সমতল দর্পণ
সমতল দর্পণ এমন একটি দর্পণ, যার সমতল প্রতিফলক পৃষ্ঠ বিদ্যমান।[১][২] সমতল দর্পণের ক্ষেত্রে আপতন কোণ সর্বদা প্রতিফলন কোণের সমান। অভিলম্বের সাথে আপতন রশ্মি যে কোণ উৎপন্ন করে, তাকে আপতন কোণ বলে। আবার, প্রতিফলিত রশ্মি অভিলম্বের সাথে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাকে প্রতিফলন কোণ বলে।
সমতল দর্পণ সর্বদা আয়নার সম্মুখে বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করে। প্রকৃতপক্ষে আয়না যে সমতলে অবস্থিত, তার পেছনেই প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। যদি কোনো বস্তুর নির্দিষ্ট অংশ থেকে এর প্রতিবিম্বের অনুরূপ অংশ পর্যন্ত অঙ্কিত সরলরেখা সমতল দর্পণের পৃষ্ঠদেশ দ্বারা সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয় এবং এর সাথে এক সমকোণ উৎপন্ন করে। সমতল দর্পণের মাধ্যমে গঠিত প্রতিবিম্ব সর্বদাই অসদ বা অবাস্তব (অর্থাৎ আলোকরশ্মি প্রকৃতপক্ষে বিম্ব থেকে উৎপত্তি হয় না), সোজা ও লক্ষ্যবস্তুর সমান আকার ও আকৃতিবিশিষ্ট। বস্তুত আলোকরশ্মি যে বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে বলে মনে হয় (প্রকৃতপক্ষে মিলিত হয় না), সেই অবস্থানে গঠিত লক্ষ্যবস্তুর প্রতিলিপি। তবে সমতল দর্পণে বিম্বের দিক পরিবর্তিত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- একজন মানুষ যদি আয়নার সামনে তার ডান হাত প্রসারিত করে, মনে হবে - সে যেন তার বাম হাত প্রসারিত করে রয়েছে।
সমতল দর্পণে বাস্তবে বিদ্যমান বস্তুগুলো সর্বদা অসদ, সোজা ও সম-আকৃতির বিম্ব গঠন করে। তবে কাল্পনিক বস্তু এখানে সদ বিম্ব গঠন করতে পারে। সমতল দর্পণের ফোকাস দূরত্ব অসীম। [৩]
প্রস্তুতি
সম্পাদনারূপা অথবা অ্যালুমিনিয়ামের মত উচ্চ প্রতিফলক পৃষ্ঠ ব্যবহার করে সমতল দর্পণ তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সিলভারিং। [৪]সিলভারিং প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর দর্পণের পেছনে সীসার অক্সাইডের প্রলেপ দেওয়া হয়। ধাতুক্ষয় কিংবা জারণ প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ ক্ষয় সাধিত না হলে আপতিত অধিকাংশ আলোই এ দর্পণ প্রতিফলিত করতে পারে। আজকাল যেসব আয়না তৈরি হয়, সেগুলোতে পাতলা ফ্ল্যাট বা সমতল কাচ ব্যবহৃত হয়। এর ফলে দর্পণের পৃষ্ঠতল শক্তিশালী হয় ও ধাতুক্ষয় রোধ হয়। ইতোপূর্বে সমতল তামা, পিতল ও কৃষ্ণবর্ণের আগ্নেয় শিলা (অবসিডিয়ান) ব্যবহৃত হত। আবার, তরল থেকে তৈরি সমতল আয়নার-ও অস্তিত্ব রয়েছে। গ্যালিয়াম ও পারদ তরল অবস্থায় উচ্চ-প্রতিফলক পৃষ্ঠ হিসেবে কাজ করে বলে এগুলো দিয়েও সমতল আয়না তৈরি হয়।
বক্র আয়নার সাথে সম্পর্ক
সম্পাদনাগাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সমতল দর্পণকে উত্তল বা অবতল গোলীয় বক্র আয়নার ব্যাসার্ধরূপে কল্পনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সমতল দর্পণ গোলীয় আয়নার লিমিট বা সীমা ধরে নেওয়া হয়। এ যুক্তির আলোকেই বলা হয়, সমতল দর্পণের ফোকাস দূরত্ব অসীম। [৩]
ব্যবহার
সম্পাদনাসমতল দর্পণ যে শুধু ব্যক্তির নিজেকে দেখার কাজেই ব্যবহৃত হয়, এমনটা কিন্তু নয়। বরঞ্চ পেরিস্কোপ তৈরি, তরঙ্গ-সংকেত প্রেরণ, ক্যালেইডোস্কোপ যন্ত্র তৈরিতেও এর ব্যবহার রয়েছে। সেক্সট্যান্ট, ওভারহেড প্রজেক্টর, এসএলআর ক্যামেরা, গাড়ির উইং আয়না, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও প্রতিফলক নম্বরপ্লেটেও এর বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। দুইটি সমতল আয়না একটি নির্দিষ্ট কোণে স্থাপন করে ক্যালেইডোস্কোপ তৈরি করা হয়। কোণ যত কম হবে, তত বেশি বিম্ব গঠিত হবে। আলোক বিমের ধর্মের পরীক্ষা-ও সমতল দর্পণের সাহায্যে করা হয়। সমতল দর্পণে আলোক বিম ফেলে আয়নাটিকে ঘুরালে বিমটিও দিক পরিবর্তন করবে (অর্থাৎ ঘুরবে)। যত ডিগ্রি কোণে সমতল আয়নার দিক পরিবর্তন করা হয়, ঠিক তার দ্বিগুণ কোণে আলোক বিম দিক পরিবর্তন করবে।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Moulton, Glen E. (১ এপ্রিল ২০১৩)। "CliffsNotes Praxis II: Middle School Science (0439)"। Houghton Mifflin Harcourt – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ Saha, Swapan K. (১৩ অক্টোবর ২০২০)। "Diffraction-Limited Imaging with Large and Moderate Telescopes"। World Scientific – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ Katz, Debora M. (১ জানুয়ারি ২০১৬)। "Physics for Scientists and Engineers: Foundations and Connections, Volume 2"। Cengage Learning – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Science and Technology Encyclopedia"। University of Chicago Press। ১ সেপ্টেম্বর ২০০০ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "schoolphysics ::Welcome::"। www.schoolphysics.co.uk।