লাল মসজিদ, ইসলামাবাদ
লাল মসজিদ (উর্দু: لال مسجد) পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত একটি মসজিদ।
লাল মসজিদ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | সুন্নি ইসলাম |
নেতৃত্ব | ইমাম: আব্দুল আজিজ |
অবস্থান | |
অবস্থান | ইসলামাবাদ, পাকিস্তান |
স্থানাঙ্ক | ৩৩°৪০′০″ উত্তর ৭৩°১০′০″ পূর্ব / ৩৩.৬৬৬৬৭° উত্তর ৭৩.১৬৬৬৭° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
স্থাপত্য শৈলী | উসমানীয় ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ |
সম্পূর্ণ হয় | নির্মাণ–১৯৬৬ পুনঃসংস্কার–২০১০ |
ইতিহাস
সম্পাদনামসজিদ রোডে অবস্থিত লাল মসজিদটি রাজধানীর অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। ফয়সাল মসজিদ নির্মাণের আগে এটি রাজধানী ও দেশের বৃহত্তম মসজিদ ছিল। এটি শহরের দুটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক কেন্দ্র, পূর্বের আবপারাহ মার্কেট ও উত্তরের মেলোডি মার্কেটের সন্নিকটে অবস্থিত। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) রেকর্ড অনুসারে, লাল মসজিদটি ইসলামাবাদের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ এর প্রথম ইমাম নিযুক্ত হন। তার সাথে জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হকের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ (১৯৭৯–১৯৮৯) চলাকালীন, আফগান মুজাহিদীনদের সাথে লড়াই করার জন্য মুজাহিদীন নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে লাল মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসায় বাস করে।[১]
১৯৯৮ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গুপ্তহত্যার শিকার হলে তার পুত্র আব্দুল আজিজ ও আব্দুল রশিদ মসজিদটির দায়িত্ব নেন। বর্তমানে আব্দুল আজিজ মসজিদের সরকারী খতিব (খুতবা দাতা)।
অবরোধ
সম্পাদনা২০০৭ সালের ৩ জুলাই, সরকার কর্তৃক সংঘটিত একটি রক্তাক্ত বন্দুকযুদ্ধে মসজিদের শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমের সদস্য, আধাসামরিক কর্মী ও এক ব্যবসায়ীসহ ২০ জনের বেশি লোক মারা যায় এবং আরও শতাধিক লোক আহত হয়। পরবর্তীতে আজিজ ও রশিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যা থেকে শুরু করে দেশদ্রোহী ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়।
আজিজ ও রশীদ পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কা) সভাপতি চৌধুরী সুজাত হুসেইনের পরামর্শে তৎকালীন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ইজাজ-উল-হকের সাথে এই বিরোধের বিষয়ে আলোচনা করেন। শেষ মুহুর্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত, আলোচনাটি সফল বলে মনে করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মসজিদ ত্যাগ করার পর মন্ত্রী তার অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং মসজিদে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রক্ষা করতে পারেননি।
সরকার ও নিরাপত্তা কর্মীরা বারবার মাওলানা আব্দুল রশিদকে আত্মসমর্পণ করতে বলে কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রস্তাব দেন, সরকার যদি তাকে ও তার ছাত্রদের তার নিজের গ্রামে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের অনুমতি দিয়ে নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ দেয়, তবে তিনি লাল মসজিদ সরকারকে এবং জামিয়া হাফসা ও ফরিদিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ওয়াফাকুল মাদারিসকে (মাদারিসের একটি ফেডারেশন) হস্তান্তর করবেন। এই চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ ও চৌধুরী সুজাত হুসেইনসহ উলমাই করম ও সরকারের মধ্যে হয়েছিলো তবে শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফ এই চুক্তি বাতিল করে দেন এবং শত শত নারী শিক্ষার্থী উপস্থিত মসজিদটিতে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন।
মসজিদে হামলা
সম্পাদনা২০০৭ সালের ৮ জুলাই, বেশিরভাগ বেসরকারি প্রচার মাধ্যমগুলো (যেমন: জিও, আজ ও অন্যান্য) নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি থেকে নিশ্চিত হয় যে তারা ভবনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১০ জুলাই, মঙ্গলবার ভোরে আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সরকারি সেনারা মসজিদটিতে হামলা চালায় এবং কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো বিবাদমূলক রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘটনার অত্যন্ত সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রকৃতির কারণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায় নি। অনেকে বিশ্বাস করেন হতাহতের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ এর মধ্যে ছিল।
অভিযুক্ত বিদেশিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকার মসজিদে কোনও বিদেশির উপস্থিতি প্রমাণ করতে পারেনি এবং অনেকে বিশ্বাস করেন যে কিছু স্থানীয়কে বিদেশি বলে অভিহিত করা হয়।[২]
পরিণতি
সম্পাদনাসপ্তাহব্যাপী অবরোধের পর, সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। নিহতদের মরদেহ অস্থায়ী কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। আব্দুল রশিদের কয়েকশো সমর্থক তার জানাজায় অংশ নেয়।[৩] এর ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল; পুলিশ ও সামরিক বাহিনী সতর্কতার সাথে অবস্থান নেয়। আল-কায়েদার ২য় আমির আয়মান আল-জাওয়াহিরি একটি বার্তা প্রকাশ করেন যাতে এই বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত ছিল: "আপনার মুক্তি কেবল জিহাদের মাধ্যমে"; যা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলা।[৪]
২০০৮ সালের জুলাই মাসে লাল মসজিদের কাছে বোমা হামলা
সম্পাদনা২০০৮ সালের ৬ জুলাই, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭:৫০-এ, লাল মসজিদের কাছে একটি বোমা বিস্ফোরণে ১৮ জন পুলিশ সদস্য ও ১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা দাবি করেন, এই বোমা হামলাটি অবরোধের প্রথম বার্ষিকীতে হয় এবং এটি প্রতিশোধ আক্রমণ ছিল। ইসলামাবাদে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও হামলাটি হয়, যেখানে পাকিস্তানের কয়েক হাজার ইসলামি শিক্ষার্থী লাল মসজিদে পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালানোর দিনটি পালন করতে এসেছিলো।[৫] প্রায় ৩০ বছর বয়সী একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এই বিস্ফোরণটি ঘটায়।[৬] বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করা প্রধানমন্ত্রীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ক উপদেষ্টা রেহমান মালিক জানান, প্রায় ১২,০০০ শিক্ষার্থী সমাবেশে অংশ নেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।[৭]
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনা২০০৯ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আব্দুল আজিজ পুনরায় মসজিদের ইমাম হন। মসজিদের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এর ভিতরে একটি ছোট গ্রন্থাগার তৈরি করেন এবং তার প্রয়াত ভাই আব্দুল রশিদ গাজীর নামে নামকরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Profile: Islamabad's Red Mosque" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-০৭-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১।
- ↑ "MMA president says locals were `dubbed` foreigners in Lal Masjid"। Zee News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-০৭-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৪।
- ↑ "Pakistan buries Red Mosque dead" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-০৭-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৫।
- ↑ "Al-Qaeda issues Pakistan threat" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-০৭-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৫।
- ↑ Jacinto, Leela। "Blast near Islamabad's Red Mosque kills dozens"। www.france24.com। ৪ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০২১।
- ↑ "Pak terror reminder: 18 dead in Lal Masjid blast"। News18 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৬।
- ↑ "Suicide blast targeting police kills 16 at Pakistan rally - CNN.com"। edition.cnn.com। ২০১১-০৫-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৬।