সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুর
সভিগনন ব্লাঙ্ক, ফ্রান্সের বোরদ্যু থেকে উৎপন্ন এক ধরনের সবুজ ত্বকযুক্ত আঙুর। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের আদি আঙুর হিসেবে উৎপন্ন হওয়ার কারণে এই ধরনের আঙুরের নাম দুটি ফরাসী শব্দ থেকে এসেছে - সোভ্যাজ (বন্য) এবং ব্লাঙ্ক (সাদা)।[১] এটি সম্ভবত সেঁভাগাঁর উত্তরসূরী। সভিগনন ব্লাঙ্ক বিশ্বের নানা সুরা প্রস্তুতকারী অঞ্চলে মেলে, ইহা থেকে খাস্তা, শুষ্ক এবং সতেজকারী সাদা এক বিশেষ জাতীয় ভ্যারাইটাল সুরা মেলে। এই আঙুর সোতেঁরন ও বারসাকের ডেজার্ট সুরারও একটি উপকরণ। সভিগনন ব্লাঙ্ক ফ্রান্স, চিলি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যালিফোর্ণিয়া ও ওয়াশিংটনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চাষ করা হয়। কিছু নতুন বিশ্ব সভিগনন ব্লাঙ্ককে ফিউম ব্লাঙ্কও বলা হয়, বিশেষ করে ক্যালিফোর্ণিয়ায়।
সভিগনন ব্লাঙ্ক | |
---|---|
আঙ্গুর (ভিটিজ) | |
বেরি ত্বকের রঙ | সাদা |
প্রজাতি | ভিট্টিস ভিনফেরা |
এছাড়াও ডাকা হয় | সভিগনন জন, ব্লাঙ্ক ফিউম (ফ্রান্স), মুস্কাট সিলভেনার(জার্মানি ও অস্ট্রিয়া), ফিউম ব্লাঙ্ক, আরো সত্তরটি এবং অন্যান্য সমার্থক |
উৎস | ফ্রান্স |
উল্লেখযোগ্য অঞ্চল | দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি, নিউজিল্যাণ্ড, ক্যালিফোর্ণিয়া, লোয়ার ভ্যালি, বোরদ্যু, ইউক্রেন |
উল্লেখযোগ্য ওয়াইন | সটার্নস, সোঁস্যা |
ঝুঁকি | গুঁড়ো গুঁড়ো ছাতাধরা, অয়ডিয়াম, কালো পচা দাগ, এবং বটরাইটিস সিনেরিয়া |
জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে, এর স্বাদ অতিরিক্ত তৃণবৎ অথবা ক্রান্তীয় মিষ্টি প্রকৃতির হয়। শীতল আবহাওয়ায় এই আঙুর থেকে লক্ষণীয় রকমের অম্লাত্মক সুরা প্রস্তুত হয় এবং এতে ঘাস, ক্যাপসিকাম ও বিছুটির ন্যায় সবুজ বর্ণ পরিলক্ষিত হয়, এছাড়া এই জাতীয় সুরায় কিছু ক্রান্তীয় ফল (যেমন প্যাশন ফ্রুট) ও ফুলের (যেমন এল্ডারফ্লাওয়ার) গন্ধ থাকে। উষ্ণ আবহাওয়ায়, এতে ক্রান্তীয় ফলের গন্ধ আরো বেশি পরিমাণে তৈরী হতে পারে, তবে অতি-পক্কতার কারণে এর গন্ধ অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় এবং এর ফলে এতে সামান্য আঙুর ও পিচ জাতীয় ফলের গন্ধ অবশিষ্ট থাকে।[২]
লোয়ার ভ্যালি ও নিউজিল্যাণ্ড থেকে প্রাপ্ত সভিগনন ব্লাঙ্কের বর্ণনার সুবিধার জন্য সুরা বিশেষজ্ঞরা একে বলে থাকেন - "খাস্তা, সুরুচিপূর্ণ ও তাজা"।[৩][৪] এই জাতীয় সুরা সামান্য ঠাণ্ডা করে মাছ, চীজ, বিশেষ করে 'শভ্যার' (chèvre) -এর সাথে খেতে বেশ ভাল লাগে। খুব সামান্য কিছু সুরার মধ্যে সভিগনন ব্লাঙ্ক হল একটি যা সুশি নামক জাপানী খাবারের সাথে খাওয়া যায়।[৫]
রিয়েলজিং-এর মতই, সভিগনন ব্লাঙ্কও নিউজিল্যাণ্ডে প্রস্তুত, ধাতব ঢাকনাযুক্ত, পণ্যজাত আদি বিশুদ্ধ সুরাগুলির একটি। এই সুরা সাধারণত নবীন অবস্থায় পান করা হয়, কারণ অধিক পরিণতির ফলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়; সভিগনন ব্লাঙ্কের বিভিন্ন প্রজাতিগুলির বৈশিষ্ট্য হল, অতিরিক্ত পরিণতির ফলে এতে ডুমুর ও শতমূলীর ন্যায় উদ্ভিজ্জ গন্ধ এসে যায়। তবে পেসাক-লেওনেয়ান ও গ্রেভ্সের পাকা ওক থেকে প্রাপ্ত সুরা ছাড়াও শুষ্ক ও মিষ্টি সাদা বোরদ্যু এবং পৌল্লি-ফিউম ও সোঁস্যা থেকে প্রাপ্ত লোয়ার সুরা পরিণত হওয়ার সামর্থ্যযুক্ত (Ageing Ability) সুরার উদাহরণ।[২]
মে মাসের প্রথম শুক্রবার হল আন্তর্জাতিক সভিগনন ব্লাঙ্ক দিবস।
ইতিহাস
সম্পাদনাসভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুরের উৎপত্তিস্থল ধরা হয় পশ্চিম ফ্রান্সের লোয়ার ভ্যালি ও বোরদ্যু প্রদেশে। তবে এই দ্রাক্ষার উদ্ভব সত্যিই পশ্চিম ফ্রান্সে কিনা তা জানা যায়নি। বর্তমান গবেষণা থেকে জানা যায় এটি সভিগনন থেকে এসেছিল। এটা কারমেনেয়ার পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট। ১৮শ শতকের কোন এক সময় জনিতৃ ক্যাবারনেট ফ্রাঙ্কের সাথে বোরদ্যুর ক্যাবারনেট সভিগনন দ্রাক্ষা যুক্ত করা হয়। ১৯শ শতকে, বোরদ্যুতে সভিগনন ব্লাঙ্কের চাষের সঙ্গে একই সাথে সভিগনন ভার্ট (চিলিতে যা সভিগননাসে / Sauvignonasse নামে পরিচিত) ও সভিগনন ব্লাঙ্কের গোলাপী পরিব্যক্তি সভিগনন গ্রিস পরিকীর্ণ করা হয়। ফাইলক্সেরা মহামারীর আগে, প্লেগের জীবাণু ১৯শ শতকে গোটা ফ্রান্সের দ্রাক্ষাবন ধ্বংস করে ফেলেছিল; সেইসকল চারাগাছ কেটে চিলিতে নিয়ে যাওয়া হয়, এই কারণে সেখানে আজও অনুরূপ কৃষিপদ্ধতিতে চাষ করা হয়। নামে মিল থাকলেও ফ্রান্সের লোয়ার ভ্যালিতে প্রাপ্ত সভিগনন রিউজ –এর কোন পরিব্যক্তির সাথে সভিগনন ব্লাঙ্কের সম্পর্ক আছে কিনা জানা নেই।[৬]
১৮৮০-এর দশকে ক্রেস্টা ব্লাঙ্কা সুরাপ্রস্তুতিগারের প্রতিষ্ঠাতা চার্লস ওয়েটমোর সভিগনন ব্লাঙ্কের কলম প্রথম ক্যালিফোর্ণিয়ায় নিয়ে আসেন।[৭] এই কলমগুলি শাটো-ডি’য়ুকেমে সটার্ন্সের দ্রাক্ষাবন থেকে আনা হয়েছিল। লিভারমোর ভ্যালির চারাগুলিকে বড় করা হয়। ঘটনাক্রমে ১৯৬৮ সালে, রবার্ট মোণ্ডাভি ক্যালিফোর্ণিয়ায় ফিউম ব্লাঙ্ক নামে সুরা প্রস্তুত করেন। ১৯৭০ –এর দশকে নিউজিল্যাণ্ডে এই আঙুর প্রথম প্রবেশ করে এবং পরীক্ষামূলকভাবে একে মূলার-থোর্গাও-এর সাথে চাষ করা হয়।[৮]
জলবায়ু ও ভৌগোলিক পরিবেশ
সম্পাদনাসভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুর প্রায়শই দেরীতে অঙ্কুরিত হয় ও দ্রুত পরিণত হয়, এই কারণে এটি অতিরিক্ত গরমে চাষ না করে রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিবেশে চাষ করলে ভাল ফল দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যালিফোর্ণিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মত উষ্ণ অঞ্চল অপেক্ষা এই আঙুর, আলেকজাণ্ডার ভ্যালি অঞ্চলের মত শীতল জলবায়ু অ্যাখ্যায়িত অঞ্চলে ভালভাবে বেড়ে ওঠে।[৬] উচ্চ উষ্ণ পরিবেশে এই আঙুর চাষ করা হলে, তা অতিপক্ক হয়ে ওঠে এবং সেই কারণে তা থেকে মদ্য প্রস্তুত করলে তাতে গন্ধ ও অম্লতার প্রাখর্য নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়নের কারণে, আগেকার থেকে অধুনাকালে চাষীদের আরও তাড়াতাড়ি আঙুর কেটে মজুত করতে হয়।[৯]
এই আঙুর ফ্রান্সের বোরদ্যু ও লোয়ার ভ্যালি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়েছিল।[১০] ক্যালিফোর্ণিয়া, চিলি, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ব্যাপকভাবে এর চাষ করা হয় এবং সাদা সুরাপায়ীরা শারডোনের বিকল্প চায় বলে সভিগনন ব্লাঙ্কের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এই আঙুর ইতালি ও মধ্য ইওরোপেও পাওয়া যায়।
সুরা অঞ্চল
সম্পাদনাফ্রান্স
সম্পাদনাসভিগনন ব্লাঙ্ক ফ্রান্সের বোরদ্যুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে (বিশেষত অন্তর-দ্যু-ম্যে, গ্রেভস এবং পেসাক-লিওগনান-এ শুষ্ক সুরা হিসেবে, ও সটারনসে মিষ্টি সুরা হিসেবে) এবং সেইসাথে লোয়ার ভ্যালির মহাদেশীয় জলবায়ুতে (যেমন, পৌল্লি-ফিউম ও সোঁস্যা ও সভিগনন ডে ট্যুরেন অঞ্চলে) চাষ করা হয়। এই সকল অঞ্চলের জলবায়ু আঙুরের ধীর পক্কতার জন্য উপযোগী, এর ফলে আঙুরের অম্লতা ও মিষ্টতার পরিমাণে সমতা গড়ে ওঠবার সময় পাওয়া যায়। সুরা গন্ধের তীব্রতা বজায় রাখবার জন্য এই সমতার দরকার হয়। ফ্রান্সের মদ্য প্রস্তুতকারীরা মাটির টেরোয়ের বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য উপাদান যেগুলি সুরার গঠনে সাহায্য করে সেগুলির ওপর বিশেষ নজর দেন। সোঁস্যা ও পৌল্লির চক ও কিম্মার্জেন মার্ল থেকে আভিজাত্যমণ্ডিত ও জটীলতাপূর্ণ মদ্য প্রস্তুত হয়; সুদৃঢ় চক দিয়ে গঠিত মৃত্তিকা থেকে আরো বেশি সূক্ষ ও সুবাসিত সুরা পাওয়া যায়। লোয়ার নদী ও তার উপনদীর কূলবর্তী অঞ্চলের কাঁকুরে মাটি থেকে প্রাপ্ত সুরা মশলাদার, ফুলেল ও খনিজ পদার্থের গন্ধযুক্ত হয়; বোরদ্যু প্রদেশে তা হয় ফলের গন্ধবিশিষ্ট। চকমকি পাথুরে জমির (Flint) আঙুর থেকে প্রাপ্ত সুরা সবথেকে জোরালো গন্ধযুক্ত ও সর্বাপেক্ষা দীর্ঘমেয়াদি।[৯]
সোঁস্যা কমিউনের লোয়ার নদীর বুক চিরে অবস্থিত পৌল্লি-সুর-লোয়ার শহরে পৌল্লি ফিউমের উদ্ভব। এখানকার মাটি চুনাপাথরে ভরা, সেই কারণে স্থানীয়রা মনে করত এই মাটির প্রভাবেই সুরা ধোঁয়াটে, বন্দুকের চকমকি পাথরের গন্ধযুক্ত হয়, আর তাই এর নামকরণ হল ফিউম; ফরাসী শব্দ ‘ফিউম’ (Fumé) – কথার অর্থ ধোঁয়া যা সুরার নামের সাথে যুক্ত।[১১] সেইমিলন, মাস্কাডেল ও উগ্নি ব্লাঙ্কের মত সভিগনন ব্লাঙ্কও মাত্র চারধরনের সাদা আঙুরের একটি যা থেকে সাদা বোরদ্যু সুরা পাওয়া যায়। মিশ্রিত আঙুর হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এই সভিগনন ব্লাঙ্ক হল শ্যাটো মার্গো-এর প্যাভিলিয়ন ব্লাঙ্কের একটি প্রধান আঙুর।[১২] উত্তর রোন ভ্যালিতে, সভিগনন ব্লাঙ্ককে ট্রেসেলিয়ারের সাথে মিশ্রিত করা হয়, এর ফলে সুরা হয় সাদা ও তীক্ষ্ণ অম্লযুক্ত।[১৩]
সটার্নস অঞ্চলে, এই আঙুর সেইমিলনের সাথে মিশ্রিত করে বিলম্বিত মজুত সুরা, সটার্নস প্রস্তুত করা হয়। উৎপাদকের ওপর নির্ভর করে সভিগনন ব্লাঙ্কের উপাদান বিভিন্ন ধরনের হয় এবং ইহা ৫ – ৫০% পর্যন্ত হতে পারে; প্রিমিয়ার ক্রু সুপিরিয়র ২০% ব্যবহার করে। সটার্নসে একটি প্রথাগত পদ্ধতি আছে – সেইমিলনের সারির মধ্যে নিয়মিত ফাঁক রেখে একটি সভিগনন ব্লাঙ্ক দ্রাক্ষাচারা রোপণ করা হয়। তবে, সভিগনন ব্লাঙ্ক ১ – ২ সপ্তাহের আগে পেকে গেলে, যতদিন তা গাছে ঝুলে থাকবে ততই তার তীব্রতা ও গন্ধ নষ্ট হতে থাকবে। এই কারণে উৎপাদকেরা তাদের সভিগনন ব্লাঙ্ক পার্সেল আলাদা করে রাখে।[১৪]
শাবলি কমিউনের কাছে অবস্থিত একটি AOC আছে যাকে সেন্ট-ব্রিস বলা হয়, এ জায়গাটি বর্তমানে সভিগনন ব্লাঙ্ক উৎপাদনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।[১৫]
অস্ট্রেলিয়া
সম্পাদনাঅস্ট্রেলিয়ায়, বিশেষ করে মার্গারেট নদী অববাহিকা অঞ্চলে, সেইমিলনের সাথে মিশিয়ে এই আঙুর চাষ করা হয়। কেবলমাত্র, সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুর থেকে প্রাপ্ত বিচিত্র রীতি (Varietal Styles) অ্যাভেলেইড পাহাড় ও পাথাওয়েতে উৎপন্ন হয়। এর সাথে নিউজিল্যাণ্ডের আঙুরের বিচিত্র রীতির পার্থক্য রয়েছে; সেখানে এই আঙুর থেকে প্রাপ্ত সুরা স্বাদে আরো পরিপক্ব হয় এবং তাতে সাদা পিচ ফল ও লেবুর গন্ধ থাকে এবং তা কিছু বেশি অম্লধর্মী হয়।[৮]
চিলি ও ব্রাজিল
সম্পাদনা১৯৯০-এর শুরু থেকে, চিলিতে আঙুরবিশেষজ্ঞরা সভিগনন ব্লাঙ্ক ও সভিগননাসে পৃথকভাবে রোপণ করতে শুরু করেন। চিলির অবিমিশ্রিত সভিগনন ব্লাঙ্ক নিউজিল্যান্ডের থেকে কম অম্লধর্মী ও ইহা ফরাসী আঙুরগুলোর সমধর্মী। ভালপারাইসো অঞ্চল সভিগনন ব্লাঙ্কের জন্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়, কারণ এখানে অপেক্ষাকৃত শীতল জলবায়ু হওয়ায় আঙুরগুলিকে চিলির অন্যান্য স্থানের তুলনায় ছ’সপ্তাহ পর্যন্ত বেশি সময় ধরে গাছে রেখে দেওয়া যায়। ব্রাজিলে, আঙুরবিশেষজ্ঞরা আবিষ্কার করেছেন যে সভিগনন ব্লাঙ্ক নামে দ্রাক্ষা যেসব এলাকায় রোপণ করা হয় তা প্রকৃতপক্ষে সেভাল ব্লাঙ্ক।[৮]
নিউজিল্যাণ্ড
সম্পাদনা১৯৯০-এর দশকে, নিউজিল্যাণ্ডের, বিশেষ করে দক্ষিণ আইল্যাণ্ডের উপকূলবর্তী জলবায়ূ অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সভিগনন ব্লাঙ্ক সুরা, সুরা বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মালবারো অঞ্চলে, শ্লেটপাথরের নুড়ির ওপর বেলেমাটি চারারোপণের কাজে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে, কারণ মাটির উত্তম নিকাশী ক্ষমতা ও অনুর্বরতা অল্প যোগানে দ্রাক্ষার গন্ধ ঘনীভূত করতে সাহায্য করে। ওয়াইরাউ নদী উপত্যকার বন্যা সমতট অঞ্চলে, এই ধরনের জমি সমস্ত এলাকার পূর্ব-পশ্চিম বরাবর রয়েছে। এর ফলে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রোপিত দ্রাক্ষাবনে বহুবিচিত্র গন্ধসমন্বিত প্রচুর আঙুর ফলানো যায়; ভারী মাটিতে গুল্মজাতীয় আঙুরলতা জন্মায়, এগুলি দেরীতে পরিণত হয় এবং পাথুরে জমির আঙুর দ্রুত পরিণত হয় এবং এগুলি ক্রান্তীয় ও মিষ্টি গন্ধ সমন্বিত হয়। মাটির এই পার্থক্যের জন্য এবং আবগারদের ফলন মজুত করার সময়ের সিদ্ধান্তের জন্যই, নিউজিল্যাণ্ডের সভিগনন ব্লাঙ্ক একটি অপূর্ব উপাদান লাভ করে।[৯]
দক্ষিণ আইল্যাণ্ডের ভৌগোলিক অঞ্চল অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে দ্রাক্ষাবনে কখনও উপকূল থেকে ৮০ মাইলের (১০০ কিমি) বেশি ছড়িয়ে থাকে না। শীতল, উপকূলীয় আবহাওয়ায় দীর্ঘ ও স্থায়ী ফলন সম্ভব হয়, এই কারণে আঙুর পরিণত হলে এতে অম্ল ও মিষ্টির অনুপাতে সাম্য থাকে। এর ফলে আঙুরটিতে এমন অম্লত্ব ও মিষ্টতা তৈরী হয় যে তাকে স্বতন্ত্রভাবে নিউজিল্যাণ্ডের সভিগনন ব্লাঙ্ক বলে চেনা যায়।[১৬] অধুনা, দক্ষিণ আইল্যাণ্ডের ওয়াইপারা এবং উত্তর আইল্যাণ্ডের মার্লবোরো, গিসবোর্ড এবং হক্স বে সভিগনন ব্লাঙ্ক উৎপন্ন করবার জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করছে। এই অঞ্চলগুলির আঙুরে মার্লবোরো আঙুরের থেকে সামান্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। শতমূলী ও বৈঁচি ফলের গন্ধযুক্ত ও সবুজ বর্ণাভ আঙুর হল নিউজিল্যাণ্ডের সভিগনন ব্লাঙ্কের বৈশিষ্ট্য, এর এই গন্ধ হওয়ার কারণ মেথোক্সিপাইরাজাইন্স নামে এক ধরনের যৌগ যা শীতল জলবায়ু অঞ্চলের থেকে প্রাপ্ত সুরাকে আরো বেশি পরিমাণে গাঢ় ও ঘনীবদ্ধ করে।[১৭] প্যাশন ফলের ন্যায় পরিপক্ব গন্ধ, অথবা বক্সউডের ন্যায় গন্ধ, থায়লের উপস্থিতির কারণে সৃষ্টি হতে পারে।[১৮]
উত্তর আমেরিকা
সম্পাদনাউত্তর আমেরিকায়, ক্যালিফোর্ণিয়া হল সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুরের প্রথম সারির উৎপাদক, এছাড়া ওয়াশিংটন শহর ও কানাডার নিয়াগারা পেনিনসুলা ও ওকালাগান ভ্যালিতেও এর চাষ করা হয়। সভিগনন ব্লাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত সুরাকে ক্যালিফোর্ণিয়ায় ফিউম ব্লাঙ্কও বলে। এই ক্যালিফোর্ণিয়া সুরা ১৯৬৮ সালে নাপা ভ্যালির রবার্ট মোণ্ডাভি প্রথম তৈরী করেন। এক ফলনকারী মোণ্ডাভিকে ভাল সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুর প্রদান করেন। সেইসময় এর তৃণবৎ ও উগ্র গন্ধের জন্য, সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুর বিশেষ একটা জনপ্রিয় ছিল না। মোণ্ডাভি ব্যারেল এজিংসের (Barrel Ageings) সাহায্যে এর উৎকটভাব কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ফরাসী পৌল্লি ফিউমের সাথে সাযুজ্য রেখে এই সুরার নামকরণ করলেন ফিউম ব্লাঙ্ক।[১৪] এই ধরনের নাম ব্যবহারের প্রাথমিকভাবে একটি বাণিজ্যিক ভিত্তি আছে – ক্যালিফোর্ণিয়ার আবগারেরা যে নামটি তাদের পছন্দ তা ব্যবহার করতে পারেন। ওকযুক্ত ও ওকবিহীন সভিগনন ব্লাঙ্ক সুরা ফিউম ব্লাঙ্ক নামেই পণ্যজাত হতে লাগল।[১৯] ক্যালিফোর্ণিয়ার সভিগনন ব্লাঙ্ক দুধরনের হতে পারে। নিউজিল্যাণ্ড প্রভাবিত সভিগনন ব্লাঙ্কের অধিক ক্রান্তীয় ভাব থাকে, এতে সাইট্রাস ও প্যাশন ফলের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। মোণ্ডাভি প্রভাবিত ফিউম ব্লাঙ্ক লেবুর গন্ধযুক্ত অধিক গোলাকৃতি হয়।[৮]
অন্যান্য অঞ্চল
সম্পাদনাসভিগনন ব্লাঙ্ক দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেলেনবশ ও ডার্বানভিল এবং ইটালীর কোলিও গোরিজিয়ানো অঞ্চলে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।[১৫] এছাড়াও এটি ইটালীর সর্বাধিক প্রচারিত মিষ্টি সুরা – মুফেটো ডেলা জালার প্রধান উপাদানগুলির একটি।
দ্রাক্ষাপ্রতিপালন
সম্পাদনাআঙুরের পরিণতির অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এক একরকম আঙুরের মিশ্রণ বৈশিষ্ট্য এক একধরনের হয়; এর ভিত্তিতে নিউজিল্যাণ্ড ও চিলির সুরা প্রস্তুতকারীরা বিভিন্ন সময় অন্তর এক একধরনের আঙুর তৈরী করেন। সবথেকে কাঁচা অবস্থায় আঙুরে ম্যালিক অ্যাসিডের পরিমাণ থাকে সর্বোচ্চ। পরিণতির দিকে যত এগোয়, আঙুরটি লাল ও সবুজ মরিচের মত গন্ধযুক্ত হয় এবং সাথে সাথে এতে মিষ্টির পরিমাণের একটি সাম্য আসতে শুরু করে।[৯] সভিগনন ব্লাঙ্কের এই ধরনের গন্ধ উৎপন্ন হওয়ার কারণ মেথোক্সিপাইরাজাইন্স নামে একটি রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি। জমির সামান্য অসমানতার প্রভাবে মার্লবোরো ওয়াইরাউ ভ্যালির দ্রাক্ষাবনের বিভিন্ন সভিগনন ব্লাঙ্ক আঙুরের পরিণতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এর ফলে প্রস্তুত সুরা অনুরূপ গন্ধযুক্ত হয়।
সভিগনন ব্লাঙ্ক সুরা প্রস্তুতি-পদ্ধতির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের দ্বারা অতীব পরিমাণে প্রভাবিত হয়। এমনই একটি সিদ্ধান্ত হল – আঙুরের ত্বক কতক্ষণ তার আঙুররসের সংস্পর্শে থাকবে – তার সময় নির্ধারণ। নিউজিল্যাণ্ড সুরা শিল্পের প্রথম দিকে, দক্ষিণ আইল্যাণ্ডে কোন মদ্য প্রস্তুতাগার ছিল না, যে কারণে তাজা মজুত করা আঙুরগুলো প্রথমে ট্রাকের মাধ্যমে ও পরে নৌ-পরিবহনের মাধ্যমে উত্তর আইল্যাণ্ডে, ও সেখানে প্রায়শই অকল্যান্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হত। এর ফলে আঙুরের ত্বক ও রসের মধ্যে দীর্ঘসময়ব্যাপী উন্মুক্ত সংস্পর্শ থাকত; এর ফলে মদের তীব্রতা ও কড়া গন্ধ বেড়ে উঠত। লোয়ারের মত, কিছু আবগার ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু পরিমাণ রস আঙুরের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে দেন যাতে পরে তাদের আঙুরের মিশ্রণ করতে সুবিধা হয়। আর ক্যালিফোর্ণিয়ার মত অন্যান্য সুরাপ্রস্তুতকারীরা সুরার পরিণত হওয়ার সামর্থ্য কমে যাওয়ার আশঙ্কায় আঙুরত্বকের সঙ্গে রসের সংস্পর্শ এড়িয়ে যান।[২০]
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল সন্ধান প্রক্রিয়া চলাকালীন উষ্ণতা। ফরাসী সুরাপ্রস্তুতকারীরা অপেক্ষাকৃত অধিক উষ্ণতা (প্রায় ১৬-১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড) যার ফলে সুরা খনিজের গন্ধ প্রাপ্ত হয়; নিউ ওয়ার্ল্ড সুরাপ্রস্তুতকারীরা তুলনামূলকভাবে কম উষ্ণতা পছন্দ করে যার ফলে সুরার গন্ধ হয় ফলের মত ও ক্রান্তীয় প্রকৃতির। লোয়ারের কিছু অল্পসংখ্যক সুরা প্রস্তুতকারীদের মধ্যে ম্যালোল্যাক্টিক সন্ধান প্রক্রিয়া করবার চল আছে, এই পদ্ধতি নিউজিল্যান্ড সুরার সাথে যুক্ত।[২০] ওক পরিণতি (Oak Ageing) সুরার ওপর খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, ওকই সুরার বিশেষ গন্ধের জন্য দায়ী ও তাছাড়া এর উচ্চ অম্লধর্ম কমানোতেও ওক সাহায্য করে। নিউজিল্যান্ড ও সঁস্যার কিছু সুরা প্রস্তুতকারীরা ব্যারেলের থেকে মরিচাবিহীন স্টিলের ট্যাঙ্ক বেশি পছন্দ করেন, কারণ তাতে প্রখর মনোযোগ রাখা যায় ও গন্ধের তীব্রতাও যথাযথভাবে বজায় রাখা যায়।[২১]
সমার্থক
সম্পাদনাসভিগনন ব্লাঙ্ক নিম্নলিখিত নামেও পরিচিতঃ বেইয়াজ সভিগনন, ব্লাঙ্ক ডক্স, ব্লাঙ্ক ফিউম, বোরদ্যু বিয়াঙ্কো, ডোস ব্লাঞ্চ, ফেহার সভিগনন, ফেইগেনট্রব, ফাই, ফাই ডান্স লে নেওভিলোয়ে, ফিউম, ফিউম ব্লাঙ্ক, ফিউম সুরিন, জেনেটিন, জেন্নেটিন, জেন্টিন আ রোমোরান্টিন, গ্রস সভিগনন, লিবরনাইস, মেল্কি সটার্ণ, মুস্কাট সিলভেনার (Muskat Silvaner), মুস্কাট সিলভেনার (Muskat Sylvaner), মুস্কাটানি সিলভানেক, মুস্কাটনি সিলভানেক, মুস্কাটসিলভানেক, পেইনশন, পেল্লেগ্রিনা, পেটিট সভিগনন, পিকাবন, পিক্কাবন, পাইনট মেস্টনি বেলি, পিসোট্টা, পিউনচাও, পাঞ্চঅন, পানিচাও, কুইনচন, রুচেলিন, স্যাম্পেলগ্রিনা, সারভোনিয়েন, সটার্নস, সভিগনন, সভিগনন বিয়াঙ্কো, সভিগনন বিজেলি, সভিগনন ব্লাঙ্কো, সভিগনন ফিউম, সভিগনন গ্রস, সভিগনন জন, সভিগনন জেন, সভিগনন পেটিট, সভিগনন ভার্ট, সভিগনন হোয়াইট, সাভাগনিন, সাভাগনিন ব্লাঙ্ক, সাভাগনিন মুস্ক, সাভাগনৌ, সাভিগনন, সার্ভানিয়েন, সার্ভোনিয়েন, সার্ভোয়েন, সোতার্নস, সোভিনাক, সোভিঞ্জন, সোভিঞ্জন বেলি, সোভিনন, স্পার্গোলিনা, সুরিন, সিলভিনার মুস্ক, উভা পেলেগ্রিনা, হোয়েজার সভিগনন এবং জোল্ড অর্টলিবি।[২২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 52 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ ক খ Wine & Spirits Education Trust "Wine and Spirits: Understanding Wine Quality" pgs 6-9, Second Revised Edition (2012), London, ISBN 9781905819157
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 268 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ Materman, "Stuff of legends: Marlborough Sauvignon blanc."
- ↑ Robert Joseph and Margaret Rand, KISS Guide to Wine DK Pub 2000 ISBN 0-7894-5981-7
- ↑ ক খ Oz Clarke Encyclopedia of Grapes pg 221 Harcourt Books 2001 ISBN 0-15-100714-4
- ↑ Wine Pros Sauvignon blanc
- ↑ ক খ গ ঘ Oz Clarke Encyclopedia of Grapes pg 225 Harcourt Books 2001 ISBN 0-15-100714-4
- ↑ ক খ গ ঘ Oz Clarke Encyclopedia of Grapes pg 222 Harcourt Books 2001 ISBN 0-15-100714-4
- ↑ Wine Lover's Page, "Sauvignon blanc"
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 272 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 123 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ J. Robinson Vines, Grapes & Wines pg 120 Mitchell Beazley 1986 ISBN 1-85732-999-6
- ↑ ক খ J. Robinson Vines, Grapes & Wines pg 124 Mitchell Beazley 1986 ISBN 1-85732-999-6
- ↑ ক খ M. Kramer Saved by Sauvignon The Wine Spectator pg 36 July 31st, 2007
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 807 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ Marais, J.; Hunter, J. J.; Haasbroek, P. D. (1999). "Effect of canopy microclimate, season and region on sauvignon blanc grape composition and wine quality" (PDF). South African Journal of Enology and Viticulture. 20 (1): 19–30.
- ↑ Tominaga, T.; Baltenweck-Guyot, R.; Peyrot des Gachons, C.; Dubourdieu, D. (2000). "Contribution of volatile thiols to the aromas of white wines made from several Vitis vinifera grape varieties". American Journal of Enology and Viticulture. 51 (2): 178–181.
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 647 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ ক খ Oz Clarke Encyclopedia of Grapes pg 223 Harcourt Books 2001 ISBN 0-15-100714-4
- ↑ K. MacNeil The Wine Bible pg 811 Workman Publishing 2001 ISBN 1-56305-434-5
- ↑ Sauvignon Blanc, Vitis International Variety Catalogue, accessed 2010-11-24