শাহ আব্দুল লতীফ ভিট্টাই
শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই (লাখিনো লতিফ, লতিফ ঘোট, ভিট্টাই, এবং ভিট্ট জো শাহ নামেও সুপরিচিত) (১৮ নভেম্বর ১৬৮৯ - ১ জানুয়ারী ১৭৫২) (সিন্ধি: شاه عبداللطيف ڀٽائي, উর্দু: شاہ عبداللطیف بھٹائی) ছিলেন একজন সিন্ধি দার্শনিক, সুফি পণ্ডিত, মরমী, সাধু এবং কবি, যাকে বিস্তৃতভাবে সিন্ধি ভাষার সর্বাধিক জনপ্রিয় মুসলিম কবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১] তিনি সিন্ধের কবি হিসাবেও পরিচিত।[২]
আব্দুল লতিফ ভিট্টাই | |
---|---|
شاھ عبداللطيف ڀٽائي | |
জন্ম | ১৮ ই নভেম্বর ১৬৮৯ সুই কান্দার (ভিট শাহ) ,হালা, সিন্ধু, মুঘল সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ১লা জানুয়ারি ১৭৫২ (৬৩ বছর বয়সে) শাহ আব্দুল লতিফ ভিট্টাইয়ের মাজার, ভিট শাহ, কালহোরা সাম্রাজ্য |
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন | ইসলাম |
যার দ্বারা প্রভাবিত | জালালুদ্দীন মো: রুমী ফরিদুদ্দীন আত্তার শেখ সাদী কবির শাহ হুসাইন |
যাদের প্রভাবিত করেন | সাচেল সারমাস্ট কাদির বক্স বেদিল শাইখ আয়াজ মাখদুম মোহাম্মদ যামান তালিবুল মাওলা |
ঐতিহ্য বা ধরন | কাব্য |
প্রাথমিক ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাশাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই ১৬৮৯ সালে (১১০১ হিজরীতে) বর্তমান মাটিয়ারি জেলার হাল্লা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ হাবিব শাহ হাল্লায় থাকতেন। তিনি এই অঞ্চলের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।[৩]
শাহ আবদুল লতিফ প্রাথমিক শিক্ষা নূর মুহাম্মদ ভিট্টাইয়ে কাছ থেকে পেয়েছিলেন, যিনি ছিলেন বারো মাইল দূরের ওয়াই গ্রামে বসবাসকারী এক সুপরিচিত শিক্ষক। তিনি তাঁর বাবা শাহ হাবিবের কাছ থেকে তাঁর ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেছিলেন।[৪] তিনি মুইনুদ্দীন থাট্টভীর নিকট ফারসী ভাষা শিক্ষালাভ করেন।[৫]
বংশ ও পরিবার
সম্পাদনাশাহ আব্দুল লতিফ ভিট্টাইয়ের পূর্বপুরুষ সাদাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবারে অন্তর্ভুক্ত। তারঁ বংশটি আলী মুরতাযা এবং মুহাম্মদ পর্যন্ত পৌঁছে।তৈমুর লঙের শাসনামলে হেরাতের এক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মীর আলী এই এলাকার অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তৈমুর লং ১৩৮৮ সালে (৮০১ হিজরি) হেরাতে এসেছিলেন, মীর আলী তৈমুর এবং তাঁর সঙ্গীদের আমন্ত্রন করলেন এবং উপহার হিসাবে প্রচুর অর্থ প্রদান করলেন। তৈমুর এই শ্রদ্ধা দেখে মুগ্ধ হন। সৈয়দ মীর আলী এবং তাঁর দুই পুত্র মীর আবু বকর এবং হায়দার শাহকে বিশেষ ব্যক্তিদের সাথে ভারতে নিয়ে আসেন তৈমুর। আসার পর মীর আবু বকর আলীকে সিন্ধুর শেহওয়ান এলাকার শাসক নিযুক্ত করেন। এবং সৈয়দ মীর আলী ও হায়দার শাহকে সাথে রাখেন। পরবর্তীকালে সৈয়দ হায়দার শাহও পিতা এবং তৈমুরের অনুমতি নিয়ে স্থায়ীভাবে সিন্ধুতে এসে হাল্লা অঞ্চলে শাহ মুহম্মদ জমিদার অতিথি হন। শাহ মোহাম্মদ উনাকে খুব আতিথেয়তা করেন। কিছু দিন পরে তিনি নিজের মেয়ে ফাতিমাকে তার সাথে বিবাহ করিয়ে দেন। তার (হায়দার শাহের) মায়ের নামও ফাতিমা হওয়ায় বিয়ের পরে ফাতিমার নাম রাখেন সুলতানা।সৈয়দ হায়দার শাহ প্রায় তিন বছর হাল্লায় অবস্থান করেন এবং তার পিতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হেরাত চলে যান। তিন-চার বছর সেখানে থাকার পরে তিনি মারা যান। কথিত আছে যে, হায়দার শাহ হেরাত যাত্রা করার সময় তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। স্ত্রী বলে ছিলেন, যদি ছেলে হয় তবে, নাম রাখবে মীর আলী এবং মেয়ে হলে নাম রাখবে ফাতিমা । একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তার ইচ্ছা অনুসারে তার নামকরণ করা হয় মীর আলী। মীর আলীর বংশধরদের মধ্যে আব্দুল লতিফ ভিট্টাই ছাড়া শাহ আবদুল করিম বালরিওয়ারো, সৈয়দ হাশিম ও সৈয়দ জালালের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৬]
সাহিত্য চর্চা
সম্পাদনাশাহ জো রিসালো খুব বিশুদ্ধ এবং সংক্ষিপ্ত সিন্ধি শ্লোকে লেখা, মুসলমান ও হিন্দুদের জন্য একটি সাহিত্য ভাণ্ডার। শাহ আব্দুল লতিফ জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে গৃহীত এবং বিশেষ করে মাওলানা রুমির মসনবী শরিফের প্রেরণা প্রতিটি শ্লোকের মধ্যে লুকায়িত।[৭]
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ভীতশাহে ১৭৫২ সালে ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতি বছর এই দিনে শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাইয়ের উরস অনুষ্ঠিত হয়।[৮]
মর্যাদা
সম্পাদনাতাঁর ২৭৪ তম উরস উপলক্ষে ভীত শাহ রেস্ট হাউজের সামনে ভিট্টাইয়ের একটি ১৬ ফুট উঁচু মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছিল। সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাথে জড়িত নাদির আলী জামালী এই মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন। ভিট্টাই মাজারের পাশের করর লেকের কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হতে দশ মাস সময় নিয়েছে।[৯]
উরস
সম্পাদনাপ্রতি বছর ১৪-ই সফর (হিজরী বর্ষপঞ্জীর দ্বিতীয় মাস) থেকে শুরু হয় এবং তিন দিন অবধি চলে।[৮]
২০১৭ সালে, শাহ আবদুল লতিফের ২৭৪ তম উরসটি ভীত শাহে শুরু হয়েছিল,[১০][১১] এবং মাই ধাই, আবিদা পারভিন এবং আরও অনেক গায়ক এবং শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সিন্ধু গভর্ণর।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Domain For Sale"। www.afternic.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।
- ↑ ""Rumi and the Sufi Tradition" - an essay by Seyyed Hossein Nasr"। www.studiesincomparativereligion.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।
- ↑ "Katalog der Deutschen Nationalbibliothek"। portal.dnb.de। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-৩০।
- ↑ "Roznama Dunya: اسپیشل فیچرز :- سائیں شاہ لطیف بھٹائی"। Roznama Dunya: اسپیشل فیچرز :- (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-৩০।
- ↑ "THE BIOGRAPHY OF SHAH ABDUL LATIF BHITTAI"। www.poemhunter.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-৩০।
- ↑ "شاعر محبت شاہ عبد اللطیف بھٹائی رحمۃ اللہ علیہ Pioneers of Islamic Beliefs And Protection. Islamic Magazine Tahaffuz Karachi, Pakistan"। tahaffuz.com। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০। ৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Annemarie Schimmel, Pearls from the Indus:Studies in Sindhi Culture Jamshoro, Sindh, Pakistan: Sindhi Adabi Board (1986). See pp. 111.
- ↑ ক খ Ahmed, Vaqar (২০১৫-০২-০৩)। "Bhit Shah: After the dhamaal"। DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।
- ↑ "Nov 05, 2017 | Bhitai`s statue on display"। Dawn Epaper (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।
- ↑ "Urs celebrations of Shah Abdul Latif Bhittai begin today | Pakistan Today"। www.pakistantoday.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।
- ↑ "Urs celebrations of Hazrat Shah Abdul Latif Bhitai commence"। The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৫।