শাহজাদপুর উপজেলা

সিরাজগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা

শাহজাদপুর উপজেলা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

শাহজাদপুর
উপজেলা
মানচিত্রে শাহজাদপুর উপজেলা
মানচিত্রে শাহজাদপুর উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°১০′ উত্তর ৮৯°৩৫′ পূর্ব / ২৪.১৬৭° উত্তর ৮৯.৫৮৩° পূর্ব / 24.167; 89.583 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
জেলাসিরাজগঞ্জ জেলা
আয়তন
 • মোট৩২৫ বর্গকিমি (১২৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট৫,৫৬,৩৫০
 • জনঘনত্ব১,৭০০/বর্গকিমি (৪,৪০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ৮৮ ৬৭
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

এই উপজেলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূ্রত্বে অবস্থিত। এর উত্তরে উল্লাপাড়া উপজেলাবেলকুচি উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা, পূর্বে চৌহালি উপজেলা, পশ্চিমে পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলা। শাহজাদপুর উপজেলা সদরের পশ্চিমে পঞ্চগড়-নগরবাড়ি বিশ্বরোড এবং পূর্বে প্রবাহিত হচ্ছে করতোয়া নদী। এর পূর্ব প্রান্তে রয়েছে বাংলাদেশের যমুনা নদী। অবশ্য যমুনার ওপারেও (পূর্বে) এই উপজেলাটির কিছু অংশ বিস্তৃত। এর আয়তন ৩২৫ বর্গ কিলোমিটার।

নদ-নদী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

সম্পাদনা

এগুলো হচ্ছেঃ যমুনা, করতোয়া, হুড়াসাগর ও বড়াল। এতগুলো নদী থাকার কারণে, একসময় শাহজাদপুরের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌপথ। বর্তমানে এই উপজেলার সাথে প্রথান যোগাযোগ মাধ্যম হলো সড়ক পথ।

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

ইতিহাস

সম্পাদনা

শাহজাদপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। ব্রিটিশ শাসনামলে এই উপজেলায় একটি মুনসেফ কোর্ট এবং একটি জেলখানা ছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এস.পি. ফজলুল হক এর মেজ সন্তান, সাবেক আইন সচিব, শেখ মোঃ জহিরুল হক দুলাল এর প্রচেষ্টায় পুনরায় তিনটি চৌকি আদালত স্থাপন করেন। ১। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ২। সহকারী জজ আদালত, ৩। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত যা অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। এটি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। কথিত আছে যে, ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মধ্যপ্রচ্যের ইয়েমেনের শাহজাদা মখদুম শাহদৌলা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিন ভাগ্নে (১) খাজাকালীন দানিশমন্দ, (২) খাজা নুর, (৩) খাজা আনওয়ার, তাদের মাতা (মখদুম সাহেবের ভগ্নি), বার জন প্রসিদ্ধ দরবেশ এবং কিছু সংখ্যক সহচর নিয়ে নদী পথে জাহাজে রওনা দেন। তিনি তার সহচরদের নিয়ে একসময় বর্তমান শাহজাদপুর ভূখণ্ডে এসে পৌঁছান। তিনি এখানে ইসলাম প্রচার শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু রাজার সাথে তার যুদ্ধ বেঁধে যায় এবং তিনি সেই যুদ্ধে শহীদ হন। কিন্তু স্থানটি মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হয়। মখদুম শাহদৌলা-এর মৃত্যুর পর তার সহচরদের প্রচেষ্টায় এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়েমেনের সেই সাধক বীর শহীদ হযরত মখদুম শাহদৌলা -এর নাম অনুসারে এই ভূখণ্ডের নামকরণ হয়েছে।অষ্টাদশ শতাব্দীতে এখানে নীলকরদের একটি নীলকুঠি স্থাপিত হয়েছিল। পরে রবীন্দ্রনাথ দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এটি নিলামে ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনে নেন। পরে এই কুঠিবাড়িতে জমিদারী খাজনা আদায়ের কাচারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কারণে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর আমল থেকেই এই কাচারি কুঠিবাড়ি নামেই প্রচলিত ছিল। এখনও একে কুঠিবাড়ি নামেই ডাকা হয়। বর্তমানে এখানে নির্মিত আধুনিক অডিটোরিয়াম। দ্বিতল ভবনটি বর্তমানে রবীন্দ্র জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আঙিনার বিস্তৃত জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুন্দর সুদৃশ্য একটি ফুলবাগান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতার আদেশে ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে জমিদারি তত্ত্বাবধানের জন্য প্রথম শাহজাদপুরে আসেন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ মোট ৭ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুর আসা-যাওয়া এবং অবস্থান করেছেন। এই সময়ের মধ্যে এখানে তিনি তাঁর অনেক অসাধারণ কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। এর মধ্যে ‘‘সোনার তরী’’ কাব্যের ‘ভরা ভাদরে’, ‘দুইপাখি’, ‘আকাশের চাঁদ’, ‘হৃদয় যমুনা’, ‘প্রত্যাখান’, ‘বৈষ্ণব কবিতা’, ‘পুরস্কার’ ইত্যাদি কবিতা এবং ‘‘কল্পনা’’ কাব্যের ’যাচনা’, ‘বিদায়’, ‘নববিরহ’, ‘মানস-প্রতিমা’, ‘লজ্জিতা’, ‘সংকোচ’, ইত্যাদি বিখ্যাত গান রচনা করেছেন। শাহজাদপুরে রচিত তাঁর ছোটগল্পের মধ্যে ‘পোস্টমাস্টার’, ‘ছুটি’, ‘সমাপ্তি’,‘অতিথি’, ইত্যাদি বিখ্যাত। আর প্রবন্ধের মধ্যে ‘ছেলে ভুলনো ছড়া’, ‘পঞ্চভূত’, এর অংশবিশেষ এবং ‘ছিন্নপত্র’ ও ছিন্নপত্রাবলীর আটত্রিশটি পত্র রচনা করেছেন। ঠাকুর পরিবারের জমিদারী ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুর জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরিকদের হাতে। তাই ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শেষবারের মতো শাহজাদপুরে এসেছিলেন শাহজাদপুর থানা ১৮৪৫ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৮২ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। শাহজাদপুর পৌরসভা ২০ অক্টোবর ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে এখানকার জনসংখ্যা ৫,৫৬,৩৫০ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,৪৮১ জন (প্রায়)।

