শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে ভারতীয় হস্তক্ষেপ
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে ভারতীয় হস্তক্ষেপ বলতে শ্রীলঙ্কায় চলমান গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীকে শ্রীলঙ্কায় মোতায়েনকে বুঝানো হয়। ১৯৮৭ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পাদিত ভারতীয়-শ্রীলঙ্কান চুক্তি অনুসারে এসময় ভারত শ্রীলঙ্কার তামিল জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহী দলগুলোকে, বিশেষত এলটিটিইকে, নিরস্ত্র করার প্রচেষ্টা চালায়।
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে ভারতীয় হস্তক্ষেপ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
ভারত শ্রীলঙ্কা | এলটিটিই | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
রামস্বামী ভেঙ্কটরমন রাজীব গান্ধী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ হরকিরত সিং অশোক মেহতা | ভেলুপিল্লাই প্রভাকরন | ||||||
শক্তি | |||||||
১,০০,০০০ সৈন্য | অজ্ঞাত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
১,১৩৮ সৈন্য নিহত[১] ২,৭৬২ সৈন্য আহত[১] | অজ্ঞাত |
ভারতীয় সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল যে, ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা শ্রীলঙ্কায় বড় ধরনের কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না। কিন্তু মোতায়েন হওয়ার কয়েক মাস পরে তারা এলটিটিই যোদ্ধাদের সঙ্গে অনেকগুলো খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৯৮৯ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার আরম্ভ হয় এবং ১৯৯০ সালের মধ্যে সর্বশেষ ভারতীয় সৈন্যদলের শ্রীলঙ্কা ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে, যদিও শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ পুরোদমে চলতে থাকে।
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৭০-এর দশকে এলটিটিই এবং অন্যান্য শ্রীলঙ্কান তামিল সশস্ত্র দলগুলো শুদ্ধ তামিল আন্দোলন (পেরুঞ্চিথিরানারের নেতৃত্বাধীন), দ্রাভিদার কাঝাগাম (কৃষ্ণস্বামী ভীরামানির নেতৃত্বাধীন) এবং কামরাজ কংগ্রেস (নেদুমারানের নেতৃত্বাধীন) প্রভৃতি দক্ষিণ ভারতীয় দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে স্থাপন করে[২]। এই তামিল দলগুলো শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরে একটি তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীলঙ্কান তামিলদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। এজন্য এলটিটিই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী মারুদুর গোপালান রামচন্দ্রন এবং মুথুবেল করুণানিধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
শ্রীলঙ্কা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে সংগঠনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল, কিন্তু ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জুলিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনের জয়লাভের পর শ্রীলঙ্কান সরকারের নীতি পশ্চিমাপন্থী হয়ে ওঠে। তিনি শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন সংবিধান এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রচলন করেন। শ্রীলঙ্কা উদার মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণকারী প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ[৩]।
তদুপরি রাষ্ট্রপতি জয়াবর্ধনের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্পর্ক ভালো ছিল না, যেমনটি ছিল তার পিতা জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে[২]। এজন্য কৃষ্ণ জুলাই জাতিগত দাঙ্গার পর ভারতীয় সরকার উত্তর শীলঙ্কার বিদ্রোহী দলগুলোকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র বেশ কয়েকটি তামিল বিদ্রোহী দলকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করতে আরম্ভ করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে[৪]।
অপারেশন পুমালাই
সম্পাদনা১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে ভারত আরো সক্রিয়ভাবে শ্রীলঙ্কায় জড়িত হয়ে পড়ে এবং ১৯৮৭ সালের ৫ জুন ভারতীয় বিমানবাহিনী শ্রীলঙ্কান সৈন্যদের দ্বারা অবরুদ্ধ জাফনায় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে। যখন শ্রীলঙ্কান সরকারের দাবি অনুসারে তারা এলটিটিইকে পরাজিত করার দ্বারপ্রান্তে ছিল, তখন ভারত বিদ্রোহীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়ে এলটিটিই-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে প্যারাশুটের মাধ্যমে ২৫ টন খাদ্য ও ওষুধপত্র সরবরাহ করে[৫]। শ্রীলঙ্কান সরকারের মতে, ভারত এসময় তামিল বিদ্রোহীদের কেবল খাদ্য ও ওষুধপত্রই নয়, বরং অস্ত্রশস্ত্রও সরবরাহ করে[৬]। এরপর ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে আলোচনা হয় এবং ১৯৮৭ সালের ২৯ জুলাই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং শ্রীলঙ্কান রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে ভারত–শ্রীলঙ্কা শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুসারে শ্রীলঙ্কান সরকার শ্রীলঙ্কার প্রদেশগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি, গণভোটের মাধ্যমে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোকে সংযুক্ত করে একটি একক প্রদেশে রূপান্তর এবং তামিল ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা প্রদান প্রভৃতিসহ শ্রীলঙ্কান বিদ্রোহীদের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়। বিনিময়ে ভারত উত্তর ও পূর্ব শ্রীলঙ্কায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন এবং তামিল বিদ্রোহীদের সহায়তাদান বন্ধ করতে রাজি হয়। এলটিটিই-সহ অন্যান্য তামিল বিদ্রোহী দলগুলো প্রথমে অনিচ্ছুক হলেও পরে ভারতীয় শান্তিরক্ষীদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ করতে রাজি হয় এবং ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা প্রাথমিকভাবে একটি যুদ্ধবিরতি ও সশস্ত্র দলগুলোর আংশিক নিরস্ত্রীকরণ তত্ত্বাবধান করে।
তিনি সর্বশেষ বুলেট দিয়ে ভারতীয়দের প্রতিহত করবেন – জয়াবর্ধনের এমন ঘোষণা করার পরপরই ভারত–শ্রীলঙ্কা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনায় দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় অশান্তির সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার উত্তরে ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের ফলে শ্রীলঙ্কান সরকার অশান্তি দমনের জন্য ভারতীয় বিমানে করে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে সৈন্য প্রেরণে সক্ষম হয়। এর ফলে দক্ষিণ শ্রীলঙ্কায় জনতা বিমুক্তি পেরামুনা একটি বিদ্রোহ আরম্ভ করে। পরবর্তী দুই বছরে কঠোরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়।
এলটিটিই-এর সঙ্গে সংঘর্ষ
সম্পাদনাঅধিকাংশ তামিল বিদ্রোহী দল অস্ত্রসমর্পণ ও সংঘাতটির শান্তিপূর্ণ সমাধানে সম্মত হলেও এলটিটিই তার যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করতে অস্বীকৃতি জানায়[৭]। তখন চুক্তির সফলতা নিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী জোরপূর্বক এলটিটিইকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা চালায় এবং পরিণতিতে এলটিটিই-এর সঙ্গে তাদের পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়। এই তিন বছরব্যাপী যুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্যরা গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বিনা বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং ভারতীয় প্রচারমাধ্যমের কিছু অংশের দ্বারা অভিযুক্ত হয়। ফলে ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা শীঘ্রই শ্রীলঙ্কান তামিলদের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়[৮][৯][১০][১১]।
অপারেশন পবন
সম্পাদনাভারত–শ্রীলঙ্কা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এলটিটিইকে নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালের শেষদিকে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী এলটিটিই-এর নিকট হতে জাফনা দখলের জন্য অভিযান চালায়। অপারেশন পবন সাংকেতিক নামবিশিষ্ট এই অভিযানে তিন সপ্তাহব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা এলটিটিই-এর কাছ থেকে জাফনা উপদ্বীপের কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়, যেটি শ্রীলঙ্কান সৈন্যরা কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও করতে পারে নি। ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার গানশিপ ও ভারী কামানের সহায়তায় এলটিটিইকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। এই অভিযানে ২১৪ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়[১২]।
জাফনা বিশ্ববিদ্যালয় হেলিড্রপ
সম্পাদনাজাফনা বিশ্ববিদ্যালয় হেলিড্রপ ছিল অপারেশন পবন চলাকালীন ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রথম অভিযান। ১৯৮৭ সালের ১২ অক্টোবর মধ্যরাতে মিল এমআই-৮ হেলিকপ্টারে করে ভারতীয় ১০ম প্যারা কমান্ডোর ১০৯ নং হেলিকপ্টার ইউনিট এবং ১৩তম শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রির একটি দলকে জাফনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবতরণ করানোর পরিকল্পনা করা হয়। অভিযানটির উদ্দেশ্য ছিল জাফনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত এলটিটিই নেতৃবৃন্দকে বন্দি করা। এর মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ জাফনা দখলের জন্য পরিকল্পিত অপারেশন পবনকে সংক্ষিপ্ত করতে চাইছিল। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত ব্যর্থতার কারণে অভিযানটি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। অবতরণকৃত সৈন্যরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রির ২৯ জন সৈন্যের মধ্যে ২৮ জন সৈন্যসহ আরো ৬ জন ভারতীয় প্যারাকমান্ডো নিহত হয়।
ভারতীয় হস্তক্ষেপের অবসান
সম্পাদনাজাতীয়তাবাদী মনোভাবের কারণে অনেক সিংহলি শ্রীলঙ্কায় চলমান ভারতীয় সৈন্যদের উপস্থিতির বিরোধিতা করে। এই কারণে শ্রীলঙ্কান সরকার ভারতকে দ্বীপটি ত্যাগ করার আহ্বান জানায় এবং একটি গোপন চুক্তির মাধ্যমে এলটিটিই-এর সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি স্থাপন করে। কিন্তু এলটিটিই ও ভারতীয় শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। ১৯৮৯ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসা ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী ও এর তাঁবেদার তামিল ন্যাশনাল আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এলটিটিইকে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন[১৩][১৪]। তবে ভারতীয় শান্তিরক্ষীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং শ্রীলঙ্কান সংঘাতের উভয় পক্ষ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জোরদার হওয়া সত্ত্বেও রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সংসদ নির্বাচনে তার পরাজয়ের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতীয় শান্তিরক্ষী প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন এবং ১৯৯০ সালের ২৪ মার্চ তাদের সর্বশেষ জাহাজ শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করে।
যুদ্ধাপরাধ
সম্পাদনাশ্রীলঙ্কায় নিয়োজিত ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ, নির্যাতন ও বিনা বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে[১০][১১]। কিছু নিরপেক্ষ সংস্থার তথ্যমতে, ভারতীয় শান্তিরক্ষী ও এলটিটিই যোদ্ধারা যুদ্ধকালে বেসামরিক জনসাধারণের নিরাপত্তার ওপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করে নি।
ভারতীয় সৈন্যরা এসময় শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েকটি গণহত্যা, গুম ও ধর্ষণের ঘটনায় লিপ্ত হয়[১৫][১৬]। ১৯৮৯ সালের ২, ৩ ও ৪ আগস্ট ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা জাফনার ভালভেত্তিতুরাইয়ে ৫০ জনের বেশি বেসামরিক তামিলকে হত্যা করে এবং শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে[১৭]। ১৯৮৭ সালের ২২ অক্টোবর জাফনার একটি হাসপাতালের কাছে তামিল বিদ্রোহীদের সাথে সংঘর্ষের পর ভারতীয় সৈন্যরা হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করে ৭০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে বেশকিছু রোগী, ২ জন ডাক্তার, ৩ জন নার্স এবং ১ জন পেডিয়াট্রিক কনসালটেন্ট ছিলেন[১৮][১৯][২০]। ১৯৮৭ সালের আগস্টে ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা বেসামরিক সিংহলিদের গণহত্যায় জড়িত ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে[২১]।
ফলাফল
সম্পাদনাক্ষয়ক্ষতি
সম্পাদনাশ্রীলঙ্কায় ৩২ মাস ব্যাপী ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে প্রায় ১,২০০ ভারতীয় সৈন্য ও ৫,০০০-এর বেশি শ্রীলঙ্কান নিহত হয়, এবং কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্য গুরুতরভাবে আহত হয়। এছাড়া এই অভিযানে ভারতীয় সরকারের ১০.৩ বিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় রুপি ব্যয় হয়[২২]।
রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ড
সম্পাদনা১৯৯১ সালে থেনমোঝি রাজারত্নাম নামক একজন তামিল নারীর আত্মঘাতী বোমা হামলায় রাজীব গান্ধী নিহত হন। এর ফলে ভারতে এলটিটিই-এর প্রতি সমর্থন বহুলাংশে হ্রাস পায়। ভারতীয় প্রচারমাধ্যমের মতে, প্রভাকরন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গান্ধীকে তামিল মুক্তি সংগ্রামের বিরোধী বিবেচনা করতেন, এবং ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জয়যুক্ত হলে আবার শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (যেটিকে প্রভাকরন 'শয়তানি বাহিনী' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন') মোতায়েন করতে পারেন এই আশঙ্কায় প্রভাকরন তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন[২৩]। ১৯৯৮ সালে বিশেষ বিচারক ভি. নবনীতমের সভাপতিত্বে একটি ভারতীয় আদালত এলটিটিই এবং এর নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরনকে রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে[২৪]। ২০০৬ সালে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে এলটিটিই-এর তাত্ত্বিক গুরু আন্তন বালাসিংঘাম হত্যাকাণ্ডটি সম্পর্কে দু:খ প্রকাশ করেন, যদিও তিনি এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করেন নি[২৫][২৬]। রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর ভারত এই সংঘর্ষ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ https://web.archive.org/web/20140227095626/http://www.army.lk/detailed.php?NewsId=7445। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ ক খ "LTTE: the Indian connection"। Sunday Times। ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-২৫।
- ↑ "Sri Lanka – an Overview"। Fulbright commission। ২০১১-০৩-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-২৫।
- ↑ David Brewster। "India's Ocean: the Story of India's Bid for Regional Leadership. Retrieved 13 August 2014"।
- ↑ Weisman, Steven R. (৫ জুন ১৯৮৭)। "India airlifts aid to tamil rebels"। STEVEN R. WEISMAN। New York Times। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৯, ২০১০।
- ↑ "Invasion by Indian jets on June 4, 1987 enraged Sri Lankan army officers"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৯।
- ↑ "Tamil rebels abduct 2 rivals, Sri Lankan military says"। Associated Press। ১২ ডিসেম্বর ২০০৬। ১৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ Balasingham, Adele. (2003) The Will to Freedom - An Inside View of Tamil Resistance. Fairmax Publishing Ltd, 2nd ed. আইএসবিএন ১-৯০৩৬৭৯-০৩-৬.
- ↑ NorthEast Secretariat report on Human rights 1974 - 2004 (see Further Reading section).
- ↑ ক খ Ghosh, P. A. (১৯৯৯-০১-০১)। Ethnic Conflict in Sri Lanka and Role of Indian Peace Keeping Force (IPKF) (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। পৃষ্ঠা 147। আইএসবিএন 9788176481076।
- ↑ ক খ Bandarage, Asoka (২০০৮-১১-১৯)। The Separatist Conflict in Sri Lanka: Terrorism, Ethnicity, Political Economy (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 9781135970857।
- ↑ "Operation Pawan. The Battle for Jaffna"। ৩০ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Chapter 55: Assassination of Athulathmudali"। Asia Times। ৪ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১১।
- ↑ Dissanayaka, T.D.S.A.: "War or Peace in Sri Lanka, Volume II", p. 332. Swastika, 1998.
- ↑ "Statistics on civilians affected by war from 1974 – 2004" (পিডিএফ)। NESOHR। ২০০৯-০২-২৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১৫।
- ↑ McDowell, Chris (১৯৯৬)। A Tamil Asylum Diaspora: Sri Lankan Migration, Settlement and Politics in Switzerland (Studies in Forced Migration)। Berghahn Books। আইএসবিএন 1-57181-917-7। p.181
- ↑ Sebastian, Rita (২৪ আগস্ট ১৯৮৯)। "Massacre at Point Pedro"। The Indian Express। পৃষ্ঠা 8–9।
- ↑ Gunaratna, Rohan (১৯৯৩)। Indian intervention in Sri Lanka: The role of India's intelligence agencies। South Asian Network on Conflict Research। আইএসবিএন 955-95199-0-5। p.246
- ↑ Richardson, John (২০০৫)। Paradise Poisoned: Learning About Conflict, Terrorism and Development from Sri Lanka's Civil Wars। International Centre for Ethnic Studies। আইএসবিএন 955-580-094-4। p.546
- ↑ Somasundaram, D. (১৯৯৭)। "Abandoning jaffna hospital: Ethical and moral dilemmas"। Medicine, Conflict and Survival। 13 (4): 333–347। ডিওআই:10.1080/13623699708409357।
- ↑ "Chapter 36: Indians rule the roost"। Asian Times। ২০০৯-০২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-৩০।
- ↑ John Richardson (২০০৫)। Paradise poisoned:learning about conflict, terrorism, and development from Sri Lanka's civil wars। পৃষ্ঠা 562। আইএসবিএন 955-580-094-4। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Prabhakaran had Rajiv killed for being 'anti-Tamil'"। Rediff। ৩১ আগস্ট ২০০৬।
- ↑ "26 sentenced to death for Rajiv Gandhi's assassination"। Rediff। ৩১ আগস্ট ২০০৬।
- ↑ "Tamil Tiger 'regret' over Gandhi"। BBC News। ২৭ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০০৭।
- ↑ "We killed Rajiv, confesses LTTE"। The Times of India। ২৮ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০০৭।
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Gunaratna, Rohan. (1997). International & Regional Security Implications of the Sri Lankan Tamil Insurgency, AABC for International Studies.
- Gunaratna, Rohan. (1998). Sri Lanka's Ethnic Crisis and National Security, Colombo: South Asian Network on Conflict Research.
- Gunaratna, Rohan. (October 1, 1987). War and Peace in Sri Lanka: With a Post-Accord Report From Jaffna, Sri Lanka: Institute of Fundamental Studies.