সরোজ দত্ত

বাঙালি বামপন্থী বুদ্ধিজীবী

সরোজ দত্ত (জন্ম: ১৩ ই মার্চ ১৯১৪ — মৃত্যু: ৫ আগস্ট ১৯৭১) হচ্ছেন ভারতীয় বাঙালি বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী। তার পুরো নাম সরোজকুমার দত্ত। সরোজকুমার দত্ত ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক এবং পলিটব্যুরো সদস্য।

সরোজ দত্ত
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক, সিপিআইএম‌এল
কাজের মেয়াদ
১৯৬৯-১৯৭১
উত্তরসূরীবিনোদ মিশ্র
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৩ই মার্চ ১৯১৪
যশোহর, ব্রিটিশ ভারতবর্ষ
মৃত্যু৫ই আগস্ট ১৯৭১ (৫৭ বছর)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
রাজনৈতিক দলভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)
দাম্পত্য সঙ্গীবেলা দত্ত
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা
জীবিকারাজনীতিবিদ, কবি, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী

শিক্ষা

সম্পাদনা

সরোজ দত্তের পিতার নাম হৃদয়কৃষ্ণ দত্ত। সরোজ দত্ত ১৯৩০ সালে বাংলাদেশেনড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন প্রথম বিভাগে ও ১৯৩৩ এ আই এস সি পাশ করেন সেখান থেকেই। ১৯৩৬ সালে কলকাতাবিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি এ পাস করেন। কলেজে পড়াকালীন ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক কার্যকলাপের দরুন কিছুকাল রাজবন্দী জীবন কাটাতে হয়। ১৯৩৯ সালে সরোজকুমার দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ পাশ করেন।

সাংবাদিকতা ও সাহিত্য

সম্পাদনা

১৯৩৮ সাল থেকে অতি আধুনিক বাংলা কবিতা সম্পর্কিত নিবন্ধগুলি বিতর্ক ও সাহিত্য জগতে আলোড়ন ফেলে। অগ্রনী, পরিচয়, স্বাধীনতা, অরণি ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় তার অজস্র লেখা বাংলা প্রগতিশীল সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। ওই বছরই কলকাতায় আশুতোষ হলে নিখিল ভারত প্রগতি সংঘের দ্বিতীয় সম্মেলনে পঠিত বুদ্ধদেব বসুর বাংলা সাহিত্য সংক্রান্ত প্রবন্ধের জবাবে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সরোজ দত্ত 'ছিন্ন করো ছদ্মবেশ' লিখে বাংলা সাহিত্যে মার্ক্সবাদী ধারার ভিন্ন মাত্রার সূচনা করেন। সরোজ দত্ত - সমর সেন বিতর্ক বাংলা প্রগতিশীল সাহিত্য বিতর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়। এর পরে যুগান্তর পত্রিকায় সহ সম্পাদকের কাজ করেছেন এবং পরে অমৃতবাজার পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪৬ এর রক্তক্ষয়ী দাংগার সময় প্রেসকর্মীরা না আসতে পারলেও সরোজ দত্ত প্রায় একার প্রচেষ্টায় পত্রিকা প্রকাশের কাজ করে গেছেন। এসময় বিখ্যাত সাংবাদিক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের সাথে আলাপ হয় ও তার সম্পাদিত অরণি সাপ্তাহিকের সংগে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয় তার অনূদিত রোমা রোলার আত্মজীবনী 'শিল্পীর নবজন্ম'। ১৯৪৮ সালে মতাদর্শগত কারণে প্রেস ধর্মঘটে যোগদানের জন্যে অমৃতবাজার পত্রিকার চাকরি যায়। বহু কবিতা, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি দেশী বিদেশী সাহিত্যিকদের অসংখ্য রচনা অনুবাদ করেছিলেন। গোলাম কুদ্দুসের পরিচয় পত্রিকার সহ সম্পাদক হয়েছিলেন। মাক্সিম গোর্কির 'নানা লেখা', লেনিন পত্নী ক্রুপস্কায়ার On memory of lenin, পি পাভলেংকোর 'সোনার ফসল', ল্যেভ তল্‌স্তোয়ের 'রেজারেকশন', ইভান তুর্গেনেভের 'স্প্রিং টরেন্ট, প্যাট্রিস লুমুম্বা, পারভেজ শাহেদী, নিকোলাস ভ্যাপসারভ'র কবিতা অনুবাদ করেছেন।[][]

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

ছাত্রাবস্থায় থেকে বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল ও কলেজ জীবন থেকেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ হয়। ১৯৪২ সালে অবিভক্ত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এবং পার্টির পত্রিকা 'জনযুদ্ধ' তে লিখতে শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)তে যোগ দেন। মুখপত্র দেশহিতৈষীতে তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। নয়া সংশোধনবাদের তীব্র সমালোচনা ও নকশালবাড়ী কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন মূলক লেখার ফলে পার্টি অফিসেই গুন্ডা কর্তৃক প্রহৃত হন। পার্টি পূনরায় বিভক্ত হলে নকশালপন্থী ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী - লেনিনবাদী)তে যোগ দেন।

নকশালবাড়ী আন্দোলনে

সম্পাদনা

নকশালবাড়ী আন্দোলনের প্রান পুরুষ চারু মজুমদারের সংগে নবগঠিত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন এবং মুখপত্র 'দেশব্রতী'তে পার্টি লাইনের সমর্থনে 'শশাংক' ছদ্মনামে নিয়মিত তার লেখা প্রকাশ হতে থাকে। শ্রেনীশত্রু খতম, সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের প্রতি সমর্থনকারী তার লেখা ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আলোকে নবজাগরনের মনীষীদের প্রতি মূল্যায়নকারী প্রবন্ধসমূহ নকশালপন্থী তরুন-তরুনীদের কাছে অতি জনপ্রিয় ছিল।

মৃত্যু

সম্পাদনা

১৯৬৮ সাল থেকে আত্মগোপন করেছিলেন সরোজ দত্ত। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট শেষ রাত্রে পুলিশ তাকে বন্ধু অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় এবং পুলিশের খাতায় তিনি আজও নিখোঁজ।[][] সন্দেহ করা হয় কলকাতা ময়দানে সাজানো এনকাউন্টারে পুলিশ তাকে হত্যা করে।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সরোজ দত্তের কবিতা সংগ্রহ। কলকাতা: শহীদ সরোজ দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি। ১৯৮৮। পৃষ্ঠা [ছ]। 
  2. "আমৃত্যু চললেন সেই দুঃসাহস নিয়ে"আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৪, ২০১৬ 
  3. Rao, Shamanth (২০১১-০৩-১০)। "The remains of Naxalbari"mint (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২০ 
  4. Ghosh, Suniti Kumar (১৯৯৩)। The Historic Turning-point: A Liberation Anthology (ইংরেজি ভাষায়)। S.K. Ghosh। পৃষ্ঠা ১৩৫। 
  5. প্রথম খন্ড (২০০২)। সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৬৫। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  6. "Countering the Maoists"www.dnaindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২০