ললিতা মহল
ললিতা মহল মহীশূর বা মাইসোরের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাসাদ । এটি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মহীশূর শহরের পূর্বে চামুন্ডি পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত । প্রাসাদটি ১৯২১ সালে চতুর্থ মহামান্য কৃষ্ণরাজা ওদেয়ার, যিনি তৎকালীন মহীশূরের মহারাজা ছিলেন, তার নির্দেশে ভাইসরয় অব ইন্ডিয়ার অবস্থানস্থল হিসাবে নির্মিত হয়েছিল ।[১] একটি উঁচু স্থানে র্নির্মিত, প্রাসাদটি লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল এর অনুকরণে তৈরি এবং মহীশূর শহরের অন্যতম মনোরম একটি নির্মাণ শিল্প ।[২][৩][৪]
ললিতা মহল | |
---|---|
সাধারণ তথ্যাবলী | |
স্থাপত্যশৈলী | রেনেসাঁ স্থাপত্য |
শহর | মহীশূর |
দেশ | ভারত |
নির্মাণ শুরু | ১৯২১ |
সম্পূর্ণ | ২০ শতকের |
নির্মাণব্যয় | ₹১.৩ মিলিয়ন |
গ্রাহক | Krishnaraja Wodeyar IV, Mysore Kingdom |
কারিগরী বিবরণ | |
কাঠামো ব্যবস্থা | Stone masonry and marble |
নকশা ও নির্মাণ | |
স্থপতি | E.W. Fritchley |
সম্পূর্ণ প্রাসাদটি শুভ্র সাদা রংয়ের । এটিকে ১৯৭৪ সালে একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেলে রূপান্তরিত করা হয় । এটি বর্তমানে ভারত সরকারের অধীনে ভারত ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন আইটিডিসি(ITDC) এর অশোক গ্রুপের একটি অভিজাত হোটেলে হিসাবে পরিচালিত হয় । তবে, প্রাসাদের মূল রাজকীয় ভাবমূর্তি এখনও বজায় রাখা হয় ।[৫]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রাসাদটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে মহীশূর রাজ্যে নির্মিত হয় । মহীশূর রাজ্যটি ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা একটি "মডেল রাজ্য" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । হায়দ্রাবাদের নিজামদের পর মহীশূরের মহারাজারাই ধনী ছিলেন । প্রাসাদটি, যা একটি খুব চিত্তাকর্ষক স্থাপত্য ছিল, নির্মিত অর্থব্যয়ের পরিমাণ পরিমিত ছিলো, যা তাদের বার্ষিক আয় দুই মিলিয়ন পাউন্ড হতে ব্যয় করা হয় ।[২] তৎকালীন মহীশূরের রাজ্যের (ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর রাজ্যটি কর্ণাটক রাজ্যের সঙ্গে একীভূত হয়) মহারাজা ছিলেন চতুর্থ এইচ এইচ কৃষ্ণরাজা ওদেয়ার (৪ জুন, ১৮৮৪ – ৩ আগস্ট, ১৯৪০), যিনি "ওদেয়ার" উপাধি নিয়ে মহীশূর শহরে তার রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে রাজ্য শাসন করতেন । তিনি ওদেয়ার রাজবংশের ২৪তম শাসক ছিলেন । মহীশূরের শাসকেরা শিল্পকলা ও স্থাপত্যের মহান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতেন, যার পরিচয় পাওয়া যায় তাদের নির্মিত প্রাসাদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য স্থাপত্য শিল্পে । এর মাধ্যমে তারা তাদের রাজ্যের স্থাপত্য শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছিলেন । ললিতা মহল প্রাসাদটি ১৯২১ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় এর অবস্থানস্থল এবং একই সাথে মহারাজার ইউরোপীয় অতিথিদের জন্য অতিথিশালা হিসেবে নির্মিত হয়েছিলো ।[২]
স্থাপত্যশৈলী
সম্পাদনাচামুন্ডি পাহাড়ের নিচে বাগানের অভান্তরে নির্মিত, প্রাসাদটি বোম্বে(বর্তমানে মুম্বাই নামকরণ করা হয়েছে) থেকে আগত স্থপতি ই.ডাব্লিউ. ফ্রিচলে দ্বারা পরিকল্পিত এবং বি মুনিভেঙ্কাটাপ্পা দ্বারা নির্মিত হয় । প্রাসাদটি রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এবং লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালকে অনুকরণ করে নির্মিত, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় গম্বুজটি । প্রাসাদটির স্থাপত্যরীতিতে ইংরেজ ম্যানর হাউস এবং ইতালীয় পালাজ্জোস এর প্রতিফলন লক্ষিত হয় ।[৬] প্রাসাদটির একদম নিচতলায় সামনে বাড়ানো বারান্দা রয়েছে । প্রাসাদটির সম্মুখদৃশ্যে প্রধান গম্বুজের পাশাপাশি অন্যান্য গম্বুজগুলো দৃশ্যমান হয় । উপরের বারান্দাগুলো হতে বাম পার্শ্বে চামুন্ডি পাহাড় এবং সম্মুখে মহীশূর শহরের দৃশ্য অবলোকন করা যায় ।
প্রাসাদটিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সজ্জিত ভাইসরয় রুম, ব্যাংকুইট হল(ভোজন কক্ষ) ও একটি ড্যান্সিং ফ্লোর রয়েছে। ওদেয়ার রাজাদের পূর্ণ ছবি, ইতালীয় মার্বেল মেঝে ও বেলজিয়ামের স্ফটিকের ঝাড়বাতি, গ্লাস ল্যাম্প, ভারী সুসজ্জিত আসবাবপত্র, টাইলস কাটা মোজাইক এবং সূক্ষ্ম ফার্সি কার্পেট প্রাসাদটিকে তার রাজসিক সৌন্দর্য প্রদান করেছে । প্রাসাদটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেলে রূপান্তরের ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ আধুনিক সুবিধা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু পূর্বের নাচ ও ভোজের হলগুলোর রাজকীয় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র এগুলোকে ডাইনিং হল এবং মিটিং এবং কনভেনশনের জন্য কনফারেন্স হল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আধুনিক উপকরণে সজ্জিত করা হয়েছে; এছাড়াও পালিশ করা কাঠের মেঝে এবং সিলিংয়ে কাঁচ দিয়ে আবৃত গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে । বিশেষ করে বল রুম, যা হোটেলের ডাইনিং হলে রূপান্তরিত হয়েছে, বেলজিয়ান কাচের তৈরি স্কাইলাইট দ্বারা এর গম্বুজকে সজ্জিত করা হয়েছে । বর্তমানে একটি সুইমিং পুলও সংযোজিত হয়েছে ।[৩] লিফট, কার্পেট এবং দ্যা অটোমান, ট্যাপেষ্ট্রির সঙ্গে সংযুক্ত প্রাসাদটির অনন্য সৌন্দর্য ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "About Lalitha Mahal"। ১৭ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ গ Cannadine, David (২০০২)। Ornamentalism: How the British Saw Their Empire। Lalitha Mahal। Oxford University Press US। পৃষ্ঠা 54–55। আইএসবিএন 0-19-515794-X। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ "Palaces of Mysore: Lalitha Mahal Palace"। ১০ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ "About The Lalitha Mahal Palace Mysore"। cleartrip.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ "Lalitha Mahal Palace (A Heritage Ashok)"। Ashok Group Hotels। ১৩ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ "Lalitha Mahal Palace Mysore"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।