শেখ সাইদ বিদ্রোহ
শেখ সাইদ বিদ্রোহ নামক বিদ্রোহটি খিলাফত ব্যবস্থার পুনপ্রবর্তনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়।[৭] শেখ সাইদ এতে নেতৃত্ব দেন এবং প্রাক্তন হামিদিয়া সৈনিক বলে পরিচিত প্রাক্তন উসমানীয় সেনারা এতে অংশ নেয়। এটি দুইটি কুর্দি গোষ্ঠী অংশ নেয়, এরা হল জাজা জনগোষ্ঠী ও কুরমানজি ভাষী কুর্দি জনগোষ্ঠী। বিদ্রোহটি মূলত জাজা জনগোষ্ঠী অংশ নেয় এবং পুরো জাজা অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী কুরমানজি অধ্যুষিত অঞ্চলে তা সমর্থন লাভ করে।[৮]
শেখ সাইদ বিদ্রোহ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: কুর্দি বিদ্রোহ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
তুরস্ক আলেভি গোত্র (হোরমেকান ও লোলান) | কুর্দি গোত্র | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কাজিম ইনানচ (থার্ড আর্মি) মুরসেল বাকু (সপ্তম করপস) নাজি এলদেনিজ (পঞ্চম করপস) | শেখ সাইদটেমপ্লেট:যুদ্ধবন্দী। পরবর্তীতে মৃত্যুদন্ড পান। | ||||||
শক্তি | |||||||
ফেব্রুয়ারি-মার্চ: ২৫,০০০ জন (১২,০০০ এর কম সংখ্যক সৈনিক সশস্ত্র ছিল; বাকিরা ছিল অস্ত্রহীন কৌশলগত সেনা)[১] এপ্রিল: ৫২,০০০ জন(২৫,০০০ জন সশস্ত্র সৈনিক)[২] | ১৫,০০০ জন[২] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
১৫,০০০-২০,০০০[৩] বা ৪০,০০০-২,৫০,০০০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত[৪] |
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাকুর্দি গোত্রীয় মিলিশিয়া দল আজাদিতে প্রাক্তন হামিদিয়া অফিসারদের প্রভাব ছিল। আর্মেনীয় ও কিজিলবাশদের নিয়ন্ত্রণের জন্য এদের ব্যবহার করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে কামাল আতাতুর্কের খিলাফত বিলুপ্তির প্রতি তুর্কি সমাজের অনেকেই অসন্তুষ্টি বিদ্রোহের কারণ ছিল। কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ব্রিটিশ সূত্র অনুযায়ী এটি কুর্দি জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ। এসময় ব্রিটিশরা তুর্কি ও খিলাফতের উভয়েরই বিরুদ্ধে ছিল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী আজাদি অফিসারদের এগারোটি বিষয় ক্ষোভ ছিল। কুর্দিদের সাংস্কৃতিক চাহিদার সাথে তুর্কিদের অন্যায্য ব্যবহার ছাড়াও আসন্ন কুর্দি বহিষ্কারও এতে জড়িত ছিল। মানচিত্রে কুর্দিস্তানের উল্লেখ না থাকা, কুর্দি ভাষা ও শিক্ষার ব্যাপারে কড়াকড়ি এবং কুর্দিদের অর্থে কুর্দি এলাকায় তুর্কি অর্থনৈতিক বিস্তারের অভিযোগ অনেকের ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শেখ সাইদ হামিদিয়া কমান্ডারদের বোঝাতে সক্ষম হন ও খিলাফত পুনরায় ফিরিয়া আনার জন্য লড়াই করতে সমর্থন লাভ করেন।[৯]
Certain among you have taken as a pretext for revolt the abuse by the governmental administration, some others have invoked the defence of the Caliphate,.
কারো কারো মতে কুর্দিস্তান একা সফল হতে পারবে না ভেবে ব্রিটিশদের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল।
ঘটনা
সম্পাদনাশেখ সাইদ তুরস্কের সব মুসলিমকে বিদ্রোহে অংশ নিতে আহ্বান জানান। বিদ্রোহে অংশ নেয়া অধিকাংশ গোত্রই জাজা গোষ্ঠীর ছিল। জরমাক ও হারকি নামক দুটি গোত্র সবচেয়ে কর্মঠ ও কার্যকর ছিল। অভিযোগ আছে যে কুরমানজিরা তেমন একটা অংশ নেয়নি। তাদের মধ্য থেকে হাতে গোনা হামিদিয়া নেতা বিদ্রোহে অংশ নেন। হামিদিয়াদের দ্বারা সাবেক আক্রমণের কথা মাথায় রেখে আলেভি গোত্রগুলোও বিদ্রোহ অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে।
মার্চের ৬-৭ তারিখ একটি বড় সংঘর্ষের সময় শেখ সাইদের সেনারা দিয়ারবাকির শহর অবরোধ করে। তাদের সাথে ৫,০০০-১০,০০০ সেনা ছিল।[১২][১৩] তারা শহরের চারটি গেটে একসাথে আক্রমণ করে। তবে তাদের সবকটি আক্রমণ তুর্কি গেরিসন মেশিনগান ও মর্টার গ্রেনেড ব্যবহার করে প্রতিহত করে। বিদ্রোহীরা পরের দিন সকালে পিছু হটে। এসময় শহরের চারপাশের এলাকা লাশে পরিপূর্ণ ছিল।[১২] দ্বিতীয় দফা একটি আক্রমণ ব্যর্থ হলে ১১ মার্চ অবরোধ তুলে নেয়া হয়।[১২]
মার্চের শেষের দিকে বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের অধিকাংশই শেষ হয়ে যায়। শেখ সাইদ হিনিসে ভালো পরিচিত থাকলেও তারা হিনিসের বেশি ভেতরে যেতে সক্ষম হয়নি। এসব ব্যর্থতার কারণে বিদ্রোহের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়া বাধাগ্রস্ত হয়।[১৪]
মার্চের শেষের দিকে বিদ্রোহের উত্থান সমাপ্ত হয়। মার্টিন ভন ব্রুইনেসেনের মতে তুর্কি কর্তৃপক্ষ ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও সেনাপ্রেরণের মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করে।[১৫]
বিদ্রোহের সময় তুর্কি সরকার পালু-বিনগোল এলাকায় প্লেন থেকে বোমাবর্ষণ করে। এলাজিগ সড়কের পাশের বিমানক্ষেত্র এসময় ব্যবহার করা হয়।[১৬]
ব্রিটিশ বিমান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বিদ্রোহ দমনে তুর্কি বিমান ব্যবহারের অল্প রিপোর্ট রয়েছে।[১৭] মসুলের ব্রিটিশ এয়ার কমান্ড এই রিপোর্ট তৈরী করে। তারা ইরাকের গোয়েন্দা তৎপরতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।[১৭]
বিদ্রোহের শুরুতে তুর্কিদের হাতে ৭টি প্লেনের একটি স্কোয়াড্রন ছিল। এদের মধ্যে ২টি ছিল কার্যক্ষম।[১৮] পরে আরো চারটি যুক্ত হয়। তুর্কি বিমান বাহিনী মোট ১১টি প্লেন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে যদিও মাত্র ৬টি কার্যক্ষম ছিল।[১৮]
ফলাফল
সম্পাদনাশেখ সাইদ ১৯২৫ সালের দিকে ধরা পড়েন। তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। খিলাফত ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য এটা কুর্দিদের দ্বারা সংঘটিত সর্বশেষ চেষ্টা ছিল। এই বিদ্রোহ তুরস্কের আলোচনার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং প্রাক্তন উসমানীয় প্রদেশ মসুল মেসোপটেমিয়ার ব্রিটিশ মেন্ডেটের অধীনে চলে যায়।
১৯২৭ সালে শেখ সাইদের ভাই শেখ আবদুর রহমান পালু ও মালাটয়ার তুর্কি গেরিসনে ধারাবাহিক আক্রমণ শুরু করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Robert W. Olson (১৯৮৯)। The Emergence of Kurdish Nationalism and the Sheikh Said Rebellion, 1880–1925। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 978-0-292-77619-7।
- ↑ ক খ Olson, 1989, page 107
- ↑ The Militant Kurds: A Dual Strategy for Freedom, Vera Eccarius-Kelly, page 86, 2010
- ↑ "(page 104)" (পিডিএফ)। ১২ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Martin van Bruinessen, "Zaza, Alevi and Dersimi as Deliberately Embraced Ethnic Identities" in '"Aslını İnkar Eden Haramzadedir!" The Debate on the Ethnic Identity of The Kurdish Alevis' in Krisztina Kehl-Bodrogi, Barbara Kellner-Heinkele, Anke Otter-Beaujean, Syncretistic Religious Communities in the Near East: Collected Papers of the International Symposium "Alevism in Turkey and Comparable Sycretistic Religious Communities in the Near East in the Past and Present" Berlin, 14-17 April 1995, BRILL, 1997, আইএসবিএন ৯৭৮৯০০৪১০৮৬১৫, p. 13.
- ↑ Martin van Bruinessen, "Zaza, Alevi and Dersimi as Deliberately Embraced Ethnic Identities" in '"Aslını İnkar Eden Haramzadedir!" The Debate on the Ethnic Identity of The Kurdish Alevis', p. 14.
- ↑ Ph.D, Hakan Ozoglu (২০১১-০৬-২৪)। From Caliphate to Secular State: Power Struggle in the Early Turkish Republic: Power Struggle in the Early Turkish Republic (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। আইএসবিএন 978-0-313-37957-4।
- ↑ Mehmed S. Kaya (2011), The Zaza Kurds of Turkey: A Middle Eastern Minority in a Globalised Society, I.B.Tauris, 15 Jun 2011. p. 64
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Viennot, Jean-Pierre (1974) Contribution á l'étude de la Sociologie et de l'Histoire du Mouvement National Kurde: 1920 á nos Jours. Paris, Institut Nationale des Langues et Civilisations Orientales. p.108
- ↑ White, Paul J. (১৯৯৫), "Ethnic Differentiation among the Kurds: Kurmancî, Kizilbash and Zaza", Journal of Arabic, Islamic & Middle Eastern Studies, 2 (2): 67–90
- ↑ ক খ গ Uğur Ümit Üngör (২০১২-০৩-০১)। The Making of Modern Turkey: Nation and State in Eastern Anatolia, 1913-1950। OUP Oxford। পৃষ্ঠা 125। আইএসবিএন 978-0-19-965522-9।
- ↑ Olson, 1989, page 202.
- ↑ Robert W. Olson (১৯৮৯)। The emergence of Kurdish nationalism and the Sheikh Said Rebellion, 1880-1925। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 115। আইএসবিএন 978-0-292-77619-7।
- ↑ van Bruinessen, Maarten Martinus (১৯৭৮)। Agha, Shaikh and State: On the Social and Political Organization of Kurdistan। Utrecht: University of Utrecht। আইএসবিএন 1-85649-019-X। (also London: Zed Books, 1992) [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ (Olson 2000, পৃ. 77)
- ↑ ক খ Die Welt des Islams। E.J. Brill.। ২০০০। পৃষ্ঠা 77।
- ↑ ক খ Olson, 1989, page 120.
- Olson, Robert W (১৯৮৯)। The Emergence of Kurdish Nationalism and the Sheikh Said Rebellion, 1880–1925। Austin: University of Texas Press। আইএসবিএন 0-292-77619-5। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৪।
- Olson, Robert W (মার্চ ২০০০)। "The Kurdish Rebellions of Sheikh Said (1925), Mt. Ararat (1930), and Dersim (1937–8): Their Impact on the Development of the Turkish Air Force and on Kurdish and Turkish Nationalism"। Die Welt des Islams। 40 (1): 67–94। ডিওআই:10.1163/1570060001569893।