লীলা রায়
লীলা নাগ (জন্ম: অক্টোবর ২, ১৯০০ - মৃত্যু :১১জুন ১৯৭০)[১] (বিবাহের পরে নাম হয় লীলা রায়) একজন বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন।[২][৩] তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী ছিলেন।
লীলা নাগ (রায়) | |
---|---|
জন্ম | লীলা নাগ ২ অক্টোবর ১৯০০ গোয়ালপাড়া, সিলেট, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১১ জুন ১৯৭০[১] | (বয়স ৬৯)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | লীলাবতী রায় |
প্রতিষ্ঠান | দীপালি সংঘ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক |
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | অনিলচন্দ্র রায় |
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
সম্পাদনালীলা নাগ আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ অবসর প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মাতা ছিলেন কুঞ্জলতা দেবী চৌধুরী।[৪] তার পিতৃ-পরিবার ছিল তৎকালীন সিলেটের অন্যতম সংস্কৃতমনা ও শিক্ষিত একটি পরিবার। লীলা নাগ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে তারিখে বিপ্লবী অনিল রায়কে বিবাহ করেন। যা ছিলো সেই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।[৩]
শিক্ষা
সম্পাদনাতার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে। ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী। [৫] তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা ও আকাঙ্ক্ষা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর ড. হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন।[৬]
শিক্ষা বিস্তার
সম্পাদনালীলা নাগ ঢাকা কলেজে পড়তেন। তার এক ক্লাস উপরের ছাত্র ছিলেন সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন। লীলা নাগ সম্পর্কে তিনি তার স্মৃতিকথা নামক প্রবন্ধ সংকলনে লেখেন, এর মত সমাজ-সেবিকা ও মর্যাদাময়ী নারী আর দেখি নাই। এর থিওরি হলো, নারীদেরও উপার্জনশীলা হতে হবে, নইলে কখনো তারা পুরুষের কাছে মর্যাদা পাবে না। তাই তিনি মেয়েদের রুমাল, টেবলক্লথ প্রভৃতির উপর সুন্দর নক্সা এঁকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই সব বিক্রি করে তিনি মেয়েদের একটা উপার্জনের পন্থা উন্মুক্ত করে দেন।" [৭]
বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। বিয়ের পর তার নাম হয় শ্রীমতি লীলাবতী রায়। ভারত বিভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
রাজনীতি
সম্পাদনালীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দীপালী ছাত্রী সংঘ’ নামে ছাত্রী সংগঠন গড়ে ভারতে প্রথম তার মাধ্যমে ছাত্রীদের মধ্যে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহিলাদের আবাস ‘ছাত্রীভবন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের সময় তার উপর নারী আন্দোলনের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব অর্পিত হয়। ফরোয়ার্ড ব্লক গঠিত হলে তিনি এই সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে কারারুদ্ধ হন। কারামুক্তির পর সুভাষচন্দ্রের নির্দেশে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ সাপ্তাহিকের সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে নেতাজীর অন্তর্ধানের পর তিনি ও তার স্বামী অনিল রায় উত্তর ভারতে ফরওয়ার্ড ব্লক সংগঠনের দায়িত্ব নেন। [৮] তিনি মহিলা সমাজের মুখপত্র হিসেবে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে “জয়শ্রী” নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। লীলা রায় ছবি আঁকতেন এবং গান ও সেতার বাজাতে জানতেন। দেশভাগের দাঙার সময় তিনি নোয়াখালীতে গান্ধীজীর সাথে দেখা করেন। তিনি দীপালী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাশ্রদ্ধা নিবেদন
সম্পাদনা২২শে ডিসেম্বর, ২০০৮-এ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মহম্মদ হামিদ আনসারি, স্পিকার, লোকসভা, শ্রী সোমনাথ চ্যাটার্জি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি ভারতীয় সংসদের সেন্ট্রাল হলে লীলা রায়ের প্রতিকৃতি উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন৷[৯]
২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের একটি পরীক্ষার হলের নামকরণ করা হয় লীলা নাগ পরীক্ষার হল।[১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ author., Ālī, Śaokata, 1937-। গণপরিষদ থেকে নবম জাতীয় সংসদ। আইএসবিএন 978-984-04-1842-8। ওসিএলসি 956584250।
- ↑ Dag., Heward-Mills,। আপনার বাইবেল পড়ুন, প্রতিদিন প্রার্থনা করুন ...যদি আপনি বৃদ্ধি পেতে চান। আইএসবিএন 978-1-64135-583-4। ওসিএলসি 1157208725।
- ↑ ক খ লীলা নাগ, সোনিয়া আমিন, বাংলাপিডিয়া, সংস্করণ 2.0.0 (সিডি সংস্করণ), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত।
- ↑ "লীলা নাগ ও তাঁর জীবনসাধনা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১১।
- ↑ author., ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ১৮৬১-১৯৪১,। কতক কড়ি, কতক কোমল : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১০৮ কবিতা ও গান = a shade sharp, a shade flat : 108 poems and songs of Rabindranath Tagore। ওসিএলসি 871245601।
- ↑ editor., মামুন,মুনতাসির, 1951-। আত্মস্মৃতিতে পূর্ববঙ্গ। আইএসবিএন 984-07-5714-8। ওসিএলসি 1104331979।
- ↑ author., ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ, ১৯২২-১৯৭১,। অগ্রন্থিত রচনা : গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনা, স্মৃতিকথা ও চিঠি। আইএসবিএন 978-984-90193-3-6। ওসিএলসি 862041661।
- ↑ editor., Rāẏacaudhurī, Jhumā,। যৌবনের স্বপ্ন। আইএসবিএন 978-81-925641-5-9। ওসিএলসি 932408457।
- ↑ Roy, Leela। "Leela Roy's portrait"। archivepmo.nic.in।
- ↑ "ঢাবি'র-প্রথম-ছাত্রী-লীলা-নাগ-এর-নামে-'কলা-ভবন--পরীক্ষার-হল'-এর-নামকরণ"। du.ac.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০৬।