রিজিয়া খাতুন
রিজিয়া খাতুন (১৫ জানুয়ারি ১৯৩১ - ১৮ জানুয়ারি ২০২৪) [২] ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন। নড়াইল জেলা থেকে তিনজন নারী ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন এর মধ্যে রিজিয়া খাতুন একজন। ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ শিক্ষার্থীদের স্মরণে নড়াইল জেলা শহরে প্রথম যে ১০-১৫ জন মিলে শহীদ মিনার স্থাপন করে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তিনি তাদের একজন। এছাড়াও ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনে তার পিতা গ্রেফতার হওয়ায় তিনি আন্দোলনকারী বর্গাচাষীদের সাথে অংশ নিয়ে পুলিশ-চাষী সংঘর্ষে সরাসরি অংশ নেন।
রিজিয়া খাতুন[১] | |
---|---|
জন্ম | জানুয়ারি ১৫, ১৯৩১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | নারী ভাষা সৈনিক |
দাম্পত্য সঙ্গী | আবদুর রাজ্জাক |
পিতা-মাতা |
|
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনারিজিয়া খাতুন নড়াইল পৌরসভার ডুমুরতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নুর জালাল এবং মাতার নাম জিন্নাতু নেসা। রিজিয়া নড়াইল শহরের আলাদাতপুর এলাকায় বসবাস করতেন। তেভাগা আন্দোলনের নেতা আব্দুল মালেক উকিল সাহেবের পছন্দে তার বাসায় যশোরের কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশের (সিপিবি) তৎকালিন জেলা সভাপতি এ্যডভোকেট কমরেড আবদুর রাজ্জাকের সাথে বিবাহ বন্ধনে রিজিয়া আবদ্ধ হন। তাদের চার ছেলে এক মেয়ে তন্মধ্যে এক ছেলে সন্তান মৃত্যুবরণ করেছেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন
সম্পাদনারিজিয়া খাতুন ভাষা আন্দোলনের সময় দিলরুবা গার্লস স্কুল বর্তমান নাম নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় -এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ডুমুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহিষখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। [৩] তার বাবা কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় পরিবারে একটা উদার রাজনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান ছিল। ভাষা আন্দোলনের সময় রিজিয়া খাতুনের বাবা তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই অপরাধে তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইসময় চাচা নুরুল আফসারের অনুপ্রেরণায় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রিজিয়া। [৪]
ভাষা সৈনিক
সম্পাদনা১৯৫২ সালে ঢাকায় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন শুরু হলে এর ঢেউ লাগে জেলা শহরগুলোতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে নড়াইলেও শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। সেদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাওরাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এই স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। সেদিন ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য ছাত্রীদের আহ্বান জানালে নড়াইলে মাত্র ৩ জন নারী মিছিলে সরাসরি যোগ দেন। এদের একজন রিজিয়া খাতুন। ভাষা আন্দোলন নিয়ে নড়াইল শহরের মহিষখোলা বর্তমানে নড়াইল সদর এলাকার বাসিন্দা ও তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন মোক্তারের বাড়িতে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। এসব বৈঠকে অংশ নেন রিজিয়া খাতুন, আফসার উদ্দিনের কন্যা সুফিয়া খাতুন ও রুবি। এ বৈঠকে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করার জন্য কাজের পরিকল্পনা নেয়া হতো। রিজিয়া ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে মিছিল-মিটিং এ সক্রিয় ছিলেন। তিনিসহ ১০-১৫ জন শহরের তৎকালীন কালিদাস ট্যাংক (বর্তমান টাউনক্লাব) এরপাশে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। [৫]
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
সম্পাদনা১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর -এ শুরু হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে তেভাগা আন্দোলন। এ আন্দোলনে গ্রেফতার হন রিজিয়া খাতুনের বাবা নুর জালাল। চাচার অনুপ্রেরণায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলন শেষে পিতা নুর জালালের মুক্তির জন্যে ১৯৫৪ সালে নড়াইলের ২০হাজার লোকের একটি জনসভায় পিতা নুর জালালের কারা মুক্তির দাবিতেে রিজিয়া বক্তব্য রাখেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্বীকৃতি ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "আমাদের ভাষা সৈনিকরা"। যায়যায়দিন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯।
- ↑ ভাষাসৈনিক রিজিয়া খাতুন মারা গেছেন, যুগান্তর, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
- ↑ "ভাষা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আজও অস্বীকৃতই রয়ে গেছে"। প্রিয়.কম। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১৬ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯।
- ↑ "৬৪ বছরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলাম না : রিজিয়া খাতুন"। দৈনিক ভোরের কাগজ। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯।
- ↑ "ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি চান নড়াইলের রিজিয়া খাতুন"। দি ঢাকা পোস্ট। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১২ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৯।