শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (১০ জানুয়ারি ১৯৩৯[১]– ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২)[২] যিনি এসএম হোসেন নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বাংলাদেশের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী।[৩] তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা ভাষণ দেন।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন | |
---|---|
বাংলাদেশের ৮ম উপ-প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২০ নভেম্বর ১৯৮৭ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ | |
পূর্বসূরী | মওদুদ আহমেদ |
উত্তরসূরী | পদ বিলুপ্ত |
এলজিআরডি মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৯ জুলাই ১৯৮৬ – ৬ আগস্ট ১৯৮৮ | |
পূর্বসূরী | নাজিউর রহমান |
উত্তরসূরী | কে.এম. আমিনুল ইসলাম |
জাতীয় সংসদ উপনেতা | |
কাজের মেয়াদ ২৪ নভেম্বর ১৯৯৬ – ২৪ নভেম্বর ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | কাজী জাফর আহমেদ |
উত্তরসূরী | একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী |
ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৭ই মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬ | |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্টি |
উত্তরসূরী | এম হামিদুল্লাহ খান |
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৭ মে ১৯৮৬ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ | |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্টি |
উত্তরসূরী | একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী |
রংপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ – ৩১ জুলাই ১৯৯৫ | |
পূর্বসূরী | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
উত্তরসূরী | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৯৬০ – ১৯৬৩ | |
পূর্বসূরী | রফিকুল্লাহ চৌধুরী |
উত্তরসূরী | কে এম ওবায়দুর রহমান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | দোগাছি, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, (বর্তমান বাংলাদেশ) | ১০ জানুয়ারি ১৯৩৯
মৃত্যু | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৩)
সমাধিস্থল | বনানী কবরস্থান |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | সালেহা হোসেন |
সন্তান | ১ ছেলে ১ মেয়ে |
পিতামাতা | আহমেদ আলী (পিতা) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী |
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৪]
তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজনৈতিক জীবনে ১৯ বার কারাবরণ করে ২২ বছর জেল খেটেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি কারাগারের পাখি হিসেবে পরিচিত।[৫]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাশাহ মোহাজ্জেম হোসেন ১০ জানুয়ারি ১৯৩৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের শ্রীনগরের দোগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আহমেদ আলী।
তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরীজ হাই স্কুল থেকে এসএসসি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন।
তার স্ত্রী সালেহা হোসেন। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে আমেরিকায় প্রবাসী রানা এবং মেয়ে দিনা।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণের কারণে নবম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় প্রথম কারাবরণ করেন।[৫] ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।[৬]
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন ঢাকা-৫ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর হতে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম চীফ হুইপ নির্বাচিত হন।[৭]
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিক্রমপুরের লৌহজং শ্রীনগর এলাকা তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৮] তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী ছিলেন।[৯]
ডেমােক্রেটিক লীগ এবং জনদল
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৭৬ সালে ডেমােক্রেটিক লীগ এবং ১৯৮৩ সালে জনদল নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
জাতীয় পার্টি
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৮৪ সালে হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়ামের সদস্য নির্বাচিত হন পরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ৯ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ৬ আগস্ট ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এলজিআরডিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী তিনি ২০ নভেম্বর ১৯৮৭ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও রংপুর-৬ আসনের হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেড়ে দেয়া আসনে সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি অংশ নিয়ে পরাজিত হন। জাতীয় পার্টি থেকে তিনি বহিষ্কার হন।
বিএনপি
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন।[১০] তিনি দলটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।[১১]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর হতে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে কাজ করেন। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে টানা আড়াই ঘণ্টা ভাষণ দেন।[১২][১৩][১৪]
সমালোচনা
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের রায়ে তিনি খালাস পান।[১৩]
গ্রন্থাবলী
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেনর লিখিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে বলেছি বলছি বলব, ছাব্বিশ সেল, না বলেই নয়। [১৫]
মৃত্যু
সম্পাদনাশাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[১২][১৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা: ড. কামাল ছাড়া বেঁচে নেই কেউ | Purboposhchimbd"। Purboposchim। ২০২১-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৭।
- ↑ "বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মারা গেছেন"। ডেইলি স্টার বাংলা। সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২।
- ↑ "Shah Moazzem changes sides for BNP ticket"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ হোসেন, শাহ মোহাজ্জেম (২০১৫)। বলেছি বলছি বলব। ঢাকা, বাংলাদেশ: অনন্যা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা লেখক পরিচিতি। আইএসবিএন 9789844320321।
- ↑ "বিগত কমিটি সমূহ, ছাত্রলীগ"। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে বিজয়ী সদস্যদের তালিকা"। সংগ্রামের নোটবুক। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "The politics of Shah Moazzem Hossain"। Dhaka Courier। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Jatiya Party secretaries general in and out of power all the time"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "BNP chief Khaleda to meet 20-Party alliance leaders Monday"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ "বনানীতে স্ত্রীর কবরের পাশে শাহ মোয়াজ্জেমের দাফন"। Jagonews24.com। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ ক খ "চলে গেলেন বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন"। দৈনিক আজকের পত্রিকা। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "এ দেশের রাজনীতিতে সঠিক মর্যাদা কেউ পায় না, শেখ সাহেবও পান নাই: শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন"। প্রিয়.কম। ২৪ আগস্ট ২০১৭। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বই"। Baatighar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-২৭।
- ↑ "বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই"। সময় টিভি। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩।