রুদাকি

পারস্য দেশী কবি

আবু আব্দুল্লাহ জাফর ইবনে মুহাম্মদ আল রুদাকি (Persian: ابو عبدالله جعفر بن محمد رودکی‎; ) একজন পারস্য দেশী কবি। তাকে আধুনিক ফারসী ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি রুদাকি নামেই সমধিক পরিচিত। ‘এডাম অব পোয়েট’ অর্থাৎ ‘কবিতার জনক’ বলেও তাকে ডাকা হয়।[]

আবু আব্দুল্লাহ জাফর আল রুদাকি
কবিতার জনক (এডাম অব পোয়েট)
জন্ম৮৫৯
রুদাকি, সামানি সাম্রাজ্য (বর্তমান তাজিকিস্তান)
মৃত্যু৯৪১ (বয়স ৮৩)
রুদাকি, সামানি সাম্রাজ্য
বিতর্কফার্সি সাহিত্য
ঐতিহ্য বা ধরন
গজল, কাসিদা, রুবাই
উল্লেখযোগ্য কর্ম"Lament in Old Age", "Mother of Wine", কালিলা va ডিমনা

রুদাকি প্রথম আধুনিক ফারসী বর্ণমালায় কবিতা রচনা করেছিলেন এবং একারণেই শাস্ত্রীয় ফারসী সাহিত্যের জনক বলা হয়। তার কবিতায় কোয়ারেন সহ পার্সিয়ান কবিতার প্রাচীনতম ঘরানার অনেকগুলি উপস্থিত রয়েছে[] তার কাব্য সম্ভারের খুব অল্প অংশই এখন পাওয়া যায়। তবে ধারণা করা হয় নবম শতাব্দিতে রুদাকির মধ্যে কবিতা, গান, আবৃত্তি এবং কবি লেখক সত্তার যে সংমিশ্রণ ঘটেছিলো সেটা তার পূর্বে আর কারো মধ্যে এভাবে পাওয়া যায়নি।[] রাজসভায় তাই তিনি ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

জীবন বৃত্তান্ত

সম্পাদনা
 
তাজিকিস্থানের মুদ্রায় রুদাকির প্রতিচ্ছবি।

প্রথম জীবন

রুদাকি ৮৫৯ সালে ইরানের খোরাসান শহরের রুদক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] রুদক গ্রাম তখন সামানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো যা বর্তমানে তাজিকিস্থানের অন্তর্গত। জীবনীকারদের অনেকেই বলেছেন তিনি পুরোপুরি অন্ধ ছিলেন, তবে তার কবিতায় রংয়ের যে বিবরণ পাওয়া যায় তাতে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কারো কারো ধারণা হয়তো জীবনের কোন এক পর্যায়ে অন্ধ হয়ে থাকতে পারেন।

সামানি রাজসভা

প্রথম জীবনেই তার প্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং খোরাসান এবং ট্রান্সঅক্সিয়ানার শাসক সামানি সম্রাট দ্বিতীয় নসর ইবনে আহমদের কাছে তার সুনাম পৌছে যায়। তিনি রুদাকিকে তার রাজসভায় আমন্ত্রন জানান। রুদাকি তার নিত্য সহচরে পরিণত হন। অর্থবিত্ত এবং সম্মানের অধিকারী হন। ফার্সি সাহিত্যের জনক হিসেবে তাকে সম্মান দেয়া হয় যদিও তার পূর্বে আরো অনেকেই এই সম্মান পাবার জন্য উৎসুক ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম মহাকাব্য, গীত, এবং তাত্ত্বিক কবিতায় এর বিচিত্র ধরন এবং এর স্বতন্ত্র চরিত্রকে প্রভাবিত করেছিলেন। আরও বলা হয় যে তিনি দিওয়ানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা কম বেশি বর্ণানুক্রমিকভাবে একটি কবির গীতিকারক রচনার সম্পূর্ণ সংগ্রহের আদর্শ রূপ যা আজও সমস্ত পার্সিয়ান লেখকই ব্যবহার করেন। তিনি চ্যাং (বীণা) -এর খুব পারদর্শী গায়ক এবং বাদকও ছিলেন।[]

শেষ জীবন

রুদাকির শেষ জীবন খুব সুখকর হয়নি। সামানি শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং দ্বিতীয় নসর ইবনে আহমদের পতন ঘটে। একই সাথে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে যান রুদাকি। প্রতিপক্ষের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য নিজ গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই ৯৪০ মতান্তরে ৯৪১ সালে মারা যান। মারা যাবার পূর্বে বেশ অর্থকষ্টে নিপতিত হন। তার শেষ জীবনের কবিতার মধ্যে এই বেদনাক্লিস্ট ভাব বেশ ফুটে ওঠে।

কাব্য চর্চা

সম্পাদনা

রুদাকি খুবই সাধারণ ধাঁচের কবিতা লিখতেন কিন্তু আশা এবং আনন্দের সংমিশ্রণে সেগুলোই অভাবনীয় ব্যঞ্জনা তৈরী করতো। শেষ জীবনে কবিতায় ঠিক বিপরীত ধারা চলে আসে। হৃদয়স্পর্শী বেদনার গল্প স্থান পায় কবিতা জুড়ে।

মেঘের দিকে তাকাও, দেখো শোকের স্তুতি,
বজ্রনিনাদ যেন প্রেমিকের আর্তনাদ।
মেঘের আড়াল ভেদে রবির প্রস্ততি।
যেভাবে বন্দি খোঁজে মুক্তির স্বাদ[]

রুদাকির কবিতাগুলিতে জাতিগত সমতা; ইরানীদের স্বাধীনতা; কিংবদন্তি, পৌরাণিক এবং জাতীয় বীরদের সহ সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সামাজিক পটভূমি উঠে এসেছে। সমসাময়িক আরবরা যে বিষয়ের অভাব বোধ করছিল, প্রাক-ইসলামী যুগের উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্যমূলক পুনর্জাগরণ, বিজ্ঞানবাদ, যুক্তিবাদ এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উপর জোর দেওয়া, এর সমস্ত কিছুই তার কবিতায় স্থান পায়।[]

তাঁর সৃস্ট ১,৩০০,০০০ শ্লোকের মধ্যে[] মাত্র ৫২ টি কাসিদা, গজল এবং রুবাই অক্ষত ছিল। স্থানীয় অভিধানের কিছু লুপ্তপ্রায় লাইনের বাইরে তাঁর মহাকাব্যগুলোর কিছুই আর নেই বলা যায়। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে আল-মুকফার প্রাচীন রূপকথা গ্রন্থ কালীলা ও ডিমনার (পঞ্চতন্ত্র) আরবি সংস্করণ অনুবাদ যা তাঁর রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকের অনুরোধে তিনি পারস্যের শ্লোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তবে বেশ কিছু টুকরো টুকরো অংশ আসাদি তুসি (লুঘাট আল-ফার্স, এড। পি। হর্ন, গ্যাটিংজেন, 1897) এর পার্সিয়ান অভিধানে সংরক্ষিত রয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "About Persian (Farsi)". www.soas.ac.uk. Retrieved 2019-06-12. "A notable feature of Persian is the small extent to which it has changed over the thousand years or more of its existence as a literary language. For example, a modern reader should have no difficulty in reading and comprehending the poems of Rudaki, the first Persian poet of note, who died in the year AD 940"
  2. Sassan Tabatabai, "Father of Persian Verse: Rudaki and His Poetry", Amsterdam University Press, Feb 15, 2011.
  3. "IRAN viii. PERSIAN LITERATURE (2) Classical – Encyclopaedia Iranica". www.iranicaonline.org. Retrieved 2019-03-24
  4. "Rūdakī | Persian poet". Encyclopedia Britannica. Retrieved 2019-03-24.
  5. M. S. Asimov, C. E. Bosworth, The Historical, Social and Economic Setting, Motilal Banarsidass Publ., 1999. "From his early years, Rudaki's poetic gift, his fine voice and his skilled playing on the chang (a harp-like musical instrument) made him popular".
  6. translated from English: Look at the cloud, how it cries like a grieving man/ Thunder moans like a lover with a broken heart. / Now and then the sun peeks from behind the clouds / Like a prisoner hiding from the guard. source:Sassan Tabatabai, "Father of Persian Verse: Rudaki and His Poetry", Amsterdam University Press, Feb 15, 2011
  7. اندیشه های شعوبی در شعر رودکی / محمدرضا یوسفی". cgie.org.ir. Retrieved 2019-03-24.
  8. An invitation to Persian poetry : a bilingual text, Persian-English. Saberi, Reza, 1941- (First ed.). Los Angeles: Ketab Corp. 2006. p. 290. ISBN 1595840907. OCLC 71801236.