রাহুল আনন্দ
রাহুল আনন্দ (জন্ম: ৩০ জুন ১৯৭৬) বাংলাদেশের একজন সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘জলের গান’ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি তার গাওয়া গানের মধ্যে- রঙের গান, ও ঝরা পাতা, পাখির গান, বৃষ্টির গান, বকুল ফুল, বাউলা বাতাস ও দূরে থাকা মেঘ ব্যাপক জনপ্রিয়।[১]
রাহুল আনন্দ | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | রাহুল আনন্দ |
জন্ম | হবিগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ | ৩০ জুন ১৯৭৬
ধরন | লোকসঙ্গীত |
পেশা | সংগীত শিল্পী |
বাদ্যযন্ত্র | বাঁশি ঢোল হারমোনিয়াম দোতারা |
কার্যকাল | ২০০৬-বর্তমান |
ওয়েবসাইট | jolergaan |
ব্যক্তিজীবন
সম্পাদনারাহুল আনন্দ ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন হবিগঞ্জে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পৈত্রিক নিবাস মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায়। নারায়ণগঞ্জে তার স্কুল জীবন কেটেছে । এরপর আবার সিলেটে কলেজ জীবন অতিবাহিত করেন । সেখানেই তাঁর থিয়েটারে যুক্ত হওয়া। এরপর ঢাকায় এসে ভর্তি হন চারুকলায়। পাশাপাশি যুক্ত হন আরণ্যক নাট্যদলে। রাহুল আনন্দ তার স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা[২] ও একমাত্র ছেলে তোতাকে নিয়ে ধানমণ্ডি বত্রিশ নাম্বারের একটি বাড়িতে বসবাস করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর রাহুল আরণ্যক নাট্যদলে যুক্ত হন। এরপর সহশিল্পীদের সঙ্গে গড়ে তোলেন নিজেদের নাট্যদল ‘প্রাচ্যনাট’।[৩] এই থিয়েটারে কাজের সময়েই অনেক গানের মানুষের সঙ্গে রাহুল আনন্দের বন্ধুত্ব হয়। আস্তে আস্তে গানের দিকে ঝুঁকতে থাকেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে ‘জলের গান’ নাম নিয়ে নতুন গানের গানের দলের যাত্রা শুরু করেন রাহুল আনন্দ ও তার সহশিল্পীরা।[১] রাহুল আনন্দ মূলত একাধিক বাদ্যযন্ত্র যেমন- বাঁশি, ঢোল, দোতারা, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাঁজাতে পারদর্শী।[৪] এছাড়াও তিনি ও তার গানের দল জলের গান নিজেদের বানানো বাদ্যযন্ত্র দিয়েই সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন।[১]
উল্লেখযোগ্য পারফর্মেন্স
সম্পাদনাফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বাংলাদেশ সফরে এসে ২০২৩ সালে ১০ সেপ্টেম্বর, মাঝরাতে রাহুল আনন্দের বাড়িতে আসেন । সেখানে জলের গানের স্টুডিও পরিদর্শন করেন, মিউজিক নিয়েও অনেক আলোচনা করে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় কাটান।[৫][৬] রাহুল তাঁর সামনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিনিময় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে।" রাহুল আনন্দ ছাড়াও বাংলাদেশের আরও তিন শিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারার সঙ্গে কথা বলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি।[৭]
হামলা
সম্পাদনা২০২৪ এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দমনপীড়নের জন্য ছাত্র আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়৷ যার ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করেন।[৮] এরপর পুরো দেশ জুড়ে একদিকে যেমন আনন্দের বাতাবরণ বয়ে যায়।[৯] অন্যদিকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়[১০], সংগীত শিল্পীদের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উপাসনালয়,[১১], বিভিন্ন ভাষ্কর্য,[১২] সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে[১৩]ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসন্ত্রাস হয়।
ধানমণ্ডি ৩২ নং রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে এবং জাদুঘরের আশেপাশের একাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তরা লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে[১৪]। জাদুঘরের দেয়াল ঘেষা রাহুল আনন্দের ভাড়া বাড়িতেও দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তার নিজের তৈরী সংগ্রহ করা সহস্রাধিক যন্ত্র ভেঙে ফেলা হয়। পুড়িয়ে ফেলা হয় সম্পুর্ণ ঘর। এর পূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নিজের দলের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।[১৫] হামলা হওয়ার আগে রাহুলের বাড়িতে কিছু দুর্বৃত্ত এসে তাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য বললে রাহুল তাদের জন্যই গান করে বলে জানায় এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। তথাপি দুর্বৃত্তরