সালামা ইবনুল আকওয়া
সালামা ইবনুল আকওয়া (মৃত্যু ৬৪ হিজরি) মুহাম্মদ(সাঃ)একজন সাহাবা ছিলেন । তিনি একজন দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন । তিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন ।
নাম ও বংশ পরিচয়
সম্পাদনাসালামা ইবনে আকওয়া এর মূলনাম নাম সিনান । তার পিতার নাম আমর ইবনুল আকওয়া । তার উপনামের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, আবু মুসলিম , আবু ইয়াস, আবু আমের প্রভৃতি উপনাম ইতিহাসে পাওয়া যায় । তবে পুত্র ইয়াসের নাম অনুসারে আবু ইয়াস ডাক নামটি অধিক প্রসিদ্ধ।[১]
ইসলাম গ্রহণ
সম্পাদনাতার ইসলাম গ্রহণের সময়কাল অজানা। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি হিজরী ৬ষ্ঠ সনের পূর্বেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনায় হিজরত করেন । সালামা স্ত্রী ও সন্তানদের রেখেই করেই মদিনায় হিজরত করেন।[২]
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
সম্পাদনাসালামা ইবনুল আকওয়া ইসলাম গ্রহণের পর কাফিরদের সাথে সংঘটিত প্রায় সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কোন কোন বর্ণনা মতে তিনি মোট ১৪ টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৭ টি যুদ্ধ মুহাম্মদ (স) এর সাথী হিসাবে আর অবশিষ্ট ৭ টি মুহাম্মদ (স) এর প্রেরিত বিভিন্ন অভিযান । মুসতাদরিকের মতে তার অংশগ্রহণ করা যুদ্ধের সংখ্যা মোট ১৬ । সালামা ইবনুল আকওয়া বলেছেন, আমি রাসুলের (স) ৭ টি এবং যায়িদ ইবন হারিসার (রা) সাথে নয়টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি।[৩]
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় ইবনে যামিনকে হত্যা করা হয়েছে এই কথা শুনলে মুসলমানরা মুশরিকদের বন্দী করা শুরু করলে তিনিও চারজন মুশরিক বন্দী করেন ।
খাইবার যুদ্ধে তিনি চরম বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এই যুদ্ধে তার ভাই আমর ইবনুল আকওয়া মৃত্যুবরণ করেন।[৪]
খাইবারের পর তিনি সাকীফ ও হাওয়াযিনের যুদ্ধে যোগদান করেন ।সাকীফ ও হাওয়াযিনের যুদ্ধের সময় তিনি একজন গুপ্তচরকে হত্যা করে প্রিয় নবীজীর (স) প্রশংসা পান ও সেই ব্যক্তির মালামাল লাভ করেন ।
হিজরী ৭ম সনে মুহাম্মাদ আবু বকরের নেতৃত্বে বনী কিলাবের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী পাঠালেন। সেই বাহিনীতে সালামাও ছিলেন। তিনি এই অভিযানে একাই সাতজনকে নিহত করেন।
জী কারওয়ার ঘটনা
সম্পাদনামুহাম্মদ(সঃ) এর কিছু উট ‘জী-কারওয়া’ চারণক্ষেত্রে চরতো। একদিন বনু গাতফান মতান্তরে বনু ফাযার গোত্রের লোকেরা হামলা চালিয়ে রাখালকে হত্যা করে উটগুলি লুট করে নিয়ে যায়। সালামা ইবনুল আকওয়া ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন। তিনি খবর পেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সতর্ক করতে চিৎকার করে মদিনাবাসীদের ডাকতে থাকেন । এবং সাথে সাথে তিনি একাই শত্রু বাহিনীকে ধাওয়া করতে থাকেন। তিনি একজন দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন, তার তীরের আক্রমণে শত্রু বাহিনী উট ফেলে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে মদিনা থেকে মুহাম্মদ (সঃ) তার সাহাবাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।[৫][৬][৭]
মুহাম্মাদ(সঃ) এর মৃত্যুর পর থেকে উসমানের মৃত্যু পর্যন্ত মদীনায় ছিলেন। উসমানের মৃত্যুর পর তিনি বুঝতে পারলেন মুসলিম সাম্রাজ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি হয়েছে, তাই তিনি নিজের সমস্ত মালামাল নিয়ে রাবজা চলে যান এবং এখানেই তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন ।
হাদিস বর্ণনা
সম্পাদনাতিনি মুহাম্মদ(সঃ) এর সাথে বিভিন্ন সফর করেছেন সেই সুবাদে তিনি মুহাম্মদ(সঃ), আবু বকর, উমর ইবনে খাত্তাব, উসমান ইবনে আফনান, তালহা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ।
তার বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ৭৭ টি। এরমধ্যে ৫টি বুখারী ও ৯টি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন এবং ১৬ টি হাদিস উভয়ই বর্ণনা করেছেন।[৮]
আর তার নিকট থেকে যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন,
- ইয়াস ইবনে সালামা,
- ইয়াযীদ ইবনে উবাইদ,
- আবদুর রহমান ইবনে আবদিল্লাহ,
- মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াহ প্রমূখ উল্লেখযোগ্য ।
গুণাবলী
সম্পাদনাতিনি মদিনার একজন উল্লেখযোগ্য ফকিহ ছিলেন[হায়াতুস সাহাবা-৩/২৫৪-২৫৫]। তিনি সুবিশাল দেহের অধিকারী ছিলেন।[৯] দৌড়,[৩] তীর চালানো,[৬] তিনি সমরবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি সাদকা নেওয়া ও মিথ্যা বলা[১০] অপছন্দ করতেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাসালামা মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে রাবজা ছেড়ে মদিনায় যান, সেখানে দুই দিন কাটানোর পর তৃতীয় দিন ৬৪ হিজরিতে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এবং মদিনাতেই তাকে সমাধি দেওয়া হয়।[১১]
তার মৃত্যু সন মত পার্থক্য থাকলে সঠিক মত অনুযায়ী তিনি হিজরী ৭৪ সনে মৃত্যু বরণ করেন। অন্য একটি মতে ৬৪ হিজরী। ওয়াকিদীর মতে তিনি ৮০ বছর জীবিত ছিলেন। ইবন হাজার ও বালাযুরী বলেন,তিনি মুআবিয়ার খিলাফতকালের শেষ দিকে ইনতিকাল করেন।[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ [আল ইসতিয়াব]।
- ↑ (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড)।
- ↑ ক খ [রিজালুন হাওলার রাসূল-৫৫৫]।
- ↑ [রিজালুন হাওলার রাসূলঃ ৫৫৫-৫৫৬]।
- ↑ [বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাবু গাযওয়াতু জী কারওয়াহ]।
- ↑ ক খ সীরাতু ইবন হিশাম-২/২৮১-৮২।
- ↑ [হায়াতুস সাহাবা ১/৫৫৯-৬১]।
- ↑ [তাহজীবুল কামাল-১৪৮]।
- ↑ [হায়াতুস সাহাবা-২/৪৯৮-৯৯]।
- ↑ [আল ইসতিয়াব, হায়াতুস সাহাবা-১/২৪৯]।
- ↑ [রিজালুন হাওলার রাসূল-৫৫৬-৫৭]।
- ↑ [আল ইসাবা-২/৬৭]।