লরেশিয়া
লরেশিয়া হল প্যানজিয়া নামক এককমহাদেশটি ভেঙে মেসোজোয়িক মহাযুগে (২৫.২ কোটি - ৬.৬ কোটি বছর আগে) যে দু'টি অতিমহাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তার মধ্যে উত্তরের অংশটি। দক্ষিণের অংশটিকে সাধারণভাবে গন্ডোয়ানা অতিমহাদেশ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পূর্বতন লরেনশিয়া, বালটিকা, কাজাখস্তানিয়া, সাইবিরিয়া, প্রভৃতি ঐতিহাসিক মহাদেশ এবং উত্তর ও পূর্ব চীন মহাদেশীয় ভূত্বক নিয়ে গঠিত ছিল এই অতিমহাদেশ। অর্থাৎ বর্তমান পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের স্থলভাগের বেশিরভাগ অংশই মেসোজোয়িক মহাযুগে লরেশিয়া অতিমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্বতন পার্মিয়ান যুগে (প্যালিওজোয়িক মহাযুগের শেষভাগ; ২৯.৮৯ কোটি - ২৫.৪২ কোটি বছর আগে) লরেশিয়া মহাদেশের আয়তন ছিল প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার।[১]
ধারণার উৎপত্তি
সম্পাদনাজার্মান মেটিরিওলজিস্ট আলফ্রেড লোটার ভেগনার ১৯১২ সালে তার বক্তৃতায় ও তারপর ১৯১৫ সালে তার বিখ্যাত বই ডি এনটস্টেয়ুং ড্যের কন্টিনেন্টা উন্দ ওৎসেয়ানায় (মহাদেশ ও মহাসমুদ্রগুলির উৎপত্তি) প্রথম এককমহাদেশ প্যানজিয়ার ধারণা দেন।[২] দক্ষিণ আফ্রিকার ভূবিজ্ঞানী আলেক্সান্দার দু তোয়া ১৯৩৭ সালে তার বই আওয়ার ওয়ান্ডারিং কন্টিনেন্ট-এ ভেগনারের দেওয়া তত্ত্বকেই আরও বিস্তৃত করে ঐ এককমহাদেশ প্যানজিয়ার ভাঙনের ফলে উত্তরে লরেশিয়া ও দক্ষিণে গন্ডোয়ানা নামক দুই অতিমহাদেশের ধারণার কথা প্রথম উচ্চারণ করেন।[৩]
নামকরণ
সম্পাদনালরেশিয়া নামটির উৎপত্তি দু'টি শব্দ লরেনশিয়া (উত্তর আমেরিকার মহাদেশীয় স্থলভাগ) ও ইউরেশিয়া থেকে। অর্থাৎ, নামটি ভূতাত্ত্বিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ ও ইউরেশিয়া মহাদেশদ্বয়ের মূল অংশের একত্র সমাবেশের তাৎপর্য বহন করে।
উৎপত্তি
সম্পাদনালরেশিয়া অতিমহাদেশটি সাধারণভাবে মেসোজোয়িক মহাযুগের ট্রায়াসিক যুগে (২৫.২২ কোটি - ২০.৮৫ কোটি বছর আগে) অতিকায় এককমহাদেশ প্যানজিয়ার অংশ ছিল এবং মহাদেশীয় চলনের (Continental drift) ফলে সেই এককমহাদেশটি ভেঙে আলাদা হয়ে উত্তর গোলার্ধের দিকে সরে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমান গবেষণায় বিশ্বাস করা হয় 'লরেশিয়া' বলতে পৃথিবীর স্থলভাগের যে অংশকে বোঝানো হয় তা আরও পূর্বে প্রায় ৮০ কোটি বছর আগে প্রোটেরোজোয়িক অধিযুগে রোডিনিয়া নামক এককমহাদেশটি ভেঙে যাওয়ার সময় থেকেই একইসাথে অবস্থান করছিল। মেসোজোয়িক মহাযুগের লরেশিয়া অতিমহাদেশের থেকে এই পূর্বতন অতিমহাদেশের পার্থক্য বোঝাতে এই পূর্বতন অতিমহাদেশকে সাধারণভাবে প্রোটো-লরেশিয়া বলে অভিহিত করা হয়। এই প্রোটো-লরেশিয়া পরবর্তীকালে আর ভেঙে যায়নি। প্রাক্-ক্যাম্ব্রীয় কালের সময়সীমার মধ্যেই তার শেষের দিকে আজ থেকে প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে এই অতি মহাদেশটি মহাদেশীয় চলনের ফলে আরো দু'টি অতিকায় স্থলভাগের সাথে একত্রিত হয়ে প্যানোটিয়া অতিমহাদেশ গঠন করে। কিন্তু আজ থেকে ৫৪ কোটি বছর আগে ক্যাম্ব্রীয় যুগে মহাদেশীয় ভূত্বকগুলির পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে এই অতি মহাদেশটি আবার ভেঙে যায়।
এইভাবে লরেশিয়ার গঠন ও শেষপর্যন্ত তার ভেঙে যাওয়ার আসল কারণ লুকিয়ে আছে টেকটনিক পাতের চলন, মহাদেশীয় ভূত্বকের চলন ও সমুদ্রতলের বিস্তৃতি প্রক্রিয়ার মধ্যে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ LUCAS, SPENCER G., JOERG W. SCHNEIDER & GIUSSEPE CASSINIS. "Non-marine Permian Biostratigraphy and Biochronology: An Introduction". ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে সংগৃহীত ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫।
- ↑ "Alfred Lothar Wegener". Encyclopædia Britannica. সংগৃহীত ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫।
- ↑ "Laurasia". Encyclopædia Britannica. সংগৃহীত ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫।