শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ
শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ (Industrial process control বা সংক্ষেপে IPC) বা সরলভাবে প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ বলতে আধুনিক শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াতে উপস্থিত একটি ব্যবস্থাকে বোঝায়, যে ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বের মূলনীতিগুলিকে ও ভৌত শিল্প নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ কলনবিধির (অ্যালগোরিদম) সহায়তা নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াগুলির উপর নজরদারি করে, সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে ও সেগুলিকে কাম্যতম করে। শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করে যে কারখানার যন্ত্রগুলি যেন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে চালিত হয়ে কাঁচামালগুলিকে নির্ভরযোগ্যভাবে ও সর্বদা একই রকম উচ্চমানের চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তরিত করতে পারে ও একই সাথে শক্তির অপচয় হ্রাস ও ব্যয় সাশ্রয় করে, যে ফলাফলটি শুধুমাত্র মানুষের হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রণে মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়।[১]
শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তাত্ত্বিক পরিকাঠামোটি হল নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব, যা ব্যবস্থার গতিশীলতা বুঝে, ফলাফলের পূর্বাভাস দিয়ে ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল নকশা করে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য নিশ্চিত করতে কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে পুনর্নিবেশ ফাঁস, স্থিতিশীলতা বিশ্লেষণ ও নিয়ন্ত্রক নকশাকরণের মতো ধারণাগুলি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ব্যবস্থাটির ভৌত বাস্তবায়নটি স্বয়ংচালিত প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবং এর একাধিক উপাংশ আছে। প্রথমত, এক ঝাঁক সুবেদী গ্রাহক অবিরাম বিভিন্ন প্রক্রিয়া-সংশ্লিষ্ট চলরাশি (যেমন তাপমাত্রা, চাপ, ইত্যাদি) ও উৎপন্ন দ্রব্যের গুণগত মানের বিভিন্ন চলরাশি পরিমাপ করতে থাকে। একটি পূর্বলিখনযোগ্য যুক্তি নিয়ন্ত্রক (programmable logic controller বা PLC, অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও কম জটিল প্রক্রিয়ার জন্য) বা একটি বিতরণকৃত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Distributed control system বা DCS, বৃহৎ-মাপের বা ভৌগোলিকভাবে বিক্ষিপ্ত প্রক্রিয়াসমূহের জন্য) ঐ সুবেদী গ্রাহকদের দ্বারা সম্প্রচারিত উপাত্তগুলি বিশ্লেষণ করে, সেগুলিকে পূর্ব-সংজ্ঞায়িত স্থিতিবিন্দুগুলির সাথে তুলনা করে (এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কলনবিধি নামক কতগুলি নির্দেশমালা বা গাণিতিক প্রতিমান ব্যবহার করা হয়), এবং যদি ঐসব স্থিতিবিন্দু থেকে কোনও বিচ্যুতি ঘটে (যেমন তাপমাত্রা স্থিতিবিন্দু অতিক্রম করলে), তাহলে দ্রুত বাস্তবায়ক যন্ত্রাংশ যেমন কপাটিকা (উদাহরণস্বরূপ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শীতলকারক কপাটিকা), মোটর বা তপ্তকারক ব্যবহার করে সংশোধনমূলক উপযোজন সাধন করে ও এভাবে শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াটিকে আবার কাম্য ক্রিয়াসীমার মধ্যে ফেরত নিয়ে আসে। এভাবে পরিমাপ, তুলনা, নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্মূল্যায়নের একটি বিরতিহীন বদ্ধ-ফাঁস চক্র সৃষ্টি হয়, যা প্রক্রিয়াটির প্রতিষ্ঠিত সীমাস্থ মানগুলির মধ্যে বিদ্যমান থাকার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে। মানব-যন্ত্র আন্তঃক্রিয়াতল (HMI বা Human-Machine Interface) শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ফলক হিসেবে কাজ করে যার মাধ্যমে স্বল্পসংখ্যক মানব চালকের একটি দল প্রক্রিয়াটির উপর নজর রাখে এবং উপযোজনের ব্যাপারে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।[১] শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলি একটিমাত্র প্রক্রিয়া আধারের (শিল্প প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ধারণপাত্র যেখানে উপাদান মিশ্রণ, পৃথকীকরণ, বিক্রিয়া ও সংরক্ষণের কাজগুলি করা হয়) জন্য হতে পারে, কিংবা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাতে বহু হাজার নিয়ন্ত্রণ পুনর্নিবেশ ফাঁস দিয়ে তৈরি হতে পারে।
শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একাধিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করে। প্রথমত, গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলরাশিগুলির কঠিন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার মাধ্যমে এটি শক্তির ব্যবহার হ্রাস, অপচয় ন্যূনতমকরণ ও যন্ত্রপাতি বন্ধ থাকার সময়কাল কমানোর দ্বারা সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা ও অর্থসাশ্রয় সম্ভব করে। দ্বিতীয়ত এটি সর্বদা একই রকম ও উন্নত গুণমানের দ্রব্য নিশ্চিত করে, যার ফলে ভোক্তাক্রেতারা সন্তুষ্ট হয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়ে। তৃতীয়ত, এটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত সম্ভাব্য ত্রুটিবিচ্যুতি শনাক্ত করে মানব চালকদেরকে হুঁশিয়ার করে দেয়, ফলে অঘটন-দুর্ঘটনা, যন্ত্রবৈকল্য, প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ও ব্যয়বহুল বন্ধ-সময়কাল এড়ানো যায়। চতুর্থত বাস্তব সময়ে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ তথ্যের প্রবণতা ও আচরণগুলি বিশ্লেষণ করে প্রকৌশলীরা উপাত্ত-চালিত দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যৎ উন্নতির এলাকাগুলি চিহ্নিত করতে পারেন, নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলি আরও শাণিত করতে পারেন এবং উত্তরোত্তর উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন।[১]
শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলিকে বহু বিভিন্ন ধরনের শিল্পখাতে ব্যবহার করা হয়, যেগুলিতে সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।[২] মোটরযান শিল্পে, এগুলি ধাতু ঝালাই ও রঙ লাগানোর প্রক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করে একই রকম গুণমান রক্ষা করতে সাহায্য করে। খননকার্যে আকরিক চূর্ণকরণ ও পরিবাহক ফিতার (কনভেয়র বেল্ট) গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে। নদী বা সমুদ্রগর্ভের কর্দম-উদ্ধার (ড্রেজিং) কার্যে এটি শোষণচাপ, কর্দম-উদ্ধারকাজের গভীরতা ও তলানি নিষ্কাশন হার সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেটিকে দক্ষ ও টেকসই পরিবেশবান্ধব করে তোলে। কাগজের মণ্ড ও কাগজ উৎপাদনে এটিকে কাজে লাগিয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলিকে (যেমন পিএইচ/অম্লত্ব ও বিরঞ্জক ঘনমাত্রা) নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং কাগজের পাতার আর্দ্রতা ও শুষ্ককারক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে গুণমান স্থিতিশীল রাখা হয়। রাসায়নিক কারখানাতে এটি তাপমাত্রা, চাপ ও বিক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, যাতে নিরাপদে ও দক্ষভাবে রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদিত হয়। খনিজ তেল শোধনাগারে এটি ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে অশোধিত তেলকে পেট্রোল ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম দ্রব্যে রূপান্তরিত করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে এটির সাহায্যে স্থিতিশীল কর্মপরিচালনা পরিবেশ বজায় রাখা হয়, যা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অত্যাবশ্যক। খাদ্য ও পানীয় শিল্পে এটি পূর্বাপর একই রকম স্বাদ, নিরাপত্তা ও গুণমানে খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনে সাহায্য করে। ঔষধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলি জীবনরক্ষক ঔষধগুলি নিরাপদে ও দক্ষতার সাথে উৎপাদন করতে এর সাহায্য নেয়। বৃহৎ মাপের শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলি বৃহৎ পরিমাণের উৎপাদন ক্ষমতাবিশিষ্ট, জটিল শিল্প প্রক্রিয়াগুলির নকশার কাজ সম্ভব করেছে, যা অন্যথায় অর্থনৈতিকভাবে ও নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবায়নযোগ্য হত না।[৩]
শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ইতিহাস শুরু হয় প্রাচীনকালে, যখন সেচকাজ ও জলঘড়িতে জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য জলস্তর নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৮শ শতকে শিল্প বিপ্লবের সময় বাষ্পীয় ইঞ্জিনগুলিতে বয়লারের চাপের উপর সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ১৯৩০ সালে বায়ুচাপভিত্তিক ও বৈদ্যুতিন (ইলেকট্রনীয়) নিয়ন্ত্রক যেমন সমানুপাতিক-সমাকলজ-অন্তরজ নিয়ন্ত্রক (PID বা Proportional-Integral-Derivative controllers) অভূতপূর্ব উদ্ভাবন ছিল, যেগুলি আধুনিক নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বের বুনিয়াদ সৃষ্টি করে। ২০শ শতাব্দীর শেষভাগে একদিকে পূর্বলিখনযোগ্য যৌক্তিক নিয়ন্ত্রক (programmable logic controllers বা PLC) ও বিতরণকৃত নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার (distributed control systems বা DCS) আগমন ঘটে, অন্যদিকে অণুপ্রক্রিয়াজাতকারক বা মাইক্রোপ্রসেরর উদয় শিল্প প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে ও এর ফলে আরও বেশি জটিল নিয়ন্ত্রণ কলনবিধি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যন্ত্রীয় শিখন এই ক্ষেত্রটিতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে, বিশেষ করে উন্নত পূর্বাভাস প্রদান, বাস্তব সময়ে তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ কৌশলসমূহের কাম্যতমকরণ, আগেভাগে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি অভূতপূর্ব অবদান রাখবে। শিল্পখাতের বস্তসমূহের আন্তর্জাল (Industrial Internet of Things বা IIoT) কারখানাগুলিকে আন্তঃসংযুক্ত বাস্তুতন্ত্রে রূপান্তরিত করবে এবং এভাবে সমগ্র উৎপাদন শৃঙ্খল জুড়ে দূরবর্তী পরিবীক্ষণ/নজরদারি, বিকেন্দ্রীকৃত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তব-সময়ে তৎক্ষণাৎ কাম্যতমকরণ সম্ভব হবে। একই সাথে আন্তর্জালিক আক্রমণের (সাইবার আক্রমণ) বিরুদ্ধে শক্তিশালী, নিশ্ছিদ্র আন্তর্জালিক নিরাপত্তা (সাইবার নিরাপত্তা) ব্যবস্থাগুলি অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে। পরিবেশের উপর শিল্পখাতের নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম করতে দূষক নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস অঙ্গীভূতকরণের মতো কাজগুলি সাধিত হবে। উচ্চমাত্রায় দক্ষ প্রকৌশলীরা এইসব জটিল ব্যবস্থা নকশা, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এর পাশাপাশি মানব চালকেরা বুদ্ধিমান যন্ত্রগুলির সাথে একযোগে কাজ করবে, সেগুলিকে প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে ও দরকার হলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রথম দিকের বড় সাফল্য প্রায়শই জল নিয়ন্ত্রণ কলগুলির মাধ্যমে সাধিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার কতেসিবিওস জলঘড়িগুলির জলস্তর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভাসমান কপাটিকা উদ্ভাবন করেন। খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার হেরন আধুনিক শৌচাগারগুলিতে ব্যবহৃত পূরণকারী কপাটিকাগুলির মতো একটি জল কপাটিকা উদ্ভাবন করেন।[৪]
পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক উদ্ভাবনগুলিতে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলিকে কাজে লাগানো হয়। ১৬২০ সালে কর্নেলিস ড্রেবেল একটি দ্বি-ধাতব তাপস্থাপক উদ্ভাবন করেন, যা দিয়ে একটি চুল্লির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ১৬৮১ সালে দ্যনি পাপাঁ আবিষ্কার করেন যে কোন পাত্রের ভেতরের চাপ পাত্রের ঢাকনার উপরে ওজন বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।[৪] ১৭৪৫ সালে এডমান্ড লি বায়ুকলের কর্মদক্ষতা উন্নত করার জন্য পাখাপুচ্ছ প্রযুক্তি সৃষ্টি করেন; পাখাপুচ্ছ ছিল একটি অপেক্ষাকৃত ছোট বায়ুকল যেটিকে বৃহত্তর পাখাগুলির সাথে ৯০ ডিগ্রি কোণে স্থাপন করা হত, যাতে বায়ুকলের মুখ আগমনী বায়ুপ্রবাহের ঠিক মুখোমুখি তাক করে থাকে।
১৭৬০-এর দশকে শিল্প বিপ্লবের উদয়ের সময় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ উদ্ভাবনগুলির লক্ষ্য ছিল মানব যন্ত্রচালকদেরকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে। ১৭৮৪ সালে অলিভার এভান্স জলচালিত ময়দাকল সৃষ্টি করেন, যেটি বালতি ও স্ক্রুয়ের কনভেয়ারের মাধ্যমে পরিচালিত হত। ১৯১০ সালে হেনরি ফোর্ড একই তত্ত্ব প্রয়োগ করে সংযোজন প্রক্রম সৃষ্টি করেন, যাতে মোটরযান উৎপাদন প্রক্রিয়াতে মানুষের হস্তক্ষেপ হ্রাস পায়।[৪]
অবিরাম পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেবল ১৯২২ সালে এসে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো একটি আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ সূত্র সৃষ্টি করা হয়, যাকে বর্তমানে পিআইডি নিয়ন্ত্রণ বা ত্রৈরাশিক নিয়ন্ত্রণ নামে ডাকা হয়। রুশ-মার্কিন প্রকৌশলী নিকোলাস মিনর্স্কি এটি উদ্ভাবন করেন।[৫] মিনর্স্কি মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য স্বয়ংক্রিয়া জাহাজচালনা সম্পর্কে গবেষণা ও নকশা প্রণয়ন করছিলেন; তিনি জাহাজের একজন কর্ণধারের কাজ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেন। তিনি লক্ষ করেন যে কর্ণধার কেবলমাত্র বর্তমান গতিপথের ত্রুটি নয়, বরং অতীতের ত্রুটিসহ বর্তমান পরিবর্তনের হারের উপর ভিত্তি করেও জাহাজ চালিয়ে থাকে।[৬] মিনর্স্কি এইরূপে জাহাজ চালনার একটি গাণিতিক বিশ্লেষণ সম্পাদন করেন।[৭] মিনর্স্কির লক্ষ্য ছিল স্থিতিশীলতা, সাধারণ নিয়ন্ত্রণ নয়, যে কারণে সমস্যাটি তাৎপর্যমূলকভাবে সরল আকার ধারণ করেন। আনুপাতিক নিয়ন্ত্রণ ছোটখাটো গোলযোগের বিরুদ্ধে স্থিতিশীলতা দান করলেও একটানা গোলযোগ সামলানোর জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না, বিশেষ করে দমকা ঝোড়ো বাতাসের জন্য, যেটি সামলানোর জন্য একটি সমাকলজ রাশি যোগ করা আবশ্যক ছিল। শেষ পর্যন্ত একটি অন্তরজ রাশি যোগ করে স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Sanjoy Kumar Paul; Sandeep Kautish (মে ২৪, ২০২৪), Computational Intelligence Techniques for Sustainable Supply Chain Management, Elsevier, পৃষ্ঠা 146–147
- ↑ "A Guide To Statistical Process Control"। Red Meters (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৯।
- ↑ Bill Bolton (১৯৯৮), Control Engineering (2nd সংস্করণ), Longman Publishing Group;
- ↑ ক খ গ Young, William Y; Svrcek, Donald P; Mahoney, Brent R (২০১৪)। "1: A Brief History of Control and Simulation"। A Real Time Approach to Process Control (3 সংস্করণ)। Chichester, West Sussex, United Kingdom: John Wiley & Sons Inc.। পৃষ্ঠা 1–2। আইএসবিএন 978-1119993872।
- ↑ Minorsky, Nicolas (১৯২২)। "Directional stability of automatically steered bodies"। Journal of the American Society for Naval Engineers। 34 (2): 280–309। ডিওআই:10.1111/j.1559-3584.1922.tb04958.x।
- ↑ Bennett, Stuart (১৯৯৩)। A History of Control Engineering 1930-1955। London: Peter Peregrinus Ltd. On behalf of the Institution of Electrical Engineers। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 978-0-86341-280-6।
- ↑ Bennett, Stuart (১৯৯৬)। "A brief history of automatic control" (পিডিএফ)। IEEE Control Systems Magazine। 16 (3): 17–25। ডিওআই:10.1109/37.506394। ২০১৬-০৮-০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-২৫।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Walker, Mark John (২০১২-০৯-০৮)। The Programmable Logic Controller: its prehistory, emergence and application (পিডিএফ) (PhD thesis)। Department of Communication and Systems Faculty of Mathematics, Computing and Technology: The Open University। ২০১৮-০৬-২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-২০।