শিক্ষা

সম্পাদনা

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুরে অবস্থিত। শাহজাদপুর সরকারি কলেজ, রংধনু মডেল স্কুল, শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সহ আরও কিছু সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে রয়েছে।

অর্থনীতি

সম্পাদনা
  • হাট-বাজার - ২৩ টি;
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প - ৭৮১ টি;
  • বৃহৎ শিল্প - ০৩ টি।

শাহজাদপুরের তাঁতশিল্প ও দুগ্ধশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানকার তাঁতশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে শাড়ি ও লুঙ্গি দেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এখানকার দ্বিতীয় প্রধান শিল্প হচ্ছে দু্গ্ধশিল্প। বাংলাদেশের বৃহৎতম দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার সবচেয়ে বড় কারখানাটি শাহজাদপুরে অবস্থিত। এই কারখানায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াও দুগ্ধজাত ঘি, মাখন, আইসক্রিমসহ নানা পণ্যের উৎপাদন হচ্ছে। মিল্টভিটার প্রায় শতকরা আশি ভাগ দুধ শাহজাদপুরে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের দুগ্ধ খামার থেকে সরবরাহ করা হয়। শাহজাদপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হলো বাঘাবাড়িতে স্থাপিত দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও ওয়েস্ট মোন্ট পাওয়ার প্লান্ট (১০০ মেগাওয়াট )। এ দুটিই বাঘাবাড়ি বড়াল নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত। এ দুটি প্লান্ট থেকে গড়ে ১৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। আরও ১০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার যে সব কারণে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে প্রতিষ্ঠিত পেট্রোলিয়াম ডিপো অন্যতম। এই ডিপোতে রয়েছে পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানির সরবরাহ। উত্তরবঙ্গের জ্বালানী তেলের প্রায় সমস্তটাই এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। মোটের উপর, শিল্প কারখানার দিক থেকেও উপজেলা হিসাবে শাহজাদপুর বেশ অগ্রবর্তী।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ
  • মসজিদ - ৫৬৮ টি,
  • মন্দির - ৪৮ টি।
ব্যাংক শাখাঃ
  • বাণিজ্যক - ১৪ টি।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে শাহজাদপুর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা