সদাশিব অমরাপুরকর
সদাশিব দত্তরায় অমরাপুরকর (১১ মে ১৯৫০ - ৩ নভেম্বর ২০১৪) একজন ভারতীয় অভিনেতা। ১৯৮৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন দশকের কর্মজীবনে তিনি মারাঠি ও হিন্দি চলচ্চিত্রে খল ও কৌতুক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুপরিচিত। তিনি তিন শতাধিক হিন্দি, মারাঠি, বাংলা, ওড়িয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[১]
সদাশিব অমরাপুরকর | |
---|---|
জন্ম | সদাশিব দত্তরায় অমরাপুরকর ১১ মে ১৯৫০ |
মৃত্যু | ৩ নভেম্বর ২০১৪ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৬৪)
পেশা | অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৭৯-২০১৩ |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুনন্দা অমরাপুরকর (বি. ১৯৭৩) |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
অমরাপুরকর অর্ধ সত্য (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং সড়ক (১৯৯১) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের প্রথম বিজয়ী।[২] এছাড়া তিনি ইশ্ক (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও জি সিনে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র বোম্বে টকিজ (২০১২)।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাঅমরাপুরকর ১৯৫০ সালের ১১ই মে তৎকালীন বোম্বে রাজ্যের (বর্তমান মহারাষ্ট্র) আহমেদনগর জেলার শেবগাঁও তহসিলের অমরাপুর গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম গণেশ কুমার নরওডে।[৩] ১৯৭৪ সালে তিনি সদাশিব নাম গ্রহণ করেন।[১] তাকে ছেলেবেলায় সকলে আদর করে তত্য নামে ডাকতেন।[৪][৫] তার পিতা একজন অটো চালক ছিলেন। তার একজন ছোট ভাই ছিল।[১]
তিনি বিদ্যালয়ে পড়াকালীনই অভিনয় শুরু করেন। তিনি সঙ্গীতে তালিমও নেন কিন্তু তার অতিমাত্রার নাকি স্বর খ্যাতি অর্জনে বাধা হবে এই কারণে তিনি ২১ বছর বয়সে সঙ্গীত ছেড়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন।[১] তিনি পঞ্চাশের অধিক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন এবং মঞ্চনাটক পরিচালনা করেছেন।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাঅমরাপুরকর মারাঠি মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে মারাঠি ভাষার ২২ জুন ১৯৮৭-এ ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী বাল গঙ্গাধর তিলকের ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে।[৬] ১৯৮১-৮২ সালে তিনি মারাঠি মঞ্চনাটক হ্যান্ডস আপ-এ অভিনাশ মসুরকর ও ভক্তি বার্বে-ইনামদারের সাথে অভিনয় করেন। মঞ্চনাটকটি সুপারহিট হয় এবং গোবিন্দ নিহলানি তাকে অর্ধ সত্য (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন।[৩] চলচ্চিত্রটি সফল হয় এবং অমরাপুরকরের অভিনয় সমাদৃত হয়। এই চলচ্চিত্রে ডন রমা শেট্টি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[৬]
এরপর তিনি পুরানা মন্দির (১৯৮৪), জওয়ানি (১৯৮৪) নসুর (১৯৮৫), খামোশ (১৯৮৫), মুদ্দত (১৯৮৬) চলচ্চিত্রে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি অমিতাভ বচ্চন অভিনীত আখরি রাস্তা (১৯৮৬) ও ধর্মেন্দ্র অভিনীত হুকুমত (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে প্রধান খল চরিত্রে অভিনয় করেন। হুকুমত চলচ্চিত্রটির ব্যবসাসফলতার ফলে অমরাপুরকর ধর্মেন্দ্রের বিপরীতে "সৌভাগ্যের প্রতীক" হিসেবে চিহ্নিত হন এবং পরবর্তীকালে তারা একসাথে খতরোঁ কে খিলাড়ি (১৯৮৮), বীরু দাদা (১৯৯০), ফরিশ্তে (১৯৯১)-সহ একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[১]
১৯৯১ সালে তিনি সড়ক চলচ্চিত্রে নপুংসক পতিতালয় রক্ষক মহারানী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[৬] তিনি এই বিভাগে প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ী।[২] ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি পার্শ্ব ও কৌতুক চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এ সময় তাকে আঁখেঁ (১৯৯৩), ছোটে সরকার (১৯৯৬), গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ (১৯৯৭), আন্টি নাম্বার ওয়ান (১৯৯৮), হাম সাথ-সাথ হ্যাঁয় (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে দেখা যায়।[১] তিনি ইশ্ক (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও জি সিনে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তাকে সর্বশেষ বোম্বে টকিজ (২০১২)-এ দিবাকর ব্যানার্জীর "স্টার" অংশে দেখা যায়।[৬]
ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
সম্পাদনাঅমরাপুরকর তার বিদ্যালয় জীবনের প্রেমিকা সুনন্দা কর্মকারকে বিয়ে করেন।[৪] তাদের কন্যা রীমা অমরাপুরকর।[৭] ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে তার ফুসফুসের প্রদাহ দেখা দিলে তাকে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।[৭] তিনি ২০১৪ সালের ৩রা নভেম্বর ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
পুরস্কার ও মনোনয়ন
সম্পাদনাবছর | পুরস্কার | বিভাগ | মনোনীত কর্ম | ফলাফল | সূত্র. |
---|---|---|---|---|---|
১৯৮৪ | ৩১তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা | অর্ধ সত্য | বিজয়ী | [৮] |
১৯৯১ | ৩৬তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী | সড়ক | বিজয়ী | [৯] |
১৯৯৮ | ৪৩তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | ইশ্ক | মনোনীত | ||
১ম জি সিনে পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনয়শিল্পী | মনোনীত | [১০] |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Sadashiv Amrapurkar: A multifaceted actor who made us laugh and cry with ease"। ইন্ডিয়া টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ কোতোয়ানি, হিরেন; সিনহা, সীমা (৪ নভেম্বর ২০১৪)। "Sadashiv Amrapurkar was the first recipient of Filmfare's Best Actor in a villanious role"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। দ্য টাইমস গ্রুপ। ৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "Sadashiv Amrapurkar's real name was Ganesh Kumar Nalawade"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ৪ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ "Sadashiv Amrapurkar: Lesser known facts"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ২৯ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ "Actor Sadashiv Amrapurkar passes away"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ৩ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "Veteran actor Sadashiv Amrapurkar passes away"। হিন্দুস্তান টাইমস। ৩ নভেম্বর ২০১৪। ৩ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ "Sadashiv Amrapurkar in critical condition"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ২৫ অক্টোবর ২০১৪। ২৮ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "The Filmfare Awards Winners – 1983"। দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "The Filmfare Awards Nominations – 1990"। দ্য টাইমস গ্রুপ। ২৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "1st Zee Cine Awards 1998 Popular Award Categories Nominations"। জি টিভি। জি এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারপ্রাইজেস। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে সদাশিব অমরাপুরকর (ইংরেজি)