লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক

কম্পিউটার অন্তর্জাল যা সীমিত জায়গার মধ্যে অবস্থিত যন্ত্রসমূহের সাথে যোগাযোগ করতে পারে

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) (Local Area Network বা LAN) অর্থাৎ স্থানীয় অঞ্চলের নেটওয়ার্ক হলো একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা বাড়ি, বিদ্যালয়ে, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি বা অফিসের একটি সীমিত এলাকার একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে আন্তঃসংযোগস্থাপন করে থাকে।[]

আর্কনেট, টোকেন রিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তি মান অতীতে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু বর্তমানে টুইস্টেড পেয়ারের উপর ইথারনেট এবং ওয়াই-ফাই দুটি সবচেয়ে সাধারণ প্রযুক্তি বর্তমানে ল্যান নির্মাণ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে ল্যানের মধ্যমে ১০,১০০ অথবা ১০০০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (১০০০ মেগাবিটস ১ গিগাবাইট নামেও প্রচলিত) গতিবেগে তথ্য আদান প্রদান করা যায়৷

ল্যান এবং ওয়্যানের মধ্যে পার্থক্য:

  1. ল্যান অনেক বেশি গতিসম্পন্ন
  2. সীমিত ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ, সর্বাধিক কয়েক কিলোমিটার
  3. ল্যানের জন্য ভাড়া করা দূরসংযোগের (লিজড টেলিকমিউনিকেশন লাইন) প্রয়োজন নেই৷

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
১০বেস৫ ইথারনেট ব্যবহার করে স্থানীয় নেটওয়ার্কের একটি ধারণাসঙ্গত ডায়াগ্রাম

পার্সোনাল কম্পিউটার আসার আগে, কোনো স্থানে একটি মূল কম্পিউটার থাকত, যাতে অনেকগুলি প্রান্তিক কম্পিউটার (টার্মিনাল), সাধারণ স্বল্প গতির তার দ্বারা সংযুক্ত থাকত। আইবিএমের এসএনএ’র(সিস্টেম নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার) মতো নেটওয়ার্কগুলি মেইনফ্রেম বা কোনো প্রান্তিক কম্পিউটারকে ভাড়া করা দূরসংযোগের (লিজড টেলিকমিউনিকেশন লাইন) মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানকে সংযুক্ত করত, সেজন্য এগুলিকে সুদীর্ঘ অঞ্চলের নেটওয়ার্কের (ওয়্যান) মধ্যে গণ্য করা হয়।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে প্রথম ল্যান তৈরি করা হয় একই জায়গায় অবস্থিত অনেকগুলি বড় প্রধান কম্পিউটারের মধ্যে উচ্চ গতি সম্পন্ন সংযোগ স্থাপনের জন্য। সে সময় অনেকগুলি প্রযুক্তি আসে, তাদের মধ্যে ইথারনেটআর্কনেট সবথেকে জনপ্রিয় হয়। এরপর সিপি/এম এর বৃদ্ধি এবং তারপর ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম (Disc Operating System) বা ডসের মাধ্যমে একই জায়গায় কয়েক শত এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কয়েক হাজার পার্সোনাল কম্পিউটার রাখা সম্ভব হয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় নেটওয়ার্কের আকর্ষণ ছিল মূলতঃ ডিস্ক বা লেসার প্রিন্টার (Printer) ভাগের(শেয়ার) জন্য, এবং এ দুটিই সেই সময় খুবই ব্যায়সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু এই ধারণা নিয়ে যথেষ্ট উদ্দিপনা ছিল এবং তার অনেক পরে ১৯৮৩ সালের পর থেকে কম্পিউটার শিল্পের পন্ডিতেরা পরবর্তি সময়কে ‘ল্যানের যুগ’ বলে অভিহিত করেন।

