চোগিয়াল
চোগিয়াল (বা চোগ্যাল) অথবা ছোগিয়াল (বা ছোগ্যাল) ("ধর্ম রাজ", তিব্বতি: ཆོས་རྒྱལ, ওয়াইলি: chos rgyal, সংস্কৃত: धर्मराज) বর্তমানে ভারতের অংশ সিকিম ও লাদাখের পূর্ববর্তী স্বাধীন রাজ্যের রাজা ছিলেন। সিকিম ও লাদাখ রাজ্য নামগিয়াল রাজবংশের দুটি পৃথক শাখা দ্বারা শাসিত ছিল। ১৬৪২ সাল ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চোগিয়ালরা সিকিমের নিরঙ্কুশ রাজা ছিলেন। ১৯৭৫ সালে সিকিমে রাজতন্ত্র বিলোপের প্রশ্নে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এক নামেমাত্র 'গণভোট'-এ সিকিমের রাজতন্ত্র বিলোপের 'পক্ষে' ফলাফল আসলে, সিকিম ভারতের ২২তম রাজ্যে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে স্বাধীন সিকিম পরাধীন হয় এবং চোগিয়ালদের ক্ষমতার অবসান ঘটে।
সিকিমের চোগিয়াল | |
---|---|
প্রাক্তন রাজতন্ত্র | |
সিকিমের সিল | |
পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল | |
প্রথম রাজশাসক | ফুঁসোগ নামগিয়াল |
শেষ রাজশাসক | পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল |
দাপ্তরিক আবাস | গ্যাংটক, সিকিম |
রাজতন্ত্রের সূচনা | ১৬৪২ |
রাজতন্ত্রের সমাপ্তি | ১৬ মে ১৯৭৫ |
বর্তমান ধারক | ওয়াংচুক নামগিয়াল |
ভুটানের রাজা
সম্পাদনাভুটানে রাজা "ধর্ম রাজ" হচ্ছে একটি পদবি যা সাময়িক ও আধ্যাত্মিক শাসকদের একটি বিশেষ শ্রেণির অন্তর্ভুক্তদের ভূষিত করা হতো। ভুটানে চোগিয়ালদের সম্মানজনক "ঝাবদ্রুং" বা "শবদ্রুং" উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে চোগিয়াল ১৭ শতাব্দীর তিব্বতি-বংশোদ্ভূত ভূটানের প্রতিষ্ঠাতা শবদ্রং নাগাওয়ং নামগিয়ালের স্বীকৃত পুনর্জন্ম (বা পুনর্জন্মের উত্তরসূরি) ছিলেন। সর্বোচ্চ মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা ভূটানের চোগিয়াল একই সাথে সর্বোচ্চ সন্ন্যাসী কর্তৃপক্ষ "জে খ্যানপো" এবং সর্বোচ্চ আঞ্চলিক শাসক দেব রাজা বা "ড্রুক দেশী" ছিলেন।[১] ভুটানে ঝাবড্রুং অবতারের দুটি প্রধান শাখা ছিল।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৬৪২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সিকিমের নামগিয়াল রাজপরিবার (যাকে চোগিয়াল রাজতন্ত্রও বলা হয়) কর্তৃক সিকিম শাসিত হতো। এই রাজবংশ তিব্বতের খাম জেলা থেকে সিকিমে আসা মিন্যাক হাউসের রাজপুত্র গুরু তাসির পঞ্চম-প্রজন্মের বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[২] 'চোগিয়াল' শব্দের অর্থ 'ধর্ম রাজ' বা 'ধার্মিক শাসক'। নামগিয়াল রাজপরিবারের রাজত্বকালে সিকিমের বৌদ্ধ রাজাদের এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল।[৩] তিব্বতীয় ধর্মগুরু পদ্মসম্ভব বা গুরু রিনপোছ চোগিয়ালের রাজত্বের ভবিষ্যতবাণী করেছিলন। অষ্টম শতাব্দীতে এই ধর্মগুরু পদ্মসম্ভব যখন সিকিম রাজ্যে এসেছিলেন তখন তিনি এই ভবিষ্যতবাণী করেছিলন। ১৬৪২ সালে চোগিয়াল ফুঁসোগ নামগিয়াল ইউকসোমে সিকিমের প্রথম শাসক হিসাবে সিংহাসনে বসেন। রাজাকে মুকুট পড়ানোর ঘটনাটি সিকিমের ইতিহাসের একটি বিরাট ঘটনা। তিনটি ভিন্ন দিক (উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম) থেকে আসা তিনজন শ্রদ্ধেয় লামা রাজাকে রাজমুকুট পড়িয়েছিলেন।
সিকিমের চোগিয়ালদের তালিকা (১৬৪২–১৯৭৫)
সম্পাদনাক্রমিক নং | রাজত্বকাল | প্রতিকৃতি | চোগিয়াল (জীবনকাল) |
ঘটনা |
---|---|---|---|---|
১ | ১৬৪২–১৬৭০ | ফুঁসোগ নামগিয়াল (১৬০৪–১৬৭০) |
সিকিমের সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে তিনি সিকিমের প্রথম চোগিয়াল হন। ইউকসোম শহরকে রাজধানীতে পরিণত করেন। | |
২ | ১৬৭০–১৭০০ | তেনসুং নামগিয়াল (১৬৪৪–১৭০০) |
ইউকসোম থেকে রাবডেন্টসেতে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। | |
৪ | ১৭১৭–১৭৩৩ | গ্যুরমেফ নামগিয়াল (১৭০৭–১৭৩৩) |
নেপাল সিকিম আক্রমণ করে | |
৫ | ১৭৩৩–১৭৮০ | ২য় ফুঁসোগ নামগিয়াল (১৭৩৩–১৭৮০) |
নেপালিরা সিকিমের রাজধানী রাবডেন্টসেতে হামলা চালায়। | |
৬ | ১৭৮০–১৭৯৩ | তেনজিং নামগিয়াল (১৭৬৯–১৭৯৩) |
চোগিয়াল তিব্বতে পালিয়ে যান এবং পরে নির্বাসবে থাকা অবস্থায় মারা যান। | |
৭ | ১৭৯৩–১৮৬৩ | সুগফুদ নামগিয়াল (১৭৮৫–১৮৬৩) |
সিকিমের দীর্ঘস্থায়ী চোগিয়াল। রাবডেন্টসে থেকে তুমলংয়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ১৮৭১ সালে সিকিম ও ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যারফলে নেপালের কাছে হারানো অঞ্চলগুলি সিকিম ফিরে পায়। ১৮৩৫ সালে তিনি দার্জিলিংকে ব্রিটিশ ভারতকে উপহার দেন। দুই ব্রিটিশ ডাঃ আর্কিবাল্ড ক্যাম্পবেল এবং ডাঃ জোসেফ ডাল্টন হুকার ১৮৪৯ সালে সিকিমিদের দ্বারা বন্দী হন। ব্রিটিশ ভারত ও সিকিমের মধ্যে বৈরিতা অব্যাহত থাকে এবং সবশেষে সিকিম ও ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ ভারতকে পুরোপুরিভাবে দার্জিলিং দিয়ে দেওয়া হয়। | |
১১ | ১৯১৪–১৯৬৩ | থাসি নামগিয়াল (১৮৯৩–১৯৬৩) |
১৯৫০ সালে ভারত ও সিকিমের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে সিকিম ভারতের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। | |
১২ | ১৯৬৩–১৯৭৫ | পালডেন থন্দুপ নামগিয়াল (১৯২১–১৯৮২) |
সিকিমের সর্বশেষ চোগিয়াল। ১৯৭৫ সালের নামেমাত্র গণভোটের পর দেশটি ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। |
পালডেন থন্দুপ নামগিয়ালের পুত্র ওয়াংচুক নামগিয়ালল (জন্ম ১ এপ্রিল ১৯৫৩) ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি তার পিতার মৃত্যুর পর ১৩তম চোগিয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার উপাধিটির আর কোন সরকারি স্বীকৃতি ছিল না।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Norbu, Namkhai (1988, 2000). The Crystal and the Way of Light: The Teachings of Namkhai Norbu. (Snow Lion Publications) pg.20 and Notes.
- ↑ Measuroo.com States and Territories of India series. Online: [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (accessed: 14 May 2008)
- ↑ Buyers, Christopher (2002). The Namgyal Dynasty: Brief History. Online [২] (accessed: 14 May 2008).