শচীন্দ্রচন্দ্র পাল
শচীন্দ্রচন্দ্র পাল (জন্ম: ১৯৪২- মৃত্যু-১৯ মে ১৯৬১) ১৯৬১ সালে ভারতের বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন শহীদ। ১৯ মে ১৯৬১ সালে শিলচরের তারাপুর রেলওয়ে স্টেশনে (বর্তমানে শিলচর রেলওয়ে স্টেশন) পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।[১] তার স্মৃতিতে শিলচরে একটি রাস্তার নাম শচীন্দ্র পাল রোড রাখা হয়েছে।
শচীন্দ্রচন্দ্র পাল | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪২ |
মৃত্যু | ১৯ মে, ১৯৬১ (১৯ বছর) |
মৃত্যুর কারণ | পুলিশের গুলিতে |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ছাত্র |
পরিচিতির কারণ | বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার জন্য শহীদ |
পিতা-মাতা | গোপেশচন্দ্র পাল |
শৈশব ও পড়াশোনা
সম্পাদনাশচীন্দ্রচন্দ্র তৎকালীন অবিভক্ত সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার মদনপুর গ্রামে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গোপেশচন্দ্রের সাত সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন শচীন্দ্র; তারা ছিলেন ছয় ভাই ও এক বোন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এক বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে আসামের সিলেট (শ্রীহট্ট) জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। তার পরিবার শরণার্থী হিসেবে আসামে চলে আসতে বাধ্য হন। তারা সিলেট (শ্রীহট্ট)-এর পার্শ্ববর্তী আসামের কাছাড় জেলার শিলচরে এসে আশ্রয় নেন এবং স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন। ১৯৬১ সালে শচীন্দ্রচন্দ্র শিলচরের কাছাড় হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসেন।[২]
ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং মৃত্যুবরণ
সম্পাদনা১৯৬১ সালে আসামে বরাক উপত্যকায় বাঙালীদের ওপরে সরকারী ভাষা হিসাবে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরের দিন শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবীতে একটি পিকেটিংএর ডাক দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালের ১৯শে মে শচীন্দ্র অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সত্যাগ্রহী হিসেবে শিলচরেে রেলওয়ে স্টেশনে হরতাল আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯ মে সকালে হরতাল ও রেল অবরোধ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সমাধা হয়। যদিও অবস্থানের সময়সূচী ছিল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, কিন্তু শেষ ট্রেনটি ছিল বিকেল ৪টা নাগাদ, যার পড়ে গণ অবস্থান স্বভাবতই শিথিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই অসম রাইফেল্সের জওয়ানরা জায়গাটাকে ঘিরে ফেলতে শুরু করে। বেলা ২-৩৫ নাগাদ বিনা প্ররোচনায় তারা অবস্থানকারী ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে লাঠি ও বন্দুকের কুঁদো দিয়ে পেটাতে থাকে। এলোপাথারি লাঠিচার্জে অবস্থানকারী জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ও দিকবিদিকজ্ঞানশুন্য হয়ে যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। এরপর সাত মিনিটের ভিতর তারা ১৭ রাউণ্ড গুলি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালায়। এতে শচীন্দ্র গুলিবিদ্ধ হন এবং অন্যান্য আহতদের সাথে শিলচর সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। [২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Reportof Non-Official Enquiry Commission on Cachar" (পিডিএফ)। Silchar: A. K. Das Memorial Trust। পৃষ্ঠা 20। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৩।
- ↑ ক খ [ archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=186462 Tributes to language heroes of Assam]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "REPORT of Non Official Enquiry Commission of CACHAR" [কাছাড়ের অফিসিয়াল তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন] (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। শিলচর-৫, আসাম: এ. কে. দাশ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭।
- বিশ্বাস, সুকুমার। আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি-প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১। আগরতলা, ত্রিপুরা: পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড। আইএসবিএন 93-8670-825-6।