শামসুল হক (বীর প্রতীক)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

শামসুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০১০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [][]

শামসুল হক
মৃত্যু২০১০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন শামসুল হক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

শামসুল হকের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার ঘাসিপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ইসমাইল মিয়াজি এবং মায়ের নাম উলফতেন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম জয়নব বানু। তাঁদের তিন ছেলে, দুই মেয়ে।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

শামসুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এ রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতী সেনানিবাসে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি নিজ ইউনিটের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। এ পর্যায়ে তার ভূমিকা ছিল অনন্য।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালে নোয়াগাঁও গ্রামে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। কুমিল্লা থেকে ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা কয়েক দিন পর পর সেখানে আসত। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ জনসাধারণকে সেখানে ডেকে এনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার নামে সভা করত। মূল উদ্দেশ্য মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড ঠেকানো। এ এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাব-সেক্টরের অধীন। এ এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর একটি দলের দলনেতা ছিলেন আবদুল ওয়াহাব (বীর বিক্রম)। আর একটি দলের (মর্টার প্লাটুন) দলনেতা ছিলেন শামসুল হক। ১৭ জুলাই তারা খবর পান পাকিস্তানিরা পরদিন নোয়াগাঁওয়ে আবার এমন সভার আয়োজন করেছে। এরপর তারা দুই দল মিলে সেখানে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮ জুলাই ভোরে শামসুল হক ও ওয়াহাব গোপন শিবির থেকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে রওনা হন নোয়াগাঁওয়ের উদ্দেশে। ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে তারা যান। নিঃশব্দে জঙ্গলাকীর্ণ সুবিধাজনক স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তাঁদের সামনে থাকে স্কুলঘর। সেখানেই পাকিস্তানিরা সভার আয়োজন করে। মাঝখানে দূরত্ব আনুমানিক সাড়ে তিন শ গজ। তারপর সময় গড়ায়। সভা শুরু হয় আনুমানিক বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে। শেষ হয় দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে। লোকজন চলে যায়। এরপর পাকিস্তানি দুই সেনা কর্মকর্তা স্কুলমাঠসংলগ্ন ওপিতে (অবজারভেশন পোস্ট) উঠে বাইনোকুলার দিয়ে সীমান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ শুরু করে। কিছুসংখ্যক সেনা এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকে। এ সুযোগ হাতছাড়া করেননি শামসুল হক ও ওয়াহাব। একসঙ্গে গর্জে ওঠে শামসুল হকের কাছে থাকা তিন ইঞ্চি মর্টার এবং ওয়াহাবের কাছে থাকা এলএমজি। সঙ্গে সঙ্গে অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও তাঁদের নিজ নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করেন। নিমেষে শান্ত এলাকা গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি শিবিরে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। প্রকাশ্যে এমন আক্রমণ তারা কল্পনাও করেনি। শামসুল হকের ছোড়া মর্টারের গোলা নিখুঁত নিশানায় আঘাত করে ওপি এবং স্কুলঘরে। ওপিতে নিহত একজনের মৃতদেহ মাটিতে পড়ে থাকে। হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি। একটু পর পাকিস্তানিরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন দুই পক্ষে তুমুল গোলাগুলি হয়। পাশেই উজানিসারে ছিল পাকিস্তানিদের মিডিয়াম আর্টিলারির অবস্থান। সেখান থেকেও গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এরপর শামসুল হকরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। সেদিন দুজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সফল এক অপারেশন। শামসুল হক এ অপারেশনে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৯-১০-২০১২"। ২০২০-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

পাদটীকা

সম্পাদনা

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা