সহিফা বানু
হাজী সহিফা বিবি বা হাজী বিবি (১৮৫৪-১৯১২) সিলেট জেলার প্রথম মহিলা কবি। তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। প্রাকযুগের মুসলিম নারী গীতিকার হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। [১]
সহিফা বানু | |
---|---|
জন্ম | ১৮৫৪ |
মৃত্যু | ১৯২৬ |
মাতৃশিক্ষায়তন | গভর্নিস পি. ব্যানার্জীর কাছে শিক্ষা লাভ করেন |
পেশা | কবি |
পরিচিতির কারণ | সিলেট জেলার প্রথম কবি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মোজাফফর চৌধুরী |
সন্তান | নিঃসন্তান |
পিতা-মাতা |
|
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাহাজী সহিফা বিবি বেগম রোকেয়ার জন্মের আনুমানিক প্রায় দুই যুগ আগে ১৮৫১ সালে সিলেট শহরের কুয়ারপারে অবস্থিত আধ্যাত্মিক মহিমান্ডিত এবং অতি প্রাচীনতম তার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন সিলেটের বিশ্বনাথ থানার রামপাশার জমিদার দেওয়ান আলী রাজা এবং মাতা বালাগঞ্জ থানার সুলতানপুর নিবাসী নূরজাহান বিবি। সহিফা বিবি ছিলেন হাছন রাজার বৈমাত্রেয় বোন। তার স্বামী হাজী মোজাফফর চৌধুরী। দাম্পত্য জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন। তার সময়ে কঠোর পর্দাপ্রথার কারণে মুসলিম মহিলারা বোরখা পরতেন। কিন্তু তিনি বোরখা পরতেন না, তবে ইসলামী পোশাক পরিধান করতেন যা ছিল শালীনতার ও আধুনিকতার পরিচায়ক। তিনি উচ্চ বিত্ত নারীদের মতো মাথায় টুপি পরতেন এবং নিজস্ব ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল করতেন।[২]
শিক্ষা ও কর্মজীবন
সম্পাদনাসহিফা বানু সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। কবি সহিফা বানুর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজের আগ্রহ ও চেষ্টায় তিনি বিভিন্ন ভাষা শিখেছিলেন। তিনি ঘরে বসে উর্দু, ফার্সী, হিন্দি, নাগরী, বাংলা ও ইংরেজি ভাষা চর্চা করতেন। গভর্নিস পি. ব্যানার্জীর কাছে পারিবারিক পরিবেশে সহিফা শিক্ষা লাভ করে। নারীদের শিক্ষার জন্য তার কবিতা ও গানে নারীদের জীবনের অনেক অবহেলিত ও সামাজিক চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি একজন বিচক্ষণ মহিলা ছিলেন। তাই তার পরামর্শ নেওয়ার জন্য সেই সময়কার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাকে প্রায়ই আমন্ত্রণ জানাতেন এবং সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিষয় নিয়ে তার সাথে পরামর্শ করতেন।
সঙ্গীত ও গ্রন্থ রচনা
সম্পাদনাসহিফা বিবির ৩ খানা গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায় -
- সহিফা সঙ্গীত,
- ইয়াদ গায়ে,
- সইফা ও ছাহেবানের জারি।
ছহিফা সঙ্গীত ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট থেকে আব্দুল জব্বার কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এটি একটি সঙ্গীত গ্রন্থ। এতে ৪৮টি গান স্থান পেয়েছে। তাঁর গ্রন্থে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মরমী কবিদের কোন নির্দিষ্ট ধর্ম নেই। সহিফা বিবির কাব্যে তা’ লক্ষণীয়। এ গ্রন্থের প্রথমে তিনি সরস্বতী বন্দনা করেছেন। পরবর্তী সঙ্গীতটি আবার কাওয়ালী। তাঁর এই গ্রন্থে সুফীতত্ত্ব ও বৈষ্ণব পদাবলীর প্রভাবও লক্ষণীয়। তিনি উর্দু, হিন্দী ও বাংলা ভাষায় সমান পারদর্শী ছিলেন। একমাত্র সহিফা সঙ্গীত বাদে তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়না। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত এবং নারীদের শিক্ষার জন্য তাঁর কবিতা ও গানে নারীদের জীবনের অনেক অবহেলিত ও সামাজিক চিত্র ফুটে উঠেছে। যে কালে মেয়েরা কাব্য রচনার কথা দুরে থাক তাদের লেখপড়ার সুযোগ ছিলনা, সে সময়ে নারী জাগরণে সহিফা বিবির এমন সাহিত্য রচনা কৃতিত্বের দাবী রাখে। তাঁর কবিতা ও বহু গানে সে কালের সমাজের সামাজিক বৈষম্য ও নানা অসংগতির চিত্র ফুটে উঠেছে। সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যঙ্গ করে লিখেছেন - ধনে জনে ভাল যারা মিথ্যা হইলে জয়ী তারা, দু:খিত এতিম বিধবারা। চোরা যারা ভাল তারা চোরা ধনে বুক তার পুরা। টাকায় বলে যা’ না ধরা কি বুঝিবে বেচারীরা। সহিফা ভাবিয়া বলে সারা তেলেঙ্গী বিষম চোরা। নারী জাগরণে সহিফা বিবির রচনার সুর মাধুরী সহজভাবে মনকে ছুঁয়ে যায়। [১]
উপাধি
সম্পাদনাসাতবার হজ্ব পালন করেছেন তাই সবাই তাকে ‘হাজী বিবি’ বলে সম্বোধন করতো এবং এ কারণেই তার বাড়ির নামকরণ হয় ‘হাজী বিবি হাউস।’ সিলেট অঞ্চলে সহিফা বানুই প্রথম মুসলিম মহিলা কবি। [৩]
মৃত্যু
সম্পাদনাসহিফা বিবি ১৯২৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[১]
আরো পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "প্রাক যুগের মুসলিম মহিলা গীতিকার"। দৈনিক সংগ্রাম। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ১৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।
- ↑ "মহিলা সমাজ সহিফা বানু ও প্রাসঙ্গিক কথকতা"। সিলেটর ঢাক। ২০ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলা সাহিত্যে মুসলমান নারী"। দৈনিক সংগ্রাম। ১৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৯।