লিঙ্গ বৈষম্য
এই নিবন্ধটির বর্ণনা ভঙ্গি উইকিপিডিয়ার বিশ্বকোষীয় বর্ণনা ভঙ্গি প্রতিফলিত করেনি। এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। নির্দেশনা পেতে সঠিক নিবন্ধ লেখার নির্দেশনা দেখুন। |
সংজ্ঞা :(জেন্ডার অসমতা) লিঙ্গ বৈষম্য হল লিঙ্গভিত্তিক ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর অসম অথবা অসুবিধাগ্রস্থ অবস্থান বা আচরণ।লিঙ্গ বৈষম্য বলতে এমন কোন পরিস্থিতি বুঝায় যেখানে কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কাঙ্খিত মৌলিক মানবিক সুযোগ অর্থাৎ সমঅধিকারকে অস্বীকার বা দমন করা হয় অন্য কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কর্তৃক প্রবর্তিত পীড়নমূলক কাঠামো দ্বারা।
নারীবাদে লিঙ্গ বৈষম্য :লিঙ্গ বৈষম্য একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের মধ্যে অসম সম্পদ ও সুযোগ সুবিধার বন্টন জনিত সমস্যা সমাধানে তৎপর হতে চায়।তবে নারীবাদীরা লিঙ্গ বৈষম্য বলতে মূলত নারী ও পুরুষের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্যকেই প্রধান হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তা নারী ন্যায্য অধিকার রক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়। 'ক্যারেন জে ওয়ারেন 'এর মতে, সমাজসৃষ্ট মূল্যবোধ প্রকৃতপক্ষে ধারণাগত কাঠামো এবং পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষক ক্যারেন জে ওয়ারেন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেন তা হল:
(ক)সমাজসৃষ্ট ধারণাগত কাঠামো এবং এর অন্তর্ভুক্ত পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামো ও কর্তৃত্বের যে যৌক্তিকতা পুরুষতন্ত্র তৈরি করেছে তার অসারতা তুলে ধরা ।
(খ)নারী ও পুরুষ সম্পর্কে সমাজে যে দ্বৈতবাদ প্রচলিত সেই দ্বৈতবাদের বিকল্প দর্শন প্রচলন করা।
পুরুষ কর্তৃক নারী নিপীড়নের কারণ হিসেবে ফেমিনিস্ট
'ক্যারেন জে ওয়ারেন'পিতৃতন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট দ্বৈত মূল্যবোধকে দায়ী করেন।এ বিষয়ে তিনি বলেন- " দ্বৈত মূল্যবোধ থেকেই মানুষের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে নারী হলো অধস্তন, তার উপর কতৃত্ব করার অধিকার রাখে পুরুষ এবং এই কতৃত্ব করবে পুরুষতন্ত্র।"
পুরুষ শাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পুরুষতন্ত্র মানুষের মধ্যে এমন মূল্যবোধ জন্মাতে সক্ষম হয়েছে যে নারী দুর্বল ও নিন্মমানের। কাজেই তাদের উপর কর্তৃত্ব করা স্বাভাবিক যার ফলশ্রুতিতে লিঙ্গ অসমতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। লিঙ্গ বৈষম্য যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে তবে এটি প্রাথমিকভাবে নারী ও মেয়েদেরকে প্রভাবিত করে। এটি স্টেরিওটাইপস এবং লিঙ্গ ভূমিকার সাথে যুক্ত হয়েছে, এবং এই বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যে একটি লিঙ্গ অন্য লিঙ্গের চেয়ে উচ্চতর।লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা উদ্ভূত হয়েছে লিঙ্গবাদ(sexism) থেকে।লিঙ্গবাদ বলতে বোঝায় কাওকে লিঙ্গ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে আলাদা করে দেখা বা দেখানো।আর কোন সমাজের বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষের প্রতি সমাজে গড়ে উঠা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই সৃষ্টি হয় লিঙ্গ বৈষম্য। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হলে সার্বজনিন শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একমাত্র শিক্ষাই পারে বিভিন্ন লিঙ্গের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণ পরিবর্তন করে সাম্যবাদীভাবধারার বৈষম্যহীন উত্তম ও উন্নততর মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে।
