সমলৈঙ্গিক বিবাহ

একই জৈবিক লিঙ্গ বা সামাজিক লিঙ্গের ব্যক্তিদের বিবাহ

সমলৈঙ্গিক বিবাহ বা সমকামি বিবাহ হচ্ছে একই লিঙ্গের দুইজন মানুষের মাঝে বিবাহ। এই বিবাহ সেক্যুলার সিভিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হতে পারে কিংবা ধর্মীয়ভাবেও হতে পারে।  বিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি না পেলেও সমকামি দম্পতিদের মাঝে বিবাহ করার হার বাড়তে শুরু করে। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডস আধুনিক যুগে সবার প্রথমে সমকামি বিবাহকে আইনত স্বীকৃতি প্রদান করে। ১১ জুলাই ২০১৭ (2017-07-11)-এর হিসাব অনুযায়ী, নিম্নোক্ত দেশগুলো (সমগ্র দেশব্যাপী অথবা নির্দিষ্ট কিছু অংশে) সমকামি বিবাহকে বৈধতা প্রদান করেছে: আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, কলোম্বিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড,  নরওয়ে, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন,সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং উরুগুয়ে। ২০১৭ এর মে'তে জারিকৃত সাংবিধানিক এক রুল অনুসারে, তাইওয়ানে খুব শীঘ্রই সমকামি বিবাহ বৈধতা পেতে যাচ্ছে। এছাড়াও জার্মানি ও মাল্টাতেও ২০১৭ এর শেষ নাগাদ এই আইন স্বীকৃতি পাওয়ার পথে। জরিপ অনুসারে আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে আইনগতভাবে সমকামিদের মধ্যে বিবাহ স্বীকৃতির প্রতি জনমত বাড়ছে। ২০১৭ সালে, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা সমলৈঙ্গিক বিবাহকে স্বীকৃতি প্রদান করে। সিভিল কোড মেনে চললে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান সর্বপ্রথম সমলৈঙ্গিক বিবাহকে বৈধতা প্রদান করতে যাচ্ছে। ইসরায়েল এবং আর্মেনিয়া অন্যদেশে সম্পন্ন হওয়া এই ধরনের বিবাহকে ক্ষেত্রে বিশেষে স্বীকৃতি দেয়।[][] সরাসরি জনতার ভোটে কিংবা সমঅধিকারের ভিত্তিতে বিবাহ আইনে কিছু পরিবর্তন এনে সমলৈঙ্গিক বিবাহকে বিভিন্ন দেশে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এই স্বীকৃতি প্রদান রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়াও ধর্মীয় ইস্যুজনিত কারণেও এখনো সমলৈঙ্গিক বিবাহকে কিংবা সমলৈঙ্গিক দম্পতির একসাথে থাকাকে স্বীকৃতি প্রদান করা নিয়ে বিতর্ক চলমান।[][][][তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জনমত জরিপ

সম্পাদনা

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে একাধিক গবেষণার কাজে বিভিন্ন জরিপের আয়োজন করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, দিন দিন সমলৈঙ্গিক বিবাহের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। সবধরনের বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি এবং রাজনৈতিক ধরনার উর্ধ্বে উঠে বিশেষ করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সমলৈঙ্গিক বিবাহের প্রতি সমর্থন লক্ষ করার মতো।[][][][][১০]

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাচীন

সম্পাদনা

রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম সমলৈঙ্গিক বিবাহের ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। l[১১] ঐতিহাসিক জন বসওয়েল সর্বপ্রথম এ ব্যাপারে আলোকপাত করেন। যদিও সেসময় মূলতঃ সমলৈঙ্গিক বিবাহ নিয়ে ব্যাপারে রসাত্মক রচনা রচিত হয়েছিল।[১২][১৩]

প্রথম বিবাহিত রোমান সম্রাট হিসেবে নিরোর নাম পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি দুইজন পুরুষের সাথেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। পিথাগোরাস নামে প্রথম একজন দাসের সাথে নিরো ববাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেক্ষেত্রে নিরো বৌয়ের ভূমিকা নিলেও পরবর্তীতে বর হিসেবে স্প্রাউসের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বলে জানা যায়। স্প্রাউস একজন অল্পবয়েসী যুবক ছিলেন নিরো যে উপপত্নীকে হত্যা করেছিলেন তা ধামাচাপা দিতেই এই বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ আড়ম্বরের সাথে পালন করেন।[১৪][১৫][১৬] স্প্রাউসকে জোড়পূর্বক সেই নারী উপপত্নীর স্থান নিতে হয় এবং নিরোর সাথে বিবাহিত সম্পর্ক আছে এরকম আচরণ করতে হয়। গ্রিস ও রোমে এই বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করা হয়।.[১৭]

রেনেসাঁ

সম্পাদনা

ষোলশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফ্রান্সের দার্শনিক মাইকেল দে মন্টেইন দুইটি সমকামি বিবাহের ব্যাপারে লিখেছিলেন। পূর্ব ফ্রান্সে দুই নারীর মাঝে এই বিবাহ সংঘটিত হয়। অপরটি দুই পুরুষের মাঝে রোম শহরে। এই বিবাহ উপলক্ষ্যে পোর্ট ল্যাটিনাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যদিও পরে পুলিশের দ্বারা অনুষ্ঠানটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুলিশ এগারো জন মানুষ বিয়ে পরবর্তী এই অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করে।[১৮][১৯]

বিশ্বজুড়ে সমলৈঙ্গিক বিবাহ

সম্পাদনা
 
  বিবাহ অনুমোদিত কিন্তু সংঘটিত হয় নি1
  সিভিল ইউনিয়ন
  রেজিস্টার ব্যতীত একই সাথে বসবাস
  সমলৈঙ্গিক আচরণ অনুমোদিত নয়
গোলাকার চিহ্নিত এলাকা দেখাচ্ছে হয় স্থানীয় বিচারক কর্তৃক সমলৈঙ্গিক বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে অথবা স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।অন্যসমস্ত অঞ্চলে ঘটনার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন রায় প্রদান করা হয়েছে
1এই চিহ্নিত এলাকায় নির্দেশ করে,বর্তমানে এসকল এলাকার বিচারব্যবস্থায় অন্যান্য ধরনের অংশীদারত্ব থাকতে পারে.

সমলৈঙ্গিক বিবাহকে স্বীকৃতি প্রদান করা দেশের মাঝে রয়েছে আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, কলোম্বিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড,  নরওয়ে, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন,সুইডেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং উরুগুয়ে। 

তবে একাধিক রাষ্ট্রে সমলৈঙ্গিক বিবাহ অনেকটাই জটিল ব্যাপার। অনেক রাষ্ট্রেই সমলৈঙ্গিক বিবাহ দন্ডনীয় অপরাধ। তবে আইনের উপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ দন্ড মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত হতে পারে।


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Gross, Aeyal (৩০ জুন ২০১৫)। "Why Gay Marriage Isn't Coming to Israel Any Time Soon"Haaretz Online। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  2. "Same-sex marriages registered abroad are valid in Armenia"Panarmenian.Net। ২০১৭-০৭-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭ 
  3. Taylor, Pamela K. (৩১ জুলাই ২০০৯)। "Marriage: Both Civil and Religious"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১৪  একের অধিক |কর্ম= এবং |সংবাদপত্র= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)একের অধিক |work= এবং |newspaper= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. Smith, Susan K. (৩০ জুলাই ২০০৯)। "Marriage a Civil Right, not Sacred Rite"The Washington Post। ৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২  একের অধিক |কর্ম= এবং |সংবাদপত্র= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)একের অধিক |work= এবং |newspaper= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. "Decision in Perry v. Schwarzenegger" (পিডিএফ)। ১৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১০ 
  6. Newport, Frank। "For First Time, Majority of Americans Favor Legal Gay Marriage"Gallup। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  7. "Public Opinion: Nationally"। australianmarriageequality.com। ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  8. "Gay Life in Estonia"। globalgayz.com। ১৬ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  9. Jowit, Juliette (১২ জুন ২০১২)। "Gay marriage gets ministerial approval"The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২  একের অধিক |কর্ম= এবং |সংবাদপত্র= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)একের অধিক |work= এবং |newspaper= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  10. "Most Irish people support gay marriage, poll says"PinkNews। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২  একের অধিক |কর্ম= এবং |সংবাদপত্র= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)একের অধিক |work= এবং |newspaper= উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
  11. Shaw criticises Boswell's methodology and conclusions as disingenuous   |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)|title= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  12. Boswell, John (১৯৯৫)। Same-sex unions in premodern Europe। New York: Vintage Books। পৃষ্ঠা 80–85। আইএসবিএন 0-679-75164-5 
  13. Frier, Bruce। "Roman Same-Sex Weddings from the Legal Perspective"University of Michigan। ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  14. Williams, CA., Roman Homosexuality: Second Edition, Oxford University Press, 2009, p. 284.
  15. Nero missed her so greatly that, on learning of a woman who resembled her, he sent for her and kept her; but later he caused a boy of the freedmen, whom he used to call Sporus, ... "he formally "married" Sporus, and assigned the boy a regular dowry according to contract;" q.v., Suetonius Nero 28; Dio Cassius Epitome 62.28
  16. "Bill Thayer's Web Site"Penelope.uchicago.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭ 
  17. "Cassius Dio — Epitome of Book 62"Penelope.uchicago.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭ 
  18. A same-sex marriage ceremony in... Renaissance Rome?, thelocal.it; accessed July 5, 2017.
  19. There were secret same-sex weddings in the 16th century, pinknews.co.uk, January 13, 2017.

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Finland Dec 2014" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Finland introdebate 2014" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Finland parl procedure" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।