সত্যনারায়ণ
সত্যনারায়ণ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি।[১] পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সত্যনারায়ণ সত্যপীর নামেও পরিচিত। সত্যনারায়ণের পাঁচালি ও ব্রতকথায় উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সত্যনারায়ণ পীরের ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজের পূজা প্রচলন করেছিলেন। গবেষকদের মতে, বাংলার সত্যনারায়ণ-সত্যপীর ধারণাটি হিন্দু ও মুসলমান সংস্কৃতির সংমিশ্রণের ফল।[১]
স্কন্দপুরাণের আবন্ত্য খণ্ডের অন্তর্গত রেবাখণ্ডে সত্যনারায়ণ ব্রতের নিয়মাবলি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।[১] বিষ্ণু-নারায়ণের মতো সত্যনারায়ণও পীতবস্ত্র-পরিহিত, নীলবর্ণ, চতুর্ভূজ ও শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী।[১] পার্থক্যের মধ্যে সত্যনারায়ণ পূজা হয় সন্ধ্যাবেলা[২] এবং এই পূজায় ঘি, কলা, চালগুঁড়ি বা ময়দা, চিনি অথবা গুড়, দুধ প্রভৃতির সংমিশ্রণে শিন্নি ভোগ দেওয়ার নিয়ম আছে।[২]
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাকিংবদন্তি অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় ১৫শ শতাব্দীতে রাজা গণেশের কন্যা সত্যনারায়ণ বা সত্যপীরের পূজা করেন। মধ্যযুগে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ভিক্ষালব্ধ উপকরণের দ্বারা সত্যপীরের পূজা করতেন, সত্যপীরের পাঁচালি গাইতেন এবং প্রসাদী শিন্নি ভাগ করে খেতেন। কালক্রমে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত ধর্মাচরণের প্রথাটি বিলুপ্ত হলে মুসলমানেরা পীরের দরগায় শিন্নি উৎসর্গ করতে শুরু করেন এবং হিন্দুরা সত্যপীরের স্থানে সত্যনারায়ণ পূজা শুরু করলেন। অবশ্য হিন্দুদের মধ্যে শিন্নি দেওয়ার রীতিটি এবং ব্রতকথাতে অনেক স্থানে সত্যনারায়ণের সত্যপীর ছদ্মবেশে পূজা প্রচারের কাহিনিটি রয়ে যায়।[১]