বাস্তবে এই ধারণা আসামঞ্জস্যপূর্ণ গাঠনিক স্তরের বৃদ্ধি ও নেটওয়ার্ক পদ্ধতির ব্যবহারের দ্বারা ব্যহত হয়, এবং সঠিক ভাগ পদ্ধতি(শেয়ারিং প্রোটোকল) গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হয়। সার্বিক ভাবে প্রত্যেক বিক্রেতাই তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক কার্ড, তার সংযোগ পদ্ধতি, নেটওয়ার্ক পদ্ধতি এবং নেটওয়ার্ক পরিচালনা ব্যবস্থা(অপারেটিং সিস্টেম) ব্যবহার করত। নভেল নেটওয়্যারের আগমনে একটা সমাধান খুঁজে পাওয়া গেল, যারা দিল, ক) প্রায় ৪০টি বিভিন্ন কার্ড ও তার সংযোগ পদ্ধতি সঙ্গে কাজ করার ব্যবস্থা ও খ) তাদের প্রতিদ্বন্দীদের থেকে অনেক বেশি উন্নত পরিচালন ব্যবস্থা। নেটওয়্যার পার্সোনাল কম্পিউটারের ল্যানের বাণিজ্যে একাধিপত্য করে গেছে তাদের বাজারে প্রবেশের সময়, ১৯৮৩ সালের গোড়া থেকে ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত, যখন মাইক্রোসফট ‘উইন্ডোজ এনটি এডভান্সড সার্ভার’ এবং ‘কর্মগোষ্ঠীর জন্য উইন্ডোজ’(উইন্ডোজ ফর ওয়ার্কগ্রুপ) বাজারে আনল।

নেটওয়্যারের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় একমাত্র ব্যনিয়্যান ভাইন্সের তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট কারিগরি দক্ষতা ছিল, কিন্তু ব্যনিয়্যান কখনই তার পায়ের নিচে শক্ত জমি পায়নি। 3কমের(3com) এবং মাইক্রোসফট যৌথভাবে একটি সাধারণ নেটওয়ার্ক পরিচালন পদ্ধতির জন্য কাজ করেছিল, যার ফলে তৈরি হয় 3+শেয়ার, মাইক্রোসফটের ল্যান মেসেঞ্জার এবং আইবিএম এর ল্যান সার্ভার। কিন্তু এর মধ্যে কোনোটাই সেই রকম সাফল্যপূর্ণ ছিল না।

পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন বিক্রেতার, যেমন সান মাইক্রোসিস্টেমস, হিউলেট-প্যাকার্ড, সিলিকন গ্রাফিক্স, ইন্টারগ্রাফ, নেক্সট ও এপোলোর ইউনিক্স কম্পিউটারে টিসিপি/আইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যদিও এই স্থানের বাজার কমে আসছিল, তবুও এখানকার প্রযুক্তির অগ্রসর ইন্টারনেট এবং লিনাক্স এপেল ম্যাক ওএস এর নেটওয়ার্কিং এ বিশেষ অবদান রেখেছিল। টিসিপি/আইপি বর্তমানে আইপিএক্স, এপেলটক, নেটবিউই এবং অন্যান্য পদ্ধতি যারা পিসি ল্যানের পূর্বে ব্যবহৃত হত, তাদের জায়গা সম্পূর্ণভাবে দখল করতে সমর্থ হয়েছে।

প্রযুক্তিগত দিক

সম্পাদনা
 
টোকেন রিং

যদিও ল্যানের গাঠনিক স্তরে সুইচ নির্ভর নেটওয়ার্ক এখন খুবই প্রচলিত, এবং আচরনবিধি (নেটওয়ার্ক প্রোটোকল) হিসাবে ইন্টারনেট প্রোটোকল সুইট (TCP/IP), তথাপি অতীতে অন্যান্য অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হযেছে (নিচে ইতিহাস দেখুন)। কিছু প্রযুক্তি নিজস্ব জায়গায় প্রসিদ্ধি লাভ করে ব্যবহৃত হয়ে গেছে। বৃহত্তর ল্যানে প্রচুর সংখ্যক সংযোগ থাকে, এবং রাউটার (Router) অথবা সুইচ (Switch) ‘স্প্যানিং ট্রি’(Spanning Tree) আচরনবিধি অথবা একই ধরনের পদ্ধতি অনুসরন করে বিচ্ছিন্ন সংযোগুলির সাথে সংযোগ সাধন করতে পারে। একটি ল্যান রাউটারের মাধ্যমে আর একটি ল্যানের সাথে সংযোগ সাধন করতে পারে, অথবা ভাড়া করা দূরসংযোগের (লিজড টেলিকমিউনিকেশন লাইন) মাধ্যমে সুদীর্ঘ অঞ্চলের নেটওয়ার্কের (ওয়্যান) সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অধিকাংশ ল্যানই আবার বৃহত্তর সার্বজনীন নেটওয়ার্কের (যা ইন্টারনেট নামে পরিচিত) সাথে সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেট বা অন্য ল্যানের সংগে যুক্ত ল্যান ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Virtual Private Network) বা ভিপিএন (VPN) এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকতে পারে, যা ‘টানেলিং’ (Tunneling) নামে প্রসিদ্ধ।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Gary A. Donahue (জুন ২০০৭)। Network Warrior। O'Reilly। পৃষ্ঠা 5 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা