩]
হিমস ও হামায় বিদ্রোহ সত্ত্বেও নির্বাচনের ফলাফল থেকে ফরাসিদের ধারণা হয় যে সিরিয়ার জনগণ শান্তি স্থাপনে ইচ্ছুক। হিমস ও হামার পার্শ্ববর্তী প্রত্যন্ত এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি এবং এখানে ৯৫% ভোটার উপস্থিতি ছিল।[১২] ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও জাবাল দ্রুজ ও দামেস্ক ছাড়া বাকি দেশ শান্ত ছিল।[১২]
বিদ্রোহীদের প্রাথমিক পর্যায়ে সাফল্য সত্ত্বেও ফরাসিরা বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হয়। ১৯২৬ সালের শুরুর দিকে ফরাসিরা সেনা সংখ্যা ৫০,০০০ এ উন্নীত করে। এই সংখ্যা ছিল দ্রুজ জনসংখ্যার প্রায় সমান।[১৪] বসন্ত নাগাদ দামেস্কের অধিকাংশ গোলার আঘাত বিধ্বস্ত হয় এবং জাতীয়তাবাদি নেতারা নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন।[১৫] পরের বছর বসন্তে দ্রুজরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় এবং সুলতান আল-আত্রাশ ট্রান্সজর্ডানে নির্বাসিত হন।
ফলাফল
সম্পাদনাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর ফলে ফরাসিদের আচরণগত পরিবর্তন হয়। এরপর সিরিয়া শাসনের জন্য নমনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৯২৮ সালের মার্চে বিদ্রোহীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। সেসাথে বলা হয় যে সুলতান আল-আত্রাশ ও ড. শাহবান্দারসহ বিদ্রোহী নেতারা ফিরে আসার অনুমতি পাবেন না।
এই বিদ্রোহে প্রায় ৬,০০০ বিদ্রোহী নিহত এবং ১,০০,০০০ এর বেশি লোক উদ্বাস্তু হয়। এদের এক পঞ্চমাংশ দামেস্কে চলে যায়। হামার অবস্থাও অনুরূপ ভঙ্গুর ছিল। সিরিয়াজুড়ে শহর ও খামারসমূহে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং কৃষি ও ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।[১৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Miller, 1977, p. 547.
- ↑ ক খ গ Khoury, 1981, pp. 442-444.
- ↑ Moosa, p. 282.
- ↑ Betts, pp. 84-85.
- ↑ Betts, p. 86.
- ↑ Gouraud, Henri. La France En Syrie. [Corbeil]: [Imp. Crété], 1922: 15
- ↑ Khoury, Philip S. "The Tribal Shaykh, French Tribal Policy, and the Nationalist Movement in Syria between Two World Wars." Middle Eastern Studies 18.2 (1982): 184
- ↑ Khoury, Philip S. "The Tribal Shaykh, French Tribal Policy, and the Nationalist Movement in Syria between Two World Wars." Middle Eastern Studies 18.2 (1982): 185
- ↑ ক খ Khoury, 1981, pp. 453-455.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Miller, Joyce Laverty (১৯৭৭)। "The Syrian Revolt of 1925"। International Journal of Middle East Studies। পৃষ্ঠা 550–555।
- ↑ League of Nations, Permanent Mandates Commission, Minutes of the Fourth Session (Geneva, 1924), p. 31
- ↑ ক খ গ Miller, 1977, pp. 560-562.
- ↑ ক খ Bou-Nacklie, N.E. "Tumult in Syria's Hama in 1925: The Failure of a Revolt." Journal of Contemporary History 33.2 (1998): 274
- ↑ Khoury, Philip S. "Factionalism Among Syrian Nationalists During the French Mandate." International Journal of Middle East Studies 13.04 (1981): 461
- ↑ ক খ Khoury, Philip S. (১৯৮১)। Factionalism Among Syrian Nationalists During the French Mandate। পৃষ্ঠা 460–461।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Betts, Robert Brenton (২০১০)। The Druze। Yale University Press। আইএসবিএন 0300048106।
- Miller, Joyce Laverty (অক্টোবর ১৯৭৭)। "The Syrian Revolt of 1925"। International Journal of Middle Eastern Studies। 8 (4): 545–563। ডিওআই:10.1017/S0020743800026118।
- Khoury, Philip S. (নভেম্বর ১৯৮১)। "Factionalism Among Syrian Nationalists During the French Mandate"। International Journal of Middle Eastern Studies। 13 (4): 441–469। ডিওআই:10.1017/S0020743800055859।
- Khoury, Philip S. (১৯৮২)। "The tribal shaykh, French tribal policy, and the nationalist movement in Syria between two world wars"। Middle Eastern Studies। 18 (2): 180–193। ডিওআই:10.1080/00263208208700504।
- Bou-Nacklie, N.E. (জানুয়ারি ১৯৯৮)। "Tumult in Syria's Hama in 1925: The Failure of a Revolt"। Journal of Contemporary History। 33 (2): 273–289। ডিওআই:10.1177/002200949803300206।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Michael Provence, "The Great Syrian Revolt and the Rise of Arab Nationalism", University of Texas Press, 2005.
- Anne-Marie Bianquis et Elizabeth Picard, Damas, miroir brisé d'un orient arabe, édition Autrement, Paris 1993.
- Lenka Bokova, La confrontation franco-syrienne à l'époque du mandat – 1925–1927, éditions l'Harmattan, Paris, 1990
- Général Andréa, La Révolte druze et l'insurrection de Damas, 1925–1926, éditions Payot, 1937
- Le Livre d'or des troupes du Levant : 1918–1936. <Avant-propos du général Huntziger.>, Préfacier Huntziger, Charles Léon Clément, Gal. (S. l.), Imprimerie du Bureau typographique des troupes du Levant, 1937.