সহজাত প্রবৃত্তি
বিশ্বকোষীয় পর্যায়ে যেতে এই নিবন্ধে আরো বেশি অন্য নিবন্ধের সাথে সংযোগ করা প্রয়োজন। |
সহজাত প্রবৃত্তি কী?
সাধারণ অর্থে দেহের দাবীকে প্রবৃত্তি এবং আত্মাকে বিবেক বলা হয়ে থাকে । মানুষ যখনি বিবেকের বিপরীতে কাজ করে তখন সে তাকে দংশন করে থাকে । সহজাত প্রবৃত্তি একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত সবার মধ্যেই বিদ্যমান থাকে, শুধু ব্যক্তিবিশেষ বা প্রাণীবিশেষের নয় এবং এদের সহজাত প্রবৃত্তি বলা যায় না । ধূমপান, চা-পান মাদকদ্রব্য বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি এগুলো জন্মগত নয় বা বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নয় ।এসব প্রবৃত্তি নিজের চেষ্টায় অর্জিত হয়। কিন্তু পাখির বাসা তৈরি করার প্রবৃত্তি, শিশুর স্তন্য পানের প্রবৃত্তি-এগুলো হলো সহজাত প্রবৃত্তি । প্রাণী এগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে । মানুষের মধ্যে এমন কতকগুলো সহজাত প্রবণতা আছে যেগুলো মানুষের কি ব্যক্তিগত, কি সমষ্টিগত সব রকম চিন্তা এবং কার্যের প্রয়োজনীয়তার উৎস । মাঝে মাঝে মনুষ্যত্বের প্রাণীর আচরণের মধ্যে এমন অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় যে তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না । কোনো কোনো ক্ষেত্রে বানর তার মৃত সন্তানের মৃতদেহটি বহন করে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ায় ।
সহজাত প্রবৃত্তি হল কোন জীবের আচরণের একটি অংশ। স্নায়ুবিক প্রক্রিয়াসম্পন্ন প্রাণীরা সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মায়। এটি জন্মগতভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত, অর্জিত নয়। তবে, পরিভাষাটির দ্বারা সংবেদী অঙ্গের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বোঝায় না, স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুবিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।এটি হচ্ছে কোন প্রজাতির সকল সদস্যদের এমন কোন স্বভাব যা ওই প্রজাতির সকল সদস্য-ই দেখায়(common to all members of a given species)। আর এই আচরণ দেখানোর জন্য ওই প্রজাতির সদস্যদের তা শিখতে হয় না(unlearned)। যেমন: আমরা যদি যেকোন একটি প্রজাতির কথা চিন্তা করি, যেমন: হতে পারে ছাগল বা ভেড়া। কোন ছাগল বা ভেড়া যখন বাচ্চা জন্ম দেয়, তখন ওই সদ্যোজাত বাচ্চাটি তো জানার কথা নয়, যে, তার খাবার কোথায় আছে, কিন্তু সে তা জানে। সে তার মা এর স্তন্য চেনে এবং সেখান থেকে গিয়ে স্তন্যপান করে। এটাই হচ্ছে প্রবৃত্তি। কারণ প্রজাতির সকল সদস্য-ই এই আচরণ দেখায়। এভাবে প্রত্যেক প্রাণী প্রজাতির আলাদা আলাদা প্রবৃত্তি আছে। যেমন কচ্ছপ এর ডিম ফোটার পর কচ্ছপ ছানারা পাহাড়ের দিকে না গিয়ে সাগরের দিকে যায়। দেখা গেছে, তারা সমুদ্রের আওয়াজ সহজাতভাবেই চিনতে পারে এবং সে দিকেই যায়। এটা তারা প্রবৃত্তিগতভাবেই করে থাকে। কচ্ছপছানারা এটাও জানে কোথায় তাদের খাবার আছে, কীভাবে সাঁতার কাটতে হবে তাও তারা জানে। অর্থাৎ, কোন প্রাণী প্রবৃত্তিগতভাবে যা জানে, তা তাকে শিখিয়ে দিতে হয় না, সে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে-ই জানে। আমরা শিকারি প্রাণীদের উদাহরণ দিতে পারি। তারা প্রবৃত্তিগতভাবেই জানে, কীভাবে শিকার করতে হয়।
মানুষের বর্তমান সময়েরন প্রবৃত্তি
বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, মানুষ বিভিন্নভাবে ও নানান পদ্ধতিতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে । কারো আছে সম্পদের মোহ, কারো আছে অভিজাত পোশাক-আশাকের লোভ, কারও আছে বাড়ি-গাড়ি ও ঐশ্বর্যের সীমাহীন আকাঙ্খা । কারও আছে ক্ষমতার লোভ । কারো আছে খেল-তামাশা ও গান-বাজনার অধীর আগ্রহ ইত্যাদি । প্রবৃত্তি মানুষের এ কামনা-বাসনাকে অতি সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে পেশ করে । তেমনিভাবে ভোগবাদ, বিলাসিতা, অহমিকা, অহংকার, ক্ষমতার লোভ, দাপট, অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি হলো প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ও বৈশিষ্ট্য । আর এগুলো হলো প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উপকরণ । যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি প্রবল হয়, তারা মন্দ কাজের দিকে বেশি আকর্ষিত হয় । আর যত প্রকার আকর্ষণীয় খারাপ কাজ আছে, সবগুলোতেই তারা লিপ্ত হয় । কারণ এতে রয়েছে আনন্দ । বিবেক সেখানে পরাজিত । যাদের মধ্যে বিবেক প্রবল, তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে, আর ভালো কাজ করে ।