শৈবাল

বিভিন্ন প্রকার শৈবাল

শৈবাল জলজ সুকেন্দ্রিক এককোষী বা বহুকোষী জীব, যারা সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে। এদের দেহ মূল, কাণ্ডপাতায় বিভক্ত নয়। এরা বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস সংবন্ধন করতে সক্ষম। এরা সবাত শ্বসন পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তুর জারণ ঘটায়। পৃথিবীতে বহু প্রকার শৈবাল জন্মে থাকে। এদের কতক এককোষী ও কতক বহুকোষী। এরা মিঠা জলে এবং লোনা জলে জন্মাতে পারে। শৈবালের হাজার হাজার প্রজাতির মধ্যে আকার, আকৃতি, গঠনস্বভাবে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। আকার, আকৃতি ও গঠনে প্রচুর পার্থক্য থাকলেও এরা সবাই কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য একই রকম। আর তাই, এরা শৈবাল ও শেওলা নামে পরিচিত।পৃথিবীতে নানা ধরনের শৈবাল রয়েছে। কিছু শৈবাল আছে যারা পাথরের গায়ে জন্মে এদেরকে লিথোফাইট বলে। কিছু শৈবাল আছে যারা টিস্যুর অভ্যন্তরে জন্য এদেরকে এন্ডোফাইট বলে এবং কিছু শৈবাল আছে যারা অন্য শৈবালের গায়ে  জন্মে এদেরকে এপিফাইট বলা হয়।শৈবাল বিষয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ ও গবেষণা করাকে ফাইকোলজি বা শৈবালবিদ্যা বলে।শৈবাল বিদ্যাকে অ্যালগোলজিও বলা হয়। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির শৈবাল আছে বলে ধারণা করা হয়।

শৈবাল
Temporal range:
মেসোপ্রোটেরোজোয়িক–বর্তমান[]
অগভীর সমুদ্রের তলায় বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল
অগভীর সমুদ্রের তলায় বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল
Scientific classification
মহাজগত: সুকেন্দ্রিক, ব্যাক্টেরিয়া
Groups included
Cladistically included but traditionally excluded taxa
সবুজ শৈবাল

শৈবালের বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

১. শৈবাল সালোকসংশ্লেষণকারী স্বভোজী অপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা সাধারণত সবুজ হয়। অবশ্য অনেক সময় নীল-সবুজ, হলুদ, বাদামি, লালচেও হতে পারে।।

২. এরা সুকেন্দ্রিক, এককোষী বা বহুকোষী। শৈবালে কখনও সত্যিকার মূল, কাণ্ড ও পাতা সৃষ্টি হয়না। এরা সমাঙ্গদেহী বা থ্যালয়েড।

৩. এদের দেহে ভাস্কুলার টিস্যু নেই।এদের জননাঙ্গ এককোষী, বহুকোষী হলে তা কোনো বন্ধ্যা কোষাবরণ দিয়ে বেষ্টিত নয়।

৪. এদের স্পোরান্জিয়া (রেণুথলি) সর্বদাই এককোষী।

৫. এদের জাইগোট স্ত্রীজননাঙ্গে থাকা অবস্থায় কখনও বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় না।

৬. শৈবালের দেহ কোষ প্যারেনকাইমা কলার কোষের মতো দেখতে হয়।

৭.শৈবালের কোষ প্রাচীর প্রধানত সেলুলোজ দিয়ে গঠিত।[]

শ্রেণিবিন্যাস

সম্পাদনা

ইউলোথ্রিক্স

Division :Chlorophyta
  Class:Chlorophyceae
    Order :Ulothichales
      Family :Ulothrichaceae
         Genus :Ulothrix

কোষীয় গঠন

সম্পাদনা

সব শৈবালই সুকেন্দ্রিক (eukaryotic)

শৈবাল কোষের গঠন মােটামুটিভাবে উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই। কোষের বাইরে সেলুলোজ (প্রধান বস্তু) নির্মিত জড় কোষপ্রাচীর, কোষপ্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোষঝিল্লি, কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় সাইটোপ্লাজম থাকে। সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান আছে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বৃহৎ ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, পাইরিনয়েড, রাইবােসোম ইত্যাদি অঙ্গাণু এবং সঞ্চিত খাদ্য। কোনো কোনো শৈবালের দেহ নলাকার, শাখান্বিত, প্রস্থ প্রাচীরবিহীন এবং কোষে বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত থাকে। এরূপ শৈবাল দেহকে সিনোসাইটিক (coenocytic) শৈবাল বলে; যেমন- Vaucheria, Botrydium.

শৈবালের একটি বড় অংশই এককোষী। Pyrrhophyta, Euglenophyta, Chrysophyta এবং বহু Chlorophyta এককোষী। Rhodophyta-এর অধিকাংশই বহুকোষী, Phaeophyta বহুকোষী বৃহৎ শৈবাল নিয়ে গঠিত।

জানামতে সবচেয়ে ক্ষুদ্র (প্রকৃতকোষী) শৈবাল হলো Ostreococcus touri এবং সবচেয়ে বড় শৈবাল হলো Macrocystis pyrifera (প্রায় ৭০০ ফুট)। সবচেয়ে ছোট আদিকোষী শৈবাল হলো Prochlorococcus marinus.

 
কতিপয় শৈবাল

পরিবেশে ভূমিকা

সম্পাদনা

শৈবাল মাছের খাদ্য, যা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। সমুদ্রের বিপুল পরিমাণ শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশে অক্সিজেন ত্যাগ করে এতে পরিবেশ দূষণ রোধ হয়।

শৈবালের উপকারী দিক বেশি, কিন্তু অপকারী দিকও আছে।শৈবালের কিছু উপকারী দিক হলোঃ-

বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন যোগ, পরিবেশ দূষণ রোধ, উৎপাদক হিসেবে, বায়ুফুয়েল তৈরিতে, গোয়েন্দা সাবমেরিনের অবস্থান নির্ণয়, সমুদ্রের মাছের অবস্থান নির্ণয়, মাটির বয়স নির্ণয়, মানুষের খাদ্য হিসেবে, পশুখাদ্য হিসেবে, শৈবাল থেকে ন্যানোফিল্টার উৎপাদনে প্রভৃতি এর কিছু উপকারী দিক।

অপকারী দিকসমূহঃ-

পুকুর বা জলাধারে পুষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু নীলাভ সবুজ শৈবালের অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায় যাকে ওয়াটার ব্লুম বলা হয়। এতে জলাধারে পানি দূষিত হয় খাবার ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়।  উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টিতে, মাছের রোগ সৃষ্টিতে, স্থাপনার ক্ষতি, রাস্তাঘাট পিচ্ছিল করণেও এদের ভূমিকা রয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. N. J. Butterfield বছর=204=00। "Bangiomorpha pubescens n. gen., n., sp.: im_plications for the evolution of sex, multicellularity, and the Mesoproterozoic/Neoproterozoic radiation of eukaryotes"Paleobiology26 (3): 386–404। আইএসএসএন 0094-8373ডিওআই:10.1666/0094-8373(2000)026<0386:BPNGNS>2.0.CO;2 
  2. উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা: শৈলেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর:১৯৭৬, পৃঃ ২৫