যে সমস্ত পাখি খাদ্য সংগ্রহের জন্য তাদের প্রখর ইন্দ্রিয়শক্তির (বিশেষত দৃষ্টিশক্তি) সাহায্যে শিকার ধরে, তাদের শিকারী পাখি (ইংরেজি: Bird of prey বা Raptor) বলে। এরা প্রধানত মেরুদণ্ডী প্রাণী শিকার করে। এমনকি অন্যান্য পাখিও এরা শিকার করে খায়। এদের শারীরিক গঠন অন্যসব পাখির তুলনায় একদম অন্যরকম। এদের মজবুত শক্তিশালী নখরঠোঁট শিকারের চামড়া ও মাংস ছেঁড়ার উপযোগী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় আকারে বড় হয়। শিকারী জীবন-যাপনের কারণে বেশিরভাগ সময়ে এরা বাস্তুতন্ত্রে সর্বোচ্চ খাদক হিসেবে আসীন থাকে।

শক্ত, বাঁকানো মজবুত ঠোঁট শিকারী পাখিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

পক্ষীজগতে বহু পাখিই আংশিক বা পুরোপুরি শিকারী। কিন্তু পক্ষীবিজ্ঞানে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট বর্গগোত্রের অন্তর্গত পাখিদেরই শিকারী পাখি বলা হয়।

সংজ্ঞা

সম্পাদনা
 
শিকাররত ধলাপেট সিন্ধুঈগল

সাধারণভাবে যেসব পাখি খাবারের জন্য শিকার করে, তাদের শিকারী পাখি বলে। এমনকি পোকামাকড় শিকার করে এমন পাখিদেরও শিকারী পাখি বলা হয়।[] প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের পাখি, যারা ছোট প্রাণী, মাছ বা পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে, তারা শিকারী পাখি নয়। পক্ষীবিজ্ঞানে যেসব পাখির শিকার শনাক্ত করার জন্য প্রখর দৃষ্টিশক্তি, শিকার ধরার জন্য নখরযুক্ত শক্তিশালী পা ও মাংস ছেঁড়ার জন্য বাঁকানো ঠোঁট থাকে, তাদের শিকারী পাখি বলে। এদের বাঁকানো নখগুলো শিকার ধরা ও মারার উপযোগী।[] শিকারী পাখিরা তুলনায় বড় আকারের মেরুদণ্ডী প্রাণী শিকার করে। কিছু শিকারী পাখি অনিয়মিত শবভোজী, অর্থাৎ জীবনধারণের জন্য আংশিকভাবে মৃত পশু-পাখির উপর নির্ভরশীল। আবার কোন কোন শিকারী পাখি সম্পূর্ণ শবভোজী; যেমন- শকুনকনডর। শিকারী পাখির তালিকা থেকে গঙ্গা কবুতর, গাঙচিলসারসজাতীয় পাখিরা বাদ পড়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এসব পাখি শিকার ধরার জন্য কেবল ঠোঁট ব্যবহার করে, নখর ব্যবহার করে না। একই কারণে পাখিখেকো জলদস্যূ পাখি বা জেগার, মৎস্যভোজী পেঙ্গুইন এবং মাংসাশী কুকাবুরা শিকারী পাখি নয়।

 
বিভিন্ন জাতের শিকারী পাখি: (উপর থেকে নিচে) ল্যামারগিয়ার (নতুন বিশ্বের শকুন), পুরাতন বিশ্বের শকুন, ঈগল, মাঝারি ঈগল, তিসাবাজ, কাপাসি, চিল, ছোট চিল, শাহিন ও শিকরে

ইংরেজি raptor শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ল্যাটিন rapere থেকে, যার অর্থ জোর করে ছিনিয়ে নেওয়াদিবাচর শিকারী পাখিদেরই প্রধানত raptor বলা হয়।

শ্রেণিবিভাগ

সম্পাদনা

পক্ষীজগতের মোট ছয়টি গোত্রের সদস্যরা শিকারী পাখি হিসেবে চিন্হিত। এই ছয়টি গোত্রগুলো আবার দিবাচর ও নিশাচর এই দুই ভাগে বিভক্ত।

দিবাচর শিকারী পাখি

সম্পাদনা

দিবাচর শিকারী পাখির চারটি গোত্রই সিকোনিফর্মিস (মতান্তরে, ফ্যালকনিফর্মিস বা অ্যাক্সিপিট্রিফর্মিস) বর্গের অন্তর্গত। গোত্র চারটি হল:

নিশাচর শিকারী পাখি

সম্পাদনা

নিশাচর শিকারী পাখির দু'টি গোত্রই স্ট্রিগিফর্মিস বর্গের অন্তর্গত। এরা সবাই প্যাঁচা। গোত্র দু'টি হল:

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Brown, Leslie (১৯৯৭)। Birds of Prey। Chancellor Press। আইএসবিএন 1-85152-732-X 
  2. Perrins, Christopher, M; Middleton, Alex, L. A., সম্পাদকগণ (১৯৮৪)। The Encyclopaedia of Birds। Guild Publishing। পৃষ্ঠা 102। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা