রোমের অগ্নিকাণ্ড (লাতিন: Magnum Incendium Romae) ১৯ জুলাই, ৬৪ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে সংঘটিত বৃহদাকৃতির অগ্নিকাণ্ড। এরফলে রোম নগরীর অধিকাংশ এলাকা আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়।[] রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম এবং জুলিও-ক্লদিয়ান রাজতন্ত্রের সর্বশেষ রোমান সম্রাট হিসেবে ছিলেন নিরোটাসিটাসের মতে, এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য নিরো খ্রিস্টানদেরকে দায়ী করেছিলেন। কিন্তু অনেক রোমান অধিবাসী মনে করেন যে, নিরো স্বয়ং ডোমাস অরেয়া স্বর্ণ ভবন নির্মাণে আগুন লাগানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

দ্য টর্চেস অব নিরো শিরোনামের হেনরিক সাইমিরাদজকি কর্তৃক অঙ্কিত চিত্রকর্ম।

প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

প্রাচীন রোমান ঐতিহাসিক টাসিটাসের মতে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ছয় দিন ধরে জ্বলতে থাকে।[] প্রাচীন রোমের চৌদ্দটি জেলার মধ্যে মাত্র চারটি আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তিনটি জেলা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বাকী সাতটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।[] অন্যান্য সমসাময়িক ইতিহাসবিদদের মধ্যে একমাত্র প্লিনি দি ইল্ডার লিখেছেন যে, এ অগ্নিকাণ্ড স্বল্প সময়ের ছিল।[] ঐ সময়ে জীবিত ইতিহাসবিদদের মধ্যে দিও ক্রাইসোসতম, প্লুতার্ক এবং এপিকটেটাস এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।[] আগুনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সেনেকা পলকে চিঠিতে লিখেছিলেন যে, একশত ত্রিশটি ঘর এবং চারটি ব্লক ছয়দিনের মধ্যে ভস্মিভূত হয়ে যায়।[] এ হিসাবে কমপক্ষে শহরের এক-দশমাংশ পুড়ে যায়। ঐ সময় রোমে ১,৭০০ ব্যক্তিগত গৃহ এবং ৪৭,০০০ ইনসুলা ছিল।

ক্যাসিয়াস দিও বলেছেন যে, ঐ সময়ে সম্রাট নিরো মঞ্চের পোশাক পরিহিত অবস্থায় গ্রীক মহাকাব্য ইলাপারসিস থেকে গান গাচ্ছিলেন।[] এছাড়াও, টাসিটাসের মতে অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরো অ্যান্টিয়ামে ছিলেন।[] টাসিটাস বলেছেন, নিরো লির বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান গাচ্ছিলেন এবং নগর পুড়ে যাবার খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।[]

টাসিটাসের মতে, আগুনের সংবাদ শোনে নিরো দ্রুত রোমে ফিরে যান। ত্রাণকার্য পরিচালনার উদ্যোগী হন ও নিজ তহবিল থেকে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন তিনি।[] অগ্নিকাণ্ডের পর নিরো নিজ প্রাসাদে গৃহহীনদের জন্যে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং দুর্গতদের জন্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।[]

প্রভাব

সম্পাদনা

এ অগ্নিকাণ্ডের ফলে নিরো'কে জনপ্রিয়তাবিহীন সম্রাটরূপে আখ্যায়িত করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে, রোম পুড়ে যাওয়া অবস্থায় তিনি বেহালা বাজাচ্ছিলেন। পরবর্তীকালে এ কথাটি ভুল প্রমাণিত হয় ও গুজব হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, তখনও বেহালা বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কার ঘটেনি। কিন্তু তিনি প্রাচীন গ্রীসের উদ্ভাবিত লির বাজাতে পারতেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Dando-Collins, Stephen (সেপ্টেম্বর ২০১০)। The Great Fire of Rome। Da Capo Press। আইএসবিএন 978-0-306-81890-5। ৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  2. Tacitus (১৮৭২)। "Annals" 
  3. Pliny the Elder, Natural Histories, XVII, Pliny mentions trees that lasted "down to the Emperor Nero's conflagration"
  4. Smallwood, E. Mary (১৯৭৬)। The Jews under Roman rule। Leiden: Brill Archive। পৃষ্ঠা 217আইএসবিএন 978-90-04-04491-3 
  5. The Correspondence of Paul and Seneca ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ নভেম্বর ২০১০ তারিখে (forged), M.R. James, the translator, says the document is from the 4th century and "is of the poorest kind".
  6. Suetonius, The Lives of Twelve Caesars, Life of Nero, 38; Cassius Dio, Roman History LXII.16
  7. Tacitus, Annals XV.39
  8. Nero was not a fiddle player, but a lyre player (the fiddle was not invented for at least another 1500 years). Suetonius states Nero played the lyre while Rome burned, see Suetonius, The Lives of Twelve Caesars, Life of Nero 38; For a detailed explanation of this transition see M. F. Gyles "Nero Fiddled while Rome Burned", The Classical Journal 42, no. 4 (January 1947), pp. 211–17 – nevertheless, the idea that Nero played any kind of musical instrument is an urban legend, since he was away from Rome at the time of the fire. [১].

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা