শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর
শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৪০ — ৫ জুন, ১৯১৪) একজন বাঙালী সঙ্গীতজ্ঞ ও সাহিত্যিক।
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনা১৮৪০ সালে কলকাতা পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর পরিবারে তার জন্ম হয়। তার পিতার নাম হর কুমার ঠাকুর। মাতা শিবসুন্দরী। শৌরীন্দ্রমোহন কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি সঙ্গীত গুরু লক্ষ্মীপ্রসাদ মিশ্র ও ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীর কাছে সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন।
অবদান
সম্পাদনাশৌরীন্দ্রমোহন ছিলেন বাংলার সঙ্গীত সংস্কৃতির অন্যতম আদিপুরুষ এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও বঙ্গীয় সঙ্গীতের সমন্বয় সাধক। বাংলার সঙ্গীত ও নাট্য আলোচনার জগতে তার বহুল অবদান আছে। হিন্দুসংগীতের পুনরুদ্ধার ও বহুল প্রচারের জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। ইংরেজিসংগীত এবং আর্যসংগীত বিষয়ক বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও হস্তলিপি সংগ্রহ করে হিন্দু সংগীতশিক্ষার উপযোগী বহু গ্রন্থ প্রচার করেছেন। ১৮৭১ সালে হিন্দুমেলা উৎসবে তিনি সঙ্গীত-বিষয়ে প্রথম বক্তৃতা দেন। প্রকাশ্য সভায় বাংলায় সংগীত আলোচনার তিনিই পথ প্রদর্শক। [১] তিনি ১৮৭১ সালে বঙ্গ সঙ্গীত বিদ্যালয় ও ১৮৮১ সালে বেঙ্গল একাডেমি অফ মিউজিক নামক দুটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৭৫ সালে ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের প্রথম নাগরিক হিসাবে তাঁকে ‘ডক্টর অব মিউজিক’ উপাধি দেয়।[২] শৌরীন্দ্রমোহন ১৮৮০ সালে এফআরএ এসসিআইই উপাধি ও ১৮৮৪ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ফেলোশিপ প্রদান করে। ১৮৯৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ডক্টর অব মিউজিক’ উপাধিতে ভূষিত করে। শৌরীন্দ্রমোহন প্রচুর বাংলা ও ইরেজি গ্রন্থের রচয়িতা।[৩]
রচনা
সম্পাদনা- ভূগোল ও ইতিহাস ঘটিত বৃত্তান্ত (১৮৫৪)
- মুক্তা ফল (১৮৫৪)
- হারমোনিয়ম সূত্র (১৮৭৪)
- সঙ্গীতশাস্ত্র প্রবেশিকা (১৮৭৭)
- ভারতীয় নাট্য রহস্য (১৮৭৭)
- ভিক্টোরিয়া গীতিমালা (১৮৭৬)\
- জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৭৬)
- যন্ত্র কোষ (১৮৭৬)
- মৃদঙ্গ মঞ্জরী (১৮৮০)
- রসাবিষ্কারক বৃন্দক (১৮৮০)
- এ্কতান
- মনিমালা[৪]
- A Brief History of Tagore Family
- Hindu Music From Various Authors
- Eight Tunes etc
- The principle Avataras of the Hindus
- The Five Principle Musicians of the Hindus
- The Dramatic Sentiments of Aryas
- The Eight Principle Rasas of the Hindus
সম্মাননা
সম্পাদনাসংগীতের জন্য তিনি ভারতবাসীদের মধ্যে যেমন প্রথম ডক্টর অফ মিউজিক উপাধি লাভ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তেমনই বহু সম্মান লাভ করেছেন দেশ-বিদেশ হতে। যেমন-
- পারস্যের শাহ্ তাঁকে নবাব শাহজাদা উপাধি প্রদান করেন।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ও জাস্টিস অফ দি পিসহন।
- ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সরকারের সি.আই.ই. এবং পরে রাজা
- ১৮৮৪ সালে নাইট ব্যাচেলর অফ দ্য ইউনাইটেড কিংডম[১]
দাতা হিসাবেও তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। সংস্কৃত কলেজে বৃত্তি ও মাসিক সাহায্যদান, বরিশালে বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য ভূমিদান এবং লেডি ডাফরিন হাসপাতাল ও আলবার্ট ভিক্টর কুষ্ঠাশ্রম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর অর্থ দান করেছিলেন। গঙ্গাসাগর দ্বীপে পিতার নামে পুষ্করিণী ও বরানগরে রাস্তা তৈরি করেন।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭২৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "স্মৃৃতির অতলে শৌরীন্দ্রমোহন - Anandabazar"। anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৮।
- ↑ "ঠাকুর, শৌরীন্দ্রমোহন - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৮।
- ↑ "শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৮।