শিয়া–সুন্নি সম্পর্ক
শিয়া ও সুন্নি ইসলাম হলো ইসলামের দুটি প্রধান সম্প্রদায়। ৬৩২ খৃষ্টাব্দে ইসলামী নবী মুহাম্মদ (সা.) -এর মৃত্যুর পর হযরত আবু বকর খলিফা নির্বাচিত হলে কয়েকজন দাবি করে নবী মুহম্মদ ঐতিহাসিক গাদীর খুমের ভাষণে তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী ইবনে আবী তালিবকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করে যান। মুসলিম সম্প্রদায়ের খলিফা হিসেবে মুহাম্মদ সাঃ এর উত্তরাধিকার লাভ নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদ ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলশ্রুতিতে জামালের যুদ্ধ ও সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কারবালার যুদ্ধের পর এই বিরোধ কিছুটা কমে গেছে, যেখানে উমাইয়া খলিফা প্রথম ইয়াজিদের অধীনে হুসাইন ইবনে আলী ও তার পরিবার-পরিজন নিহত হন, এবং প্রতিশোধের স্পৃহা প্রারম্ভিক ইসলামী সম্প্রদায়কে দুভাগে বিভক্ত করে দেয়, যা বর্তমানে ইসলামী শিয়াবাদ নামে পরিচিত, ইসলামী শব্দটি ব্যবহারের কারণ হল যেন একে খ্রিস্টান শিয়াবাদ হতে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। [২]
শিয়া ও সুন্নিদের বর্তমান জনসংখ্যার অনুপাত নির্ণয় করা কঠিন। সূত্র অনুযায়ী বিভিন্ন পরিমাণের হলেও, গড় অনুমান অনুযায়ী বিশ্বের ৯০℅ মুসলিম হল সুন্নি আর ১০℅ মুসলিম হল শিয়া, যাদের বেশিরভাগই ১২ ইমাম প্রথার অনুসারী, বাকিরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত।[৩]
অধিকাংশ মুসলিম সম্প্রদায়েই সুন্নিরা হল সংখ্যাগরিষ্ঠ: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ও আরব বিশ্বের অন্যান্য অংশে। শিয়ারা যেসব দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ সেগুলো হল, ইরাক, বাহরাইন, লেবানন, ইরান ও আজারবাইজান, এছাড়াও তারা পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও কুয়েত্ে রাজনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু হিসেবপরিচিতিত।[৪] ইন্দোনেশিয়ায় বৃহত্তম সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠী বাস করে, যেখানে ইরানে বিশ্বের বৃহত্তম শিয়া (বারো ইমাম) জনগোষ্ঠী বাস করে। পাকিস্তানের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুন্নি জনগোষ্ঠী রয়েছে, যেখানে ভারত্ে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিয়া মুসলিম (বারো ইমাম) জনগোষ্ঠী। [৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩]
বর্তমানে, এই দুই গোষ্ঠীর ধর্মীয়চর্চা, ঐতিহ্য, প্রথার মাঝে পার্থক্য রয়েছে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফিকহর সাথে সম্পর্কিত। যদিও সকল কোরআন কে মেনে চলে।
সবচেয়ে বেশি শিয়া রয়েছে ইরানে। বিগত বছরগুলোতে, সুন্নি-শিয়া সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান হারে সাংঘর্ষিক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছিল,[১৪] বিশেষত ইরান-সৌদি আরব দলীয় বিরোধ। এছাড়াও পাকিস্তান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত সকল স্থানে আন্তঃদলীয় কোন্দল স্থায়ীরূপ লাভ করেছিল যা মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম বিভক্তির এটি অন্যতম কারণ।[১৫][১৬] বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, উদাহরণস্বরূপ বাহরাইনি অভ্যুত্থান, ইরাক যুদ্ধ[১৭][১৮][১৯] এবং স্বঘোষিত আইসিস এর প্রতিষ্ঠা, যা শিয়াদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কার্যক্রম চালু করেছিল।
