শ্রাদ্ধ

পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে আচার

শ্রাদ্ধ (সংস্কৃত: श्राद्ध) হল পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এবং তাদের আশীর্বাদ কামনায় দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান। হিন্দুধর্মে, পূর্বপুরুষদের, বিশেষ করে মৃত পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এটি পালন করা হয়।[] ধারণাগতভাবে, এটি পিতামাতা ও পূর্বপুরুষদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং তাদের শান্তির জন্য প্রার্থনা করার জন্য সাহায্য করার উপায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

এক হিন্দু পরিবারে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্যস্ত পুরোহিত

সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তানরা কিংবা আত্মীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অবশ্য ব্যক্তি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে এ কাজ করে যেতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সন্ধ্যা দেওয়া যাবে কিন্তু পূজা দেওয়া যাবে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শ্রেণিবিভাগ

সম্পাদনা

শ্রাদ্ধ প্রধানত তিন প্রকার: আদ্যশ্রাদ্ধ, আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ও সপিণ্ডীকরণশ্রাদ্ধ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

  1. আদ্যশ্রাদ্ধ: আদ্যশ্রাদ্ধ অশৌচান্তে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে করণীয়। বর্ণভেদে হিন্দু পুরাণ মতে ব্রাহ্মণ বর্ণের ১০ দিন, ক্ষত্রিয় বর্ণের ১২ দিন, বৈশ্য বর্ণের ১৫ দিন ও শূদ্র বর্ণের ৩০ দিন অশৌচ বিধান নির্ধারণ আছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন এ-কদিন ফল মুল, নিরামিষ এবং আতপ চাল, কাঁচকলা, ঘৃত, মধু দ্বারা হোব্বিস অন্ন খায়। রান্না করতে হয় দক্ষিণমুখী নতুন চুলায়। ঐ দিন পর্যন্ত পরনে ধুঁতি বা থান কাপড় থাকে আর উত্তরীয়/পৈতা। শেলাই করা কোনো কাপড় পরিধান করতে পারে না। অশৌচ চলা কালীন মাটিতে শয়ন করেন। এক আহার করেন। শ্রাদ্ধের আগের দিন মৃত ব্যক্তির পুত্ররা মাথার চুল ফেলে দেয় এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুনসমূহ পালন করে। শ্রাদ্ধের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। নিকট অতীতে ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার পর্যন্ত লোককে খাওয়াত; বর্তমানে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সেই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নানারকম দান-ধ্যানও করা হয়।
  2. বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ: উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি শুভকাজের পূর্বে পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ কামনায় যে শ্রাদ্ধ করা হয়, তার নাম আভু্যদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ।
  3. সপিণ্ডীকরণশ্রাদ্ধ: সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পরে করা হয়।

এছাড়াও আরও কয়েক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে। যেমন, মহালয়া প্রভৃতি বিশেষ হিন্দু আচার উপলক্ষে এবং বিশেষ তিথিতে কারও মৃত্যু হলে তার উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম পার্বণশ্রাদ্ধ। একসঙ্গে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে একোদ্দিষ্টশ্রাদ্ধ করা হয়। অম্বষ্টকা নামেও এক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে; তবে এর প্রচলন কম।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

 
পিতৃপক্ষের শেষে কলকাতার জগন্নাথ ঘাটে গণপিণ্ড প্রদান করা হচ্ছে।

অনুশীলনে, কর্তা (যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধ করেন) শ্রাদ্ধের দিন ব্রাহ্মণদের বা পুরোহিতদের আমন্ত্রণ জানান, তাদের মধ্যে তার পিতামাতার দেবত্বের আহ্বান জানান, তাদের পূজা করেন এবং খাওয়ান; অগ্নিসোমাকে, যারা পূর্বপুরুষদের কাছে নৈবেদ্য প্রেরণ করেন, তাদের লালন-পালন করেন এবং রক্ষা করেন, তুষ্ট করে হোম সম্পাদন করে; এবং বিদেহী আত্মাদের নৈবেদ্য বা পিণ্ড অর্পণ করে। নৈবেদ্য তিনটি প্রজন্মের জন্য তৈরি করা হয় যেমন পিতা, পিতামহ ও প্রপিতামহ অথবা মাতা, মাতামহ ও প্রমাতামহ। কর্তা পুরোহিতের আতিথেয়তা প্রসারিত করে এবং তাদের দক্ষিণা দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ করে। হিন্দুধর্মেও কাককে সম্মান করা হয় এবং শ্রাদ্ধের সময় কাককে খাবার বা পিণ্ড দেওয়ার প্রথা এখনও প্রচলিত আছে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Shradh Puja: Five Facts you should Know about Death Anniversary Ritual In Hinduism"NewsGram। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭। ২৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২৩ 
  2. "It's a crow's day"The Hindu। ২০০১-০৭-২৬। ২০১৬-০৪-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • Shraaddha, R. K. Srikanta Kumaraswamy, IIT, Chennai. In the Kannada language
  • ಆಶ್ವಲಾಯನ ಪಾರ್ವಣ ಶ್ರಾದ್ಧ ಚಂದ್ರಿಕಾ (Kannada language) by mundodu narayana bhatta, hayagreeva nagara, udupi 576 102
  • Shraaddha Chandrika (english) by mundodu narayana bhat, viraja, hayagreeva nagara udupi 576 102