লাঠি খেলা
লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মার্শাল আর্ট[১][২]–লাঠির দ্বারা এক ধরনের লড়াই–যা ভারত ও বাংলাদেশ অনুশীলন করা হয়।[৩][৪][৫] 'লাঠি খেলা' অনুশীলনকারীকে 'লাঠিয়াল' বলা হয়।[৬] এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তিনি/তারা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।[৭]
কঠোরতা | অর্ধ-সংস্পর্শ |
---|---|
উৎপত্তির দেশ | বাংলাদেশ |
মূল | ঐতিহাসিক |
অলিম্পিক খেলা | না |
ব্যুত্পত্তি
সম্পাদনালাঠি একটি প্রাকৃত শব্দ যেটি সংস্কৃত ফর্ম ইয়াস্টি থেকে এসেছে। সুতরাং, লাঠি খেলাকে লাঠির কৌশল বলা যেতে পারে।[৮] দক্ষিণ এশীয় ভাষায় বাংলাসহ হিতোপদেশ আছে যে যার আছে লাঠি তার আছে ক্ষমতা। লাঠি খেলায় যে দক্ষ বা লাঠি খেলা নিয়ে যাদের বসবাস তারাও লাঠিয়াল হিসাবে পরিচিত।[৯]
যন্ত্রপাতি
সম্পাদনালাঠি মুগুর, গদা বা ডাণ্ডা বিশেষ যেটি সাধারণত শক্ত বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় এবং কখনও কখনও একটি লোহার রিংয়ের সঙ্গে আবদ্ধ অবস্থায় দুর্দান্ত অস্ত্রে পরিণত হয়।[৯]
ইতিহাস
সম্পাদনালাঠি খেলা লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। ইংরেজবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে বাঙালি লাঠিয়ালেরা ইংরেজের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিলেন বহুবার। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসে বাঙালির লাঠি বিষয়ে একটী পূর্ণ উপচ্ছেদ লিখেছিলেন তিনি। বাঙালির লাঠির আঘাতে অত্যাধুনিক বন্দুকও ভেঙে যেতো। স্বদেশী আন্দোলনাদির সময়ে বিপ্লবীরা গণজাগরণের উদ্দেশ্যে নিয়মিত লাঠি খেলার আয়োজন করতেন।
বাংলাদেশের নরসিংদী , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে।[৯] কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।[১০] উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাদি নামক একটি অনুরূপ খেলা খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় "লাঠি খেলা" এর প্রদর্শনী এখনও আছে। বাংলায় গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক ব্রতচারী আন্দোলনের সময়ও লাঠি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৯]
বিধান
সম্পাদনালাঠিয়াল বাহিনী সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, বাওই জাক (গ্রুপ যুদ্ধ), নরি বারী (লাঠি দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা এবং দাও খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা দেখায়। এর মধ্যে ডাকাত খেলার উপস্থাপনা ঈদে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি ব্যবহূত হয় এবং সঙ্গীতের সাথে চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়।[১০][১১]
লাঠি খেলা বর্তমানে
সম্পাদনালাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে।[১২] ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়।[১০] লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।[১৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Khan, Saleque (২০০৭)। Performing the (imagi)nation: A Bangladesh Mise-en-scene। New York University। পৃষ্ঠা 237। আইএসবিএন 9780549099628।
- ↑ Sylhet: History and Heritage (ইংরেজি ভাষায়)। Bangladesh Itihas Samiti। ১৯৯৯-০১-০১। আইএসবিএন 9789843104786।
- ↑ Lathi khela, Lāthi khela: 1 definition
- ↑ "Lathi Khela to celebrate Tangail Free Day"। Tangail: the daily star। ১৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ "Lathi Khela to celebrate Tangail Free Day"। Tangail: the daily star। ডিসেম্বর ১৩, ২০১১।
- ↑ "'Lathi khela' at Charukala"। bangladesh2day.com। ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮। ৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৩।
- ↑ ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, বাংলা একাডেমী, ১২শ সংস্করণ, ২০১০, ঢাকা, পৃ. ১০৫৩
- ↑ "Three-day cultural fair ended in Barisal"। newagebd.com। ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২। ২০১৩-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ Lathial ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে, from Banglapedia.
- ↑ ক খ গ ঈদ উৎসবের নানা রং[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],সাইমন জাকারিয়া, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: আগস্ট ০২, ২০১৩
- ↑ "Lathi Khela to celebrate Tangail Free Day"। dhakamirror.com। ডিসেম্বর ১৩, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৩।
- ↑ "Two-day long traditional Lathi Khela ended in Kushtia"। thekushtiatimes.com। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩। ১২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৩।
- ↑ হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে, সোনিয়া স্নিগ্ধা, এস,এম,বাবু, একাত্তর.টিভি। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: জুলাই ১৭, ২০১২