রুশ মনিটর কল্ডান
কল্ডান (রুশ: Колдун বাংলা অর্থ -যার জাদুকরী ক্ষমতা আছে) ছিল রাজকীয় রাশিয়ান নৌবাহিনীর জন্য ১৮৬০ দশকের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত উরাগান-শ্রেণীর একটি মনিটর। এর ডিজাইন আমেরিকান পাজাইক শ্রেণীর মনিটরের উপর ভিত্তি করে করা হলেও রাশিয়ান ইঞ্জিন, অস্ত্র বহন করার জন্য এবং রাশিয়ান নির্মাণশৈলীর ছাপ রাখতে তা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। এটি ছিল তার শ্রেণীর দুইটি জাহাজের একটি, যার অংশগুলো বেলজিয়ামে বানানো হলেও পুরো জাহাজকে সংযোজন করা হয় রাশিয়াতে। জাহাজটি সক্রিয় ছিল শুধুমাত্র যখন ফিনল্যান্ড উপসাগর বরফে ঢাকা না থাকত তখন এবং এটি তার কর্মসময়ের সবটুকুই কাটিয়েছে বাল্টিক নৌবহরে, যার খুব কমই জানা সম্ভব হয়েছে। ১৯০০ সালে একে নৌবাহিনীর তালিকা থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং ১৯০৩ সালে একে কয়লাবাহী জাহাজ হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এর নামকরণ করা হয় বারঝা নং ৩২৪ (Barzha No. 324)। সোভিয়েত কর্তৃক ১৯১৮ সালে পরিত্যক্ত হওয়ার পর ফিন্স কর্তৃক এই জাহাজটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
কল্ডান, ১৮৭০-এর দশকে বা ১৮৮০-এর দশকের শুরুর দিকে
| |
ইতিহাস | |
---|---|
রুশ সাম্রাজ্য | |
নাম: | কল্ডান (Колдун) |
নামকরণ: | সসারার |
নির্মাণাদেশ: | ২৩শে মার্চ ১৮৬৩[Note ১] |
নির্মাতা: | ককেরিল, বেলজিয়াম |
মোট খরচ: | ১,২৩৭,০০০ রুবল |
নির্মাণের সময়: | ৯ই ডিসেম্বর ১৮৬৩ |
অভিষেক: | ৮ই মে ১৮৬৪ |
কার্যসময়: | ১৮৬৫ |
অকার্যকর: | ৬ই জুলাই ১৮৯০ |
Reclassified: | উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জাহাজ হিসাবে, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯২ |
নিমজ্জনের সময়: | ১৭ই আগস্ট ১৯০০ |
নিয়তি: | ১৯০৩ সালে কয়লাবাহী জাহাজ হিসেবে এবং ১৯১৮ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয় |
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
প্রকার ও শ্রেণী: | Uragan-শ্রেণী monitor |
ওজন: | ১,৫০০–১,৬০০ লং টন (১,৫২৪–১,৬২৬ টন) |
দৈর্ঘ্য: | ২০১ ফু (৬১.৩ মি) |
প্রস্থ: | ৪৬ ফু (১৪.০ মি) |
ড্রাফট: | ১০.১৬–১০.৮৪ ফু (৩.১–৩.৩ মি) |
ইনস্টল ক্ষমতা: | |
প্রচালনশক্তি: | ১ শ্যাফট, ১ × ২-সিলিন্ডারবিশিষট horizontal direct-acting বাস্প ইঞ্জিন |
গতিবেগ: | ৬ নট (১১ কিমি/ঘ; ৬.৯ মা/ঘ) |
সীমা: | ১,৪৪০ নটিক্যাল মাইল (২,৬৭০ কিমি; ১,৬৬০ মা) at ৬ নট (১১ কিমি/ঘ; ৬.৯ মা/ঘ) |
লোকবল: | 96–110 |
রণসজ্জা: |
|
অস্ত্র: |
|
বর্ণনা
