শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়
ড. শান্তিময় চট্টোপাধ্যায় (২৬ জানুয়ারি ১৯২৪ ― ১৭ জানুয়ারি ২০০৩) ছিলেন খ্যাতনামা বাঙালি পরমাণু বিজ্ঞানী।[১]
শান্তিময় চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৭ জানুয়ারি ২০০৩ | (বয়স ৭৮)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | স্কটিশ চার্চ কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | পরমাণু বিজ্ঞানী |
দাম্পত্য সঙ্গী | এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায় |
সন্তান | কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় (পুত্র) |
পুরস্কার | রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৭৪) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টা | মেঘনাদ সাহা |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাশান্তিময় চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি বৃটিশ ভারতের কলকাতায়। পিতা জ্ঞানচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন চিকিৎসক ও ভালো মল্লযোদ্ধা। তিনি কলকাতার ইউনিয়ন স্পোর্টিং ক্লাবে রাগবি খেলতেন। ফিজিয়োলজির উপর বাংলা ভাষায় লেখা তার একটি বই আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত পরিভাষা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন তার পিতা। শান্তিময়ের মাতা সরযূবালা ছিলেন হাওড়ার এক খ্যাতনামা কীর্তন গায়ক পরিবারের কন্যা। পিতামহ সারদাপ্রসন্ন কুলীল ব্রাহ্মণ পরিবারের বৃত্তি ছেড়ে করে তাদের আদি নিবাস হুগলি জেলার সরাইগ্রাম ত্যাগ করে কলকাতা আসেন। শান্তিময়ের বিদ্যালয়ের পাঠ মিত্র ইনস্টিটিউশনে। এরপর সেন্ট পলস কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে তিনি শিশির কুমার মিত্র ও মেঘনাদ সাহার প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি। লো এনার্জি নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং মিডিয়াম এনার্জি অ্যাকসিলেটর গঠনের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। মেঘনাদ সাহার অধীনে পরমাণু বিজ্ঞানের উপর কাজ করে ডি.ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মোয়াট পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বৎসর কাজ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন সাহা ইনস্টিটিউটে। ভাভা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্র ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাকে কলকাতায় একটি ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার নির্মাণের দায়িত্ব দেয়। এটির কাজ ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন সম্পন্ন হয়। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ড.চট্টোপাধ্যায় কাজ থেকে অবসর নেন।
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে দুবছর তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। মেঘনাদ সাহা রচিত বিজ্ঞান পত্র, রচনা সংকলন, কিশোর রচনা সংকলন সহ যাবতীয় লেখা তিনি সম্পাদনা করেন। তিনি স্ত্রী এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে রচনা করেন পরমাণু জিজ্ঞাসা। এছাড়াও তাদের যুগ্মভাবে লেখা মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং সাতটি ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক বহু গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক সুসান বোসাঙ্কো, ডেভিড ল্যামবার্ট, রুথ মিজলির এনসাইক্লোপিডিয়া জাতীয় গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। রচিত কিশোর উপযোগী সম্পাদনা করেছেন দুইখণ্ডের লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অফ এস এন বসু গ্রন্থটি। তার লেখা ভারতীয় বিজ্ঞান উত্তরণের কাল গ্রন্থটি মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পরমাণু জিজ্ঞাসা গ্রন্থটির জন্য তিনি তার স্ত্রী এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বিজ্ঞান প্রচারের জন্য তিনি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্দিরা গান্ধী পদক ও কালিদাস নাগ পদক লাভ করেন।
জীবনাবসান
সম্পাদনাড. শান্তিময় চট্টোপাধ্যায় ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৮০,৩৮১ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