সামসুল হক

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

শহীদ সামসুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[] তার খেতাবের সনদ নম্বর ২৪৯।[]

সামসুল হক
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

সামসুল হকের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বাইদর ইউনিয়নের হাতুড়াবাড়ী গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সামসুল হক। তার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক এবং মায়ের নাম চন্দ্র বানু। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

ইপিআরে চাকরি করতেন সামসুল হক। কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টর এলাকায়। লতুয়ামুড়া-চন্দ্রপুর যুদ্ধে তিনি শহীদ হন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা রেলস্টেশনের পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে চন্দ্রপুর। ১৮ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক আইনউদ্দিনকে (বীর প্রতীক) বলেন, তারা যৌথভাবে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়ায় আক্রমণ করতে চান। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। কিন্তু মিত্রবাহিনীর এই আক্রমণের পরিকল্পনা মুক্তিবাহিনীর গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধিনায়কের মনঃপূত ছিল না। কারণ, চন্দ্রপুর গ্রামের সঙ্গেই লতুয়ামুড়া পাহাড়। পাহাড়ে আছে পাকিস্তানি সেনাদের সুরক্ষিত অবস্থান। চন্দ্রপুরে আক্রমণ করলে পাকিস্তানি সেনারা সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করতে পারবে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার তার এ যুক্তি মানতে রাজি ছিলেন না। এই অবস্থায় আইনউদ্দিন তাকে অনুরোধ করেন, মুক্তিযোদ্ধা যতজন যাবেন, ততজন মিত্রবাহিনীর সেনাও আক্রমণে যাবেন। ব্রিগেডিয়ার এই অনুরোধ মেনে নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ নভেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলে ছিলেন সামসুল হক। চন্দ্রপুরে সেদিন ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর একজন মেজর, তিনজন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজসহ ২২-২৩ জন শহীদ হন। আহত হন ৩৫ জন। সারা রাত ধরে যুদ্ধে চলে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পিছু হটে যায়। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী চন্দ্রপুর দখল করে। কিন্তু বেশিক্ষণ এই অবস্থান তাদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনারা আবার প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়া দখল করে নেয়। ২৩ নভেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ উদ্ধারের জন্য চন্দ্রপুরে যান। কিন্তু তাদের কয়েকজন পাকিস্তানিদের আক্রমণে শহীদ হন। ওই দলের সদস্যরা মাত্র আটজনের লাশ উদ্ধারে সক্ষম হন। পাকিস্তানি সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে। চন্দ্রপুরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন। এ যুদ্ধের পর তাদের মনোবলে বড় রকমের চিড় ধরে। কারণ, এত মুক্তিযোদ্ধা একসঙ্গে ২ নম্বর সেক্টরের কোনো রণাঙ্গনে শহীদ হননি। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৮-০৯-২০১১"। ২০১৮-১১-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৬ 
  2. ডেস্ক, প্রথম আলো। "সামসুল হক, বীর প্রতীক"চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৯ 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা

সম্পাদনা