সম্পাদনাকল্ডান লম্বায় ছিল সবমিলিয়ে ২০১ ফুট (৬১.৩ মি) যার একটি মাস্তুল ছিল ৪৬ ফুট (১৪.০ মি) এবং গভীরতা ছিল ১০.১৬–১০.৮৪ ফুট (৩.১–৩.৩ মি)। এটি ১,৫০০–১,৬০০ লং টন (১,৫০০–১,৬০০ টন) ছিল। ১৮৬৫ সালে তার ক্রু সংখ্যা ছিল ৮ জন অফিসার এবং ৮৮ জন নাবিক। ১৮৭৭ সালে তা বেড়ে হয় ১০ জন অফিসার এবং ১০০ জন নাবিক।[১]
জাহাজটিতে দুই সিলিন্ডারবিশিষ্ট দুইটি সক্রিয় বাস্প ইঞ্জিন যোগ করা হয়েছিল, যা বেলজিয়ান ককেরিল কোম্পানি কর্তৃক তৈরি হয়েছিল।[১] এর ছিল একটি প্রপেলার (এটি ঘুরলে জাহাজ সামনে যায়) যা বাস্প দ্বারা চালিত হত যা দুইটি আয়তাকার বয়লার থেকে প্রাপ্ত।[২] [৩] জাহাজের ইঞ্জিনের সঠিক কর্মক্ষমতা সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়নি, যদিও ধারণা করা হয় এটি ছিল ৩৪০–৫০০ অশ্বশক্তি (২৫৪–৩৭৩ কিওয়াট) যা তখনকার সময়ে একই প্রকারের অন্যান্য জাহাজের ছিল। ২১ জুলাই, ১৮৬৪ এ কল্ডানের সমুদ্র মহড়ার সময় এটি সর্বোচ্চ ৬ নট (১১ কিমি/ঘ; ৬.৯ মা/ঘ) গতি লাভ করে। জাহাজটি সর্বোচ্চ ১৯০ লং টন (১৯০ টন) কয়লা বহনে সক্ষম ছিল যা তাকে ১,৪৪০ নটিক্যাল মাইল (২,৬৭০ কিমি; ১,৬৬০ মা), ৬ নট (১১ কিমি/ঘ; ৬.৯ মা/ঘ)[৪] গতিতে যেতে সাহায্য করত।
কল্ডানের নকশা করা হয়েছিল এমনভাবে যাতে তা একজোড়া ৯-ইঞ্চি (২২৯ মিমি) 'স্মুথবোর মাজেল লোডিং' বা নলের অগ্রভাগে গোলা প্রবেশ করানো এমন অস্ত্র বহন করতে পারে যা ক্র্য় করা হয়েছিল জার্মানির ক্রুপ থেকে এবং পরে তা রাশিয়ায় যোগ করা হয়, যদিও তা অনেক দেরীতে হয় । এর ফলে জাহাজটির কার্যকরী ক্ষমতার ঘাটতি দেখা দেয় এবং পরে তা ১৫-ইঞ্চি (৩৮০ মিমি) স্মোথবোর মাজল লোডিং রোডমন বন্দুক দ্বারা পরিবর্তন করা হয় ১৮৬৭-৬৮ সালে। রডম্যান বন্দুকগুলো পরবর্তীতে ১৮৭৬ এ পূর্বের নয় ইঞ্চি রাইফেল দিয়ে বদল করা হয়।[৫]
আরগান শ্রেণীর মনিটরের সকল পেটা লোহার বর্ম, পাজাইক শ্রেণীর জাহাজের মত ১-ইঞ্চি (২৫ মিমি) পাত যুক্ত ছিল। জাহাজের ধার সম্পূর্ণরূপে তিন থেকে পাঁচটি সুরক্ষা বর্ম পাতের আবরন দ্বারা ঢাকা ছিল, যার মধ্যে তিনটি পাতই ৪২ ইঞ্চি (১.১ মি) করে জলসীমার নিচে বর্ধিত ছিল। সুরক্ষা বর্মটি একটি ৩৬ ইঞ্চি (৯১৪ মিমি) পুরু কাঠের বিমের মাধ্যমে যুক্ত ছিল। এর উপরিভাগের গান ট্যারট এবং পাইলট হাউস সুরক্ষিত ছিল ১১ ইঞ্চি (২৭৯ মিমি) আবরন দিয়ে।ছ্য় স্তরের বাঁকানো পুরু পাত দিয়ে সুরক্ষিত ছিল এর সর্বনিম্ন মুল বিন্দু থেকে ডেক এর ৭ ফুট (২.১ মি) উচ্চতা পর্যন্ত। ঊরাগান জাহাজগুলির ডেক তার পূর্বসূরিদের মত বর্ম যুক্ত না হলেও কল্ডান-এর ডেক ০.৫-ইঞ্চি (১২.৭ মিমি) পুরু সুরক্ষার পাত দ্বারা আবৃত ছিল। [৬]
নির্মাণ এবং কর্মজীবন
সম্পাদনাকল্ডানের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৯ নভেম্বর, ১৮৬৩ সালে, যা শুরু করে বেলজিয়ান ফার্ম ককেরিল যাতে সেন্ট পিটারসবারগে এর সংযোজন কাজ সম্পন্ন হতে পারে। জাহাজটি পাতা হয় ৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩ সালে এবং তার যাত্রা শুরু হয় ৮ মে, ১৮৬৫ সালে। এর কর্মজীবন শুরু হয় ১৮৬৫ এ এবং এর সম্পূর্ণ নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ১,২৩৭,০০০ রুবেল, যা ছিল তার নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী খরচের প্রায় দ্বিগুণ (৬ লাখ রুবেল) । নিয়োগের পরপরই তাকে পাঠানো হয় বাল্টিক সাগরের বহরে , যেখানে ল্যাটনিক বাদে কল্ডানের অন্যান্য সমসাময়িক জাহাজকে পাঠানো হয় সুইডেনের স্টকহোমে , জুলাই-আগস্ট ১৮৬৫ এ, জেনারেল এডমিরাল গ্র্যাণ্ড ডিউক কন্সটান্টিন নিকলায়েভিচ এর নির্দেশে।[৭]
কল্ডানের নির্মাণ শেষ হওয়ার কিছু পরে একটি ৫ ইঞ্চি (১২৭ মিমি) পুরু এবং ১৫ ইঞ্চি (৩৮১ মিমি) লম্বা একটি বর্ম যুক্ত রিং এই জাহাজের সাথে যুক্ত করা হয় এর বেসের ত্যারটের সাথে যাতে স্প্লিন্টার জ্যাম না হয়ে যায়। পরে, একটি বর্ম যুক্ত বুলওয়ারক-এর সাথে যুক্ত করা হয় জাহাজের ক্রুদের সুরক্ষার জন্য। আরও পরে, ১৮৭০ এর দিকে তিনটি স্পন্সন এতে যোগ করা হয়। প্রতিটি স্পন্সন একটি ছোটো বন্দুকের সাথে যুক্ত যা টর্পেডো জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হত। ১৮৭০-এর দশকে এই জাহাজে যুক্ত হয় আরও একটি অস্ত্র। [৮]
এ জাহাজের কর্মজীবন নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা না গেলেও বলা হয়ে থাকে যে শীতকালে যখন ফিনল্যান্ড উপসাগর বরফে ঢেকে যেত তখন এই জাহাজ কর্মহীন থাকত। কল্ডানকে পরবর্তীতে আয়রনক্লাডের উপকূল রক্ষায় নিয়োগ করা হয় ১৮৯২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে এবং ৬ জুলাই, ১৯০০ এ একে ক্রন্সটাড পোর্টে পরিত্যক্ত করা হয়, যদিও এর ভাঙ্গার কাজ ১৯০৩ সাল নাগাদ শুরু হয়। জাহাজতিকে কয়লাবাহী জাহাজ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় এর বিভিন্ন বর্ম এবং অস্ত্র অপসারনের পর।[৯] একে বারঝা নং ৩১, বারঝা নং ৫০ এবং ১৯১৪ সালে বারঝা নং ৩২৩ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা হয়। সোভিয়েতরা একে পরিত্যক্ত করে যখন তারা ফিনল্যান্ড হতে সৈন্য সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ১৯১৮ সালের এপ্রিলে। পরে জাহাজটি ফিন কোম্পানি দ্বারা ভেঙ্গে ফেলা হয়। [১০]
টীকা
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Chesneau, Roger & Kolesnik, Eugene M., সম্পাদকগণ (১৯৭৯)। Conway's All the World's Fighting Ships 1860-1905। Greenwich, UK: Conway Maritime Press। আইএসবিএন 0-8317-0302-4।
- McLaughlin, Stephen (২০১২)। "Russia's American Monitors: The Uragan Class"। John Jordan। Warship 2012। London: Conway। পৃষ্ঠা 98–112। আইএসবিএন 978-1-84486-156-9।