কিন্তু ২০২৩ এর মার্চ মাসে চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসে সৌদি ও ইরান। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সংঘর্ষ হ্রাস, বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃগঠন, দূতাবাস স্থাপন ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল সহ নানান দিক বিবেচনায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা আগামীতে উক্ত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হয়।[১]
সুন্নি আকীদা
সম্পাদনাআল্লাহ সম্পর্কে
সম্পাদনাএকমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালক
সম্পাদনাইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ্ মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। একে তাওহিদে রুবুবিয়াহ বা রবের একত্ববাদ বলা হয়। কুরআনে বলা হয়েছে,
"তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা? তারা কি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না।"[কুরআন ৫২:৩৫–৩৬]
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ্ একমাত্র রব। রব (আরবি: ﺭﺏ) বলা হয় তাকে যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং মালিকানা যাঁর জন্য। কুরআনে বলা হয়েছে,
"...জেনে রাখুন, সৃষ্টি করা ও হুকুমের মালিক তিনি। বরকতময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক।"[কুরআন ৭:৫৪]
একমাত্র উপাস্য
সম্পাদনামুসলিমরা আরও বিশ্বাস করে আল্লাহ্ই একমাত্র ইলাহ্ তথা সত্য উপাস্য। একে তাওহীদে উলুহিয়াহ বা ইলাহের বা উপাস্যের একত্ববাদ বলা হয়। ইলাহ্ (আরবি: ﺍﻻﻟﻪ) অর্থ হলো: সম্মান ও বড়ত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যার ইবাদত করা হয়। আর ইবাদত বা উপাসনা সেই সব কাজকে বলা হয়, যা কোনো ইলাহ্-র সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তার অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়। কুরআনে বলা হয়েছে,
" আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।"[কুরআন ২:১৬৩]
মক্কার মূর্তিপুজারিরা লাত, মানাত, উজ্জাসহ বিভিন্ন মূর্তির উপাসনা করত। এগুলোর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
"এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ নাযিল করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেরা যা চায়, তার অনুসরণ করে।..."[কুরআন ৫৩:২৩]
নাম ও গুণাবলী
সম্পাদনাকুরআনে বা হাদীসে আল্লাহর অনেকগুলো সুন্দর নাম ও গুণের উল্লেখ রয়েছে। মুসলিমরা আল্লাহ্-র নাম ও গুণগুলোর কোনোটি অস্বীকার করে না, সৃষ্টবস্তুর সাথে সাদৃশ্য দেয় না, গুণগুলোর ধরন নির্ধারণ করে না।[২০] এই সকল নাম ও গুণ একমাত্র আল্লাহকে সাব্যস্ত করাকে তাওহীদে আসমা ওয়া সিফাত বা নাম ও গুণের একত্ববাদ বলা হয়।
ফেরেশতাদের সম্পর্কে
সম্পাদনাইসলামি বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূর বা আলো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত আছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
"তারা অহঙ্কারবশতঃ তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা ক্লান্তও হয় না।"[কুরআন ২১:১৯–২০]
হাদীস অনুসারে জিব্রাইলের দিগন্ত জুড়ানো ছয়শত ডানা রয়েছে। কয়েকজন ফেরেশতার কাজ সম্পর্কে হাদীসে জানা যায়। যেমন- ওহী বহনের দায়িত্বে আছেন জিব্রাইল, শিংগায় ফুঁ দেওয়ার দায়িত্বে আছেন ইস্রাফিল, বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে আছেন মিকাইল, জাহান্নামের দায়িত্বে আছেন মালিক, মৃত্যুর দায়িত্বে আছেন মালাকুল মাউত।[২১] এছাড়াও মুসলিমরা বিশ্বাস করে প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে দুইজন করে ফেরেশতা থাকে। এ ফেরেশতাদ্বয় ব্যক্তির আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করেন।
নবী-রসূলদের সম্পর্কে
সম্পাদনাইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির জন্য একজন মানুষকে রাসূল (বার্তাবাহক) করে পাঠিয়েছেন যারা তাদেরকে তাওহীদের আহ্বান জানান। আল্লাহ তাদেরকে যে বাণী দিয়ে প্রেরণ করেছেন তারা তার কোনো অংশ গোপন বা পরিবর্তন করেননি। ভিন্ন রাসূলের ক্ষেত্রে বিধিবিধান ও আইন-কানুন ভিন্ন হতে পারে। এক রাসূলের উম্মতের উপর যে ইবাদাত ফরজ করা হয়েছে তা অন্য রাসূলের উম্মতের উপরে ফরজ করা হয়নি। আবার এক রাসূলের উম্মতের উপরে যে বিষয়গুলো হারাম করা হয়েছে তা অন্য রাসূলের উম্মতের জন্য হয়তো হালাল করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে রাসূলদের মধ্যে কারো কারো নাম জানা যায়। যেমন- মুহাম্মদ, ঈসা, দাউদ, মূসা, ইব্রাহিম, নূহ। তবে সব নবী-রাসূলদের নাম ও তাদের বর্ণনা জানানো হয়নি।[২২]
কুরআন অনুসারে সর্বশেষ রাসূল হচ্ছেন মুহাম্মদ।[২৩] ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ তাকে অন্য নবীদের উপর বেশ কিছু বিশেষত্ব দিয়েছেন। তাকে সমস্ত জিন ও মানুষের নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন।[২৪]
আসমানী গ্রন্থ সম্পর্কে
সম্পাদনামুসলিমরা বিশ্বাস করে, আসমানী কিতাবসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে,
"কোনো মানুষের এ মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম, পর্দার আড়াল অথবা কোন দূত পাঠানো ছাড়া। তারপর আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান তাই ওহী প্রেরণ করেন। তিনি তো মহীয়ান, প্রজ্ঞাময়।"[কুরআন ৪২:৫১]
তাওরাতের ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর আমি তার জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক বিষয়ের উপদেশ এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।"[কুরআন ৭:১৮৫]
কিতাবসমূহের মধ্যে কয়েকটির নাম কুরআনে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কুরআন, তওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, সহিফায়ে ইব্রাহিম ও সহিফায়ে মূসা।[২৫]
মুসলিমদের বিশ্বাস অনুসারে, শেষ আসমানী কিতাব কুরআন পূর্বের কিতাবসমূহের সত্য বিষয়গুলোর সত্যায়ন করে, ঐ কিতাবগুলোতে যেসব বিকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে।
তাকদীর সম্পর্কে
সম্পাদনাএ মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বজ্ঞান অনুসারে সেসব কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন এরূপ বিশ্বাসকে তাকদীর বলা হয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করে,
- আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে জানেন এবং তিনি লওহে মাহফুজে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে সবকিছু লিখে রেখেছেন।
- কোনো কিছুই আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে ঘটে না।
- সবকিছুর জাত-বৈশিষ্ট্য আল্লাহরই সৃষ্টি।
- মানুষের ইচ্ছা ও ক্ষমতা আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার অনুবর্তী।
আখিরাত/পরকাল সম্পর্কে
সম্পাদনামুসলিমরা বিশ্বাস করে, পার্থিব জীবন শেষ হয়ে মৃত্যু ও কবর জীবনের মাধ্যমে অন্য জগৎ শুরু হবে। একসময় কিয়ামত সংঘটিত হবে, তারপর পুনরুত্থান, হাশর ও হিসাব-নিকাশের পর ফলাফল প্রাপ্ত হয়ে জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে।
কবর
সম্পাদনাইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তাকে তার রব, দীন ও শেষনবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন করা হবে। মানুষ তাদের কর্ম অনুসারে কবরে শাস্তি বা শান্তি ভোগ করবে।[২৬] মৃত ব্যক্তি কবর জীবনের শাস্তি অথবা শান্তি প্রাপ্ত হবে, যদিও তাকে ভূগর্ভস্থ করা না হয়।
কিয়ামতের পুর্বাভাস
সম্পাদনাইসলাম অনুসারে কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের পূর্বে এর পুর্বাভাস বা আলামত প্রকাশ পাবে। আলেমগণ এ আলামতগুলোকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন:
