শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩২ - ০৮ আগস্ট, ২০০৯) একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও কালজয়ী গীতিকার ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগতে যাঁরা অসাধারণ গানের বাণী সাজিয়ে উপহার দিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম হলেন শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।[১] তিনি বাংলা সঙ্গীতের তাবড় - তাবড় শিল্পীদের জন্যই লিখতেন। তাঁর গানের ছন্দ, তাল ও বাণীতে আজও মুগ্ধ বাঙালি।
শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৮ আগস্ট ২০০৯ | (বয়স ৭৬)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পেশা | গীতিকার |
পরিচিতির কারণ | গীতিকার, সুরকার |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাশিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের খুলনা শহরে। পিতা শচীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশ অফিসার ও মাতা স্বদেশী আন্দোলনের যোদ্ধা রাধারাণী দেবী। তার স্কুলের পড়াশোনা স্থানীয় স্কুলেই। দেশভাগের সময় দাঙ্গায় বাড়িঘর সহায়-সম্বল ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন রিফিউজি হয়ে। আশ্রয় জোটে দক্ষিণ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিক ও চিত্র-গ্রাহিকা দিদি শিবানী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা শুরু করে স্নাতক হন। কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয় খানপুর স্কুলে সামান্য মাইনের শিক্ষকতার চাকরি পান। কিন্তু দিদি শিবানী চট্টোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু করেন আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়, দেশ, বসুমতীসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। কিছু চল্লিশ থেকে ষাট দশকের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রভাবিত হলেন।
সঙ্গীত জীবন
সম্পাদনাপ্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী অপরেশ লাহিড়ীর প্রেরণায় "ক্রান্তি শিল্পী সংঘ" এর জন্য গান লিখে খ্যাতি লাভ করেন। পরে এক সাহিত্য সভায় কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রর সাথে সাক্ষাতের পর তারই সহায়তায় আকাশবাণী কলকাতার তালিকাভুক্ত গীতিকার হন তিনি। এরপর এইচ.এম.ভি থেকে প্রকাশিত হয় সনৎ সিংহের কণ্ঠে গীত তার রচিত জনপ্রিয় গান - "সরস্বতী বিদ্যেবতি তোমায় দিলাম খোলা চিঠি"। তার কবিতা তথা গানে সাধারণ মানুষের সমস্যা উঠে এসেছে। অপরেশ লাহিড়ী, ভূপেন হাজারিকা,ভি.বালসারা,ইলা বসু মান্না দে'র সঙ্গে তার কাজ প্রশংসনীয়। গীতিকার সুনীলবরণের কথায় -
" শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণ ছিল আলাদা স্টাইলে গান লেখার। ... ও আদর্শের কাছে কখনো মাথা নত করেনি। নির্বাচিত শিল্পী ছাড়া কারুর জন্য গান লেখেননি।"
কবির জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ তথা নিজস্ব সংগীত সংগ্রহ " গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা" - তে আড়াই শতাধিক সংগীত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া তার রচিত নাটকের সংগ্রহ 'নাটক সংগ্রহ' নামে একটি গ্রন্থ আছে। চলচ্চিত্রের জন্য গান ও আধুনিক বাংলা গান ছাড়াও চিত্রনাট্য ও নাটক রচনা করেছেন তিনি।
ইলা বসু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, রুণা লায়লা, রুমা গুহঠাকুরতা, কিশোরকুমার, অংশুমান রায়, মান্না দে,ভূপেন হাজারিকা লতা মঙ্গেশকর সহ বহুস্বনামধন্য শিল্পীদের সুললিত কণ্ঠ-মাধুর্যে কালজয়ী হয়েছে তার রচিত গানগুলি। কয়েকটি সেরূপ কালজয়ী গানের উল্লেখ করা হল -
- মান্না দে র কণ্ঠে -
- 'ভারত আমার ভারতবর্ষ,স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো'
- 'ওরে আমার ভালবাসার ইছামতী রে'
- গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে-
- 'মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা'
- ইলা বসুর কণ্ঠে -
- 'কত রাজপথ জনপথ ঘুরেছি'
- ' আকাশের সিঁড়ি বেয়ে'
- রুণা লায়লার কণ্ঠে-
- 'গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা'
- পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে -
- 'শত নামে কত জনে'
- সনৎ সিংহ'র কণ্ঠে-
- 'সরস্বতী বিদ্যেবতী তোমায় দিলাম খোলা চিঠি'
- রুমা গুহঠাকুরতার কণ্ঠে-
- 'একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে'
- কিশোর কুমারের কণ্ঠে-
- অংশুমান রায়ের কণ্ঠে-
- 'বাজে না জীবনের এই বীণা'
- 'আমার ব্যাটার বিয়া দিবো সময় হয়েছে'
- 'ময়লা কাগজ কুড়ানো ছেলে'
- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে-
- 'এই কি পৃথিবী সেই'
- ঊষা উথুপের কণ্ঠে-
- 'এই তো বেশ আছি একেলা'
- 'আমার কবিতা ছবি আঁকে সঞ্চিত ব্যথা'
- ভূপেন ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে-
- 'সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল'
- 'বিস্তীর্ণ দুপারে'
- 'আমি এক যাযাবর'
- লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে-
- 'ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো'
- সমবেত কণ্ঠে-
- 'ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম'(ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়ার)
- 'তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা'
সম্মাননা
সম্পাদনাকালজয়ী গানের এই গীতিকারের সম্মানে সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার সৌজন্যে ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি আবক্ষ তাম্রমূর্তি স্থাপন করা হয়। মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করেন গীতিকারের ভাগিনেয় তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।[২]
জীবনাবসান
সম্পাদনাশিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৮৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "work life news"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২০।