বাস্তব: পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এটাই নিয়ম। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় এসেছে। সাধারণ মানুষ তার ছেলের বিয়েতে যতটা খরচ করে মেয়ের বিয়েতে ততটাই খরচ করে। কিন্তু চালাকি করে বলা হয় “আমরা মেয়ের বিয়েতে পণ দিলাম”। মূলত মেয়েকে এটা পরোক্ষে বলে দেওয়া হয় পৈতৃক সম্পত্তিতে তোমার কোনও অধিকার নেই। সব সময় মনে রাখবেন পণ দেওয়া ও নেওয়া দু’টোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করাটাও বেআইনি।
যে কোনও ক্ষেত্রেই জীবনের বাস্তবতাকে আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে গেলেই বুঝতে পারা যায় ছেলেরা বাবা-মায়ের দেখাশোনা কতদূর করে। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দেখাশোনা মেয়েরাই করছে।
মেয়েদেরও ছেলেদের মতোই বেঁচে থাকার অধিকার, উন্নতির অধিকার, সুরক্ষার অধিকার এবং কোনও কিছুতে অংশ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।
এ সব অধিকার থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা মানেই লিঙ্গ বৈষম্য এবং দারিদ্রের দুষ্টচক্রকে চিরস্থায়ী করা ।
বহু যুগ ধরে মেয়েরা জীবনের যে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার, তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন - “এক জন পুরুষকে শিক্ষিত করা মানে এক জন মানুষকে শিক্ষিত করা, কিন্তু এক জন নারীকে শিক্ষিত করা মানে গোটা সমাজকে শিক্ষিত করা” ।
কন্যাসন্তানকে যদি সুযোগ সুবিধা দিয়ে বড় করা হয়, খুব সহজেই তারা ভাল এবং মন্দ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে এবং জীবন সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমরা মেয়েদের স্বাধীনতা দিতে ভয় পাই। এর একটাই সমাধান। আমাদের এটা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, যে কোনও মানুষের মতোই শিশুকন্যারও মানবাধিকার রয়েছে। যদি মেয়েদের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ জাতীয় সমস্যা হয়, তবে এটা মনে রাখা জরুরি যে মেয়েদের ক্ষমতায়ন না করাটা, তাদের দুর্বলতাকে বাড়ানোর সামিল।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৪০ জন মহিলা রয়েছে। এই লিঙ্গ অনুপাত থেকে দেখা যাচ্ছে , ২০০১ সালের থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ২০০১ সালে ১০০০ পুরুষে মহিলার সংখ্যা ছিল ৯৩৩। দশকের পর দশক ধরে ভারতে পুরুষের তুলনায় মহিলার পরিমাণ কমেছে। কিন্তু গত দু’দশকে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। গত পাঁচ দশকে প্রতি ১০০০ পুরুষে মহিলার সংখ্যা ৯৩০ থেকে শুরু করে বর্তমানে ৯৪০-এ পৌঁছেছে।
একজন ব্যক্তির যৌন বা লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য হয়। তা যে কেউ প্রভাবিত করতে পারে, তবে এটি নিয়মিতভাবে নারী ও মেয়েদের প্রভাবিত করে [১] । এটি স্টিরিওোটাইপ এবং লিঙ্গ ভূমিকাগুলির সাথে যুক্ত হয়েছে [২][২],এবং যেখানে একটি লিঙ্গ আর একটি লিঙ্গের চেয়ে উচ্চতর এই বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত হয় [৩]।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা[বিষয়শ্রেণী:লিঙ্গ বৈষম্য, নারীবাদী ডিসকোর্স ]