1. ছোট আলামত: ছোট পুর্বাভাসগুলোর মধ্যে রয়েছে - ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, বড় বড় অট্টালিকা নিয়ে রাখালদের গর্ব করা, নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, অধিক হত্যা হওয়া, ব্যভিচার ও অন্যায় কাজ অধিক মাত্রায় হওয়া, নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ, ইউফ্রেটিস নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় আবিষ্কৃত হওয়া ইত্যাদি।
2. বড় আলামত: বড় পুর্বাভাস দশটি। যেগুলো এখনো প্রকাশিত হয় নি। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী ও দাজ্জালের আগমন ঘটবে। ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। তিনি খৃষ্টানদের ক্রুশ ভেঙ্গে দিবেন, দাজ্জাল ও শুকর হত্যা করবেন। জিযিয়া করের আইন রহিত করবেন। ইসলামি শরী‘আত অনুসারে বিচার পরিচালনা করবেন। একসময় ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে। তাদের ধ্বংসের জন্য তিনি দুআ করবেন, তারপর তারা মারা যাবে। তিনটি বড় ভূমিকম্প হবে। পূর্বে একটি, পশ্চিমে একটি, জাযিরাতুল আরবে একটি। আকাশ থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া নেমে এসে সকল মানুষকে ঢেকে নিবে। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হবে। একটি অদ্ভুত চতুস্পদ জন্তু বের হবে। ইয়ামানের আদন থেকে ভয়ানক আগুন বের হয়ে মানুষদের শামের দিকে নিয়ে আসবে।[২৭]
কিয়ামত, হাশর, হাউয
সম্পাদনাইসলামি আকীদা অনুসারে, ইসরাফীল শিঙ্গায় ফুৎকার দিলে কিয়ামত হবে, অর্থাৎ বিশ্বজগৎ ধ্বংস হবে। প্রথম ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ যা জীবিত রাখবেন তাছাড়া সকল সৃষ্টজীব মারা যাবে। দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত সৃষ্টজীবের আর্বিভাব হয়েছিল, তারা সকলেই জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে।[২৮]
এরপর তাদের হিসাব-নিকাশের জন্য ময়দানে একত্রিত করা হবে। এই একত্রিত করাকে হাশর বলা হয়। ময়দানে অবস্থানকালে সূর্য তাদের নিকটবর্তী হবে। এ উত্তপ্ত ও কঠিন অবস্থান দীর্ঘ হওয়ায় শরীর থেকে নির্গত ঘামে হাবু-ডুবু খাবে তাদের (ভালো-মন্দ) কর্ম অনুপাতে।[২৯]
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, হাউয নামের একটি সুপ্রশস্ত পানির ধারা আল্লাহ্ নবীকে হাশরের মাঠে দান করেছেন। হাউযের পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা, মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি, মিশকের চেয়ে সুগন্ধি। যে ব্যক্তি তা থেকে একবার পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।[৩০]
শাফায়াত
সম্পাদনামানুষ বিচার দিবসের ভয়াবহ বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে তাদের রবের নিকট সুপারিশ পেশ করার চেষ্টা করবে। শেষনবী তাদের জন্য সুপারিশ করবেন। কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা করা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করা হবে। নবী-রাসুল, ফেরেশতা ও নেককার ব্যক্তিরা সুপারিশ করার অনুমতি পাবে। কুরআন ও সিয়াম সুপারিশ করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ আছে। যে ব্যক্তিদের প্রতি স্বয়ং আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন, তাদের ছাড়া অন্য কারো জন্য কেউ সুপারিশ করবে না[৩১]।
মীযান, পুল সিরাত, কানত্বারাহ্
সম্পাদনাআল্লাহ বিচার দিবসে মীযান স্থাপন করবেন, বান্দাদের আমল মাপার ও তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্য।[৩২] এর দুটি পাল্লা ও রশি রয়েছে।
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী পুল সিরাত হলো জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুল, যা অন্ধকারাছন্ন ভয়ের পথ। এর উপর দিয়ে মানুষ জান্নাতের দিকে অতিক্রম করবে। কেউ অতি দ্রুত অতিক্রম করবে আবার কেউ অনেক ধীর গতিতে তাদের কর্ম অনুসারে। পুল সিরাতের দুই ধারে হুকের মত অসংখ্য কাঁটা থাকবে। পুল সিরাত হবে তরবারীর চেয়ে ধারালো, চুলের চেয়ে সূক্ষ্ম ও পিচ্ছিল জাতীয়। অনেকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষিপ্ত হবে।[৩৩]
মুমিনেরা পুলসিরাত অতিক্রম করে কানত্বারাতে অবস্থান করবে। এখানে জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে একে অপরের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে পরিশুদ্ধ হবে। এরপর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।[২৭]
জান্নাত, জাহান্নাম
সম্পাদনামুসলিমরা বিশ্বাস করে জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে এবং সর্বদা থাকবে। জান্নাতবাসীদের নি‘আমত শেষ হবে না, অনুরূপ জাহান্নামীদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ চিরস্থায়ী শাস্তির ফায়সালা করেছেন তার শাস্তি কখনও শেষ হবে না।
ইসলাম অনুসারে, জান্নাত হলো অতিথিশালা, যা আল্লাহ মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। সেখানে রয়েছে প্রবাহিত নদী, সুউচ্চ কক্ষ, মনোলোভা রমণীগণ। আরো রয়েছে এমন সব সামগ্রী যা কোনো দিন কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কর্ণ শ্রবণ করে নি, আর কোনো মানুষের অন্তরেও কোনো দিন কল্পনায় আসে নি। জান্নাতে মুমিনদের জন্য সব চাইতে বড় নি‘আমত হলো আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখা। সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হল, জান্নাতুল ফিরদাউস আল-আ‘লা। এর ছাদ হলো আল্লাহর ‘আরশ। জান্নাতের সুগন্ধি চল্লিশ বৎসর দূরত্বের রাস্তা থেকে পাওয়া যাবে। জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, প্রত্যেক দরজার পার্শ্বের দৈর্ঘ্য ‘মক্কা’ থেকে ‘হাজর’ এর দূরত্বের সমান। জান্নাতে নূন্যতম মর্যাদার অধিকারী যে হবে তার জন্য দুনিয়া ও আরো দশ দুনিয়ার পরিমাণ জায়গা হবে।
আর জাহান্নাম হল শাস্তির ঘর যা আল্লাহ কাফির ও অবাধ্যদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন। তার পাহারাদার হবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় ফিরিশতারা। কাফিরদের খাদ্য হবে যাক্কুম (কাঁটাযুক্ত) আর পানীয় হবে পুঁজ, দুনিয়ার আগুনের তুলনায় ৭০ গুণ তাপমাত্রার আগুনে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। জাহান্নামের সাতটি দরজা হবে। [২৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Badruddīn, Amir al-Hussein bin (১৮ ডিসেম্বর ২০০৮)। The Precious Necklace Regarding Gnosis of the Lord of the Worlds। Imam Rassi Society।
- ↑ https://www.bbc.com/news/world-middle-east-16047709
- ↑ "Religions"। CIA World Factbook। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৯।
- ↑ "Azerbaijan"। CIA Factbook। ৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৯।
- ↑ "ভারত – ইরান সম্পর্ক: অভিসারিত স্বার্থ না ভাসমান সমীকরণ"। Institute for Defence Studies and Analyses। ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১০।
- ↑ "ওবামার অগ্রগতি"। দ্য ট্রিবিউন। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১০।
- ↑ "সাম্রাজ্যবাদ এবং বিভাজন ও শাসন নীতি"। Boloji। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১০।
- ↑ "আহমাদিনেজাদ আসছেন, এনএসএ বলছে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি ইরানের প্রতি অন্যায় করা হয়"। Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১০।
- ↑ পরাশর, সচিন (১০ নভেম্বর ২০০৯)। "ভারত ও ইরান পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নিবে"। The Times of India। ৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১০।
- ↑ জাহানবেগলু, রামিন (১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "আকাঙ্খিত শক্তি এবং পুরনো নতুন বন্ধুত্ব"। The Times of India। ৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১০।
- ↑ মেহতা, বিনোদ (২ সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "ভারতের নম্র প্রত্যাখ্যান"। BBC NEWS। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১০।
- ↑ "ভারত ইরান সংস্কৃতি"। Tehran Times। ২৩ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১০।
- ↑ "ভারতকে তার প্রবাসের সাথে সংযুক্ত করা"। Overseas Indian। ২২ এপ্রিল ২০০৮। ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১০।
- ↑ "The Sunni-Shia Divide"। ৮ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৯।
- ↑ "Ishtiaq Ahmed on Pakistan movement"। lu.se। ১৮ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Sunnis and Shiites"। scribd.com।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Nasr, Vali 2006, p.106
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Iraq 101: Civil War"। Mother Jones।
- ↑ Arango, Tim; Anne Barnard; Duraid Adnan (১ জুন ২০১৩)। "As Syrians Fight, Sectarian Strife Infects Mideast"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৩।
- ↑ "আল্লাহর প্রতি ঈমান"। ইসলামকিউএ.ইনফো।
- ↑ "ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান"। ইসলামকিউএ.ইনফো।
- ↑ কুরআন ৪০:৭৮
- ↑ কুরআন ৩৩:৪০
- ↑ "রাসূলদের প্রতি ঈমান"। ইসলামকিউএ.ইনফো।
- ↑ "আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমান"। ইসলামকিউএ.ইনফো।
- ↑ "মিশকাতুল মাসাবিহ, ১৩১"। ihadis.com।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ইলমী গবেষণা ডীনশীপ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা (২০০৬)। "পঞ্চম রুকন : শেষ দিবসের ওপর ঈমান"। ঈমানের রুকনসমূহ। মোহাম্মাদ ইবরাহীম আবদুল হালীম কর্তৃক অনূদিত। ইসলাম হাউজ।
- ↑ কুরআন ৩৯:৬৮
- ↑ "রিয়াদুস সলেহিন, ৪০৭"। ihadis.com।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;t-qpc
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ কুরআন ২১:২৮
- ↑ কুরআন ২১:৪৭
- ↑ "সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪২৮০"। ihadis.com।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Kepel, Gilles (২০০২)। Jihad: The Trail of Political Islam। Harvard University Press। আইএসবিএন 9780674010901।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Nasr, Hossein (১৯৭২)। Sufi Essays। Suny press। আইএসবিএন 978-0-87395-389-4।
- The Arab Shia: The Forgotten Muslims, by Graham E. Fuller and Rend Rahim Francke. New York: Saint Martin's Press, 1999, আইএসবিএন ০-৩১২-২৩৯৫৬-৪
- Shi'a Islam, by Muhammad Husayn Tabatabaei and Hossein Nasr, SUNY Press, 1979. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭৩৯৫-২৭২-৯
- Saudi Clerics and Shia Islam, by Raihan Ismail, Oxford University Press, 2016. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-০২৩৩৩১-০
- Don’t Fear the Shiites: The Idea of a Teheran-Controlled »Shiite Crescent« over the Greater Middle East is at Odds with Reality, by Michael Bröning. In: International Politics and Society, 3/2008, pp. 60–75.
- Here Are Some of the Day-To-Day Differences Between Sunnis and Shiites. Azadeh Moaveni. Huffington Post, 25 June 2014
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |