শান্তা আপ্তে
শান্তা আপ্তে (১৯১৬-১৯৬৪) একজন ভারতীয় গায়িকা-অভিনেত্রী ছিলেন যিনি মারাঠি ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[১] তিনি দুনিয়া না মানে (১৯৩৭) ও অমর জ্যোতি (১৯৩৬) চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯৩২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেছেন। ১৯৩২ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র শ্যামসুন্দর এ কিশোরী রাধার ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে অমৃত মন্থন এ অভিনয়ের মাধ্যমে তার হিন্দি চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে।[২] দুনিয়া না মানে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের অনুকরণীয় ব্যক্তিতে পরিণত হন।[৩] তিনি তার সেরা সময়ে মারাঠি চলচ্চিত্রাঙ্গনে সর্বোচ্চ পারিশ্রামিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি মারাঠি ভাষায় তার আত্মজীবনী জও মি সিনেমাত রচনা করেছিলেন।
শান্তা আপ্তে | |
---|---|
জন্ম | ১৯১৬ দুধনি, মহারাষ্ট্র, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৯৬৪ (বয়স ৪৭–৪৮) |
মৃত্যুর কারণ | হার্ট অ্যাটাক |
পেশা | গায়িকা-অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৩২-১৯৫৮ |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯১৬ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের দুধনিতে এক মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি।[৪] তার বাবা ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার।[৫]
ছোটবেলায় পুনের গণেশ চতুর্থী উৎসবে ভজন গাইতেন তিনি। পান্ধারপুরে মহারাষ্ট্র সংগীত বিদ্যালয়ে সংগীত নিয়ে পড়েছিলেন তিনি।[৬]
কর্মজীবন
সম্পাদনানয় বছর বয়সে তার প্রতিভা অভিনেতা পরিচালক বাবুরাও পেন্ধারকরকে আকৃষ্ট করে। ১৯৩২ সালে ভালজি পেন্ধারকর পরিচালিত শ্যামসুন্দর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এটি প্রথম মারাঠি চলচ্চিত্র, যেটি ২৫ সপ্তাহ ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলেছিল।[৭]
১৯৩৪ সালে ভি. সান্তারাম পরিচালিত অমৃত মন্থন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রে তিনি নায়কের বোন হিসেবে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হয়। চলচ্চিত্রটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল। এটি ছিল প্রথম হিন্দি সবাক চলচ্চিত্র, যেটি প্রেক্ষাগৃহে ২৫ সপ্তাহ ধরে চলে।[৮] চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। তিনি সিনেমাটিতে চারটি গান গেয়েছিলেন।
১৯৩৭ সালে ভি. সান্তারামের দুনিয়া না মানে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমাটিতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি একটি ইংরেজি গান গেয়েছিলেন তিনি। তার অভিনয় দর্শক সমালোচক মহলে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
১৯৪১ সালে তিনি তামিল চলচ্চিত্র সবিত্রী তে অভিনয় করেন।[৯] ১৯৪৩ সালে তিনি অভিনয় করেন হিন্দি চলচ্চিত্র দুহাই তে। ১৯৪৬ সালে তিনি মোট চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সুভদ্রা চলচ্চিত্রে একটি গানে প্লেব্যাকও করেছিলেন তিনি।[১০] এরপর তিনি অভিনয় করেন সর্বোত্তম বাদামি পরিচালিত চলচ্চিত্র উত্তরা অভিমন্যু। এছাড়াও সে বছর তিনি পানিহারি ও বাল্মীকি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
পঞ্চাশের দশকে তিনি অল্পসংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি অভিনয় করেন জারা জাপুন চলচ্চিত্রে। এর পরের বছর দত্ত ধর্মাধিকারী পরিচালিত কুংকভাচা ধানি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি তাই তেলিন (১৯৫৩) ও মুলু মানেক (১৯৫৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৫৭ সালে তার অভিনীত হিন্দি সিনেমা চন্ডি পূজা মুক্তি পায়। এর পরের বছর তার অভিনীত চলচ্চিত্র রামভক্ত বিভীষণ মুক্তি পায়। তার অভিনীত শেষ দুইটি চলচ্চিত্র ছিল হিন্দি ভাষার।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাতিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অবিবাহিতা ছিলেন বলে জানা যায়। তার মৃত্যুর দশ বছর পর মঞ্চাভিনেত্রী নয়না আপ্তে দাবি করেন যে, তিনি শান্তা আপ্তের মেয়ে। তিনি আরো দাবি করেন যে, ১৯৪৭ সালে, দূরসম্পর্কের এক ভাইকে তিনি বিবাহ করেন এবং তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শান্তা আপ্তে তাকে ছেড়ে চলে যান। তিনি তাদেরই সন্তান।[১১] বিজয় রঞ্চন তার স্টোরি অব বলিউড সং বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, অবিবাহিতা হলেও শান্তা আপ্তের একটি সন্তান ছিল এবং সন্তানের নাম নয়না আপ্তে।[১২]
মৃত্যু
সম্পাদনা৬ মাস ধরে অসুস্থ থাকার পর ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মুম্বাইয়ের আন্ধেরিতে মৃত্যুবরণ করেন শান্তা আপ্তে।[৪]
চলচ্চিত্র তালিকা
সম্পাদনাতার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হল:[১৩]
- শ্যামসুন্দর (১৯৩২)
- অমৃত মন্থন (১৯৩৪)
- অমর জ্যোতি (১৯৩৬)
- রাজপুত রামানি (১৯৩৬)
- দুনিয়া না মানে (১৯৩৭)
- ওয়াহা (১৯৩৭)
- গোপাল কৃষ্ণ (১৯৩৮)
- সবিত্রী (১৯৪১)
- আপনা ঘর (১৯৪২)
- জমিনদার (১৯৪২)
- দুহাই (১৯৪৩)
- মহব্বত (১৯৪৩)
- ভাগ্য লক্ষ্মী (১৯৪৪)
- কাদাম্বারি (১৯৪৪)
- সাওয়ন (১৯৪৫)
- পানিহারি (১৯৪৬)
- সুভদ্রা (১৯৪৬)
- উত্তরা অভিমন্যু (১৯৪৬)
- বাল্মীকি (১৯৪৬)
- মন্দির (১৯৪৮)
- ভাগ্যরেখা (১৯৪৮)
- মেঁ অবলা নেহি হুঁ (১৯৪৯)
- স্বম্যাসিদ্ধ (১৯৪৯)
- জাগা ভাদয়ানে দেনে আহে (১৯৪৯)
- শিলাগানাচে সোনে (১৯৪৯)
- জারা জাপুন (১৯৫০)
- কুংকভাচা ধানি (১৯৫১)
- তাই তেলিন (১৯৫৩)
- মুলু মানেক (১৯৫৫)
- চান্দি পূজা (১৯৫৭)
- রামভক্ত বিভীষণ (১৯৫৮)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Yves Thoraval (১ ফেব্রুয়ারি ২০০০)। The cinemas of India। Macmillan India। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 978-0-333-93410-4। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫।
- ↑ "Shanta Apte"। streeshakti.com। Streeshakti.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ Lalit Mohan Joshi (২০০২)। Bollywood: Popular Indian Cinema। Lucky Dissanayake। পৃষ্ঠা 163–। আইএসবিএন 978-0-9537032-2-7। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৫।
- ↑ ক খ Careers Digest। 1। ১৯৬৪। পৃষ্ঠা 383। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ Patel, Baburao (ডিসেম্বর ১৯৩৮)। "Questions And Answers"। Filmindia। 4 (12): 23। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ Sathe, V. P.। "Article-Profile Shanta Apte (1977)"। cineplot.com। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৫।
- ↑ Ashok Raj (১ নভেম্বর ২০০৯)। "2-The Formative Phase of Indian Cinema"। Hero Vol.1। Hay House, Inc। পৃষ্ঠা 13–। আইএসবিএন 978-93-81398-02-9। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ "Amrit Manthan"। prabhatfilm.com। Prabhatfilm.com। ২২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ Manish Kumar 'Santosh' (১০ জানুয়ারি ২০০১)। M.S Subbalakshmi। Prabhat Prakashan Children books, Biography। পৃষ্ঠা 8–। আইএসবিএন 978-93-5186-330-4। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ Patel, Baburao (সেপ্টেম্বর ১৯৪৬)। "Review-Subhadra"। Filmindia। 12 (9): 57। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫।
- ↑ "Shanta Apte Biography"। veethi.com। veethi.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫।
- ↑ Vijay Ranchan (২ জানুয়ারি ২০১৪)। "The Rebel Commoner"। Story of a Bollywood Song। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 23–। GGKEY:9E306RZQTQ7। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫।
- ↑ "Shanta Apte"। citwf.com। Alan Goble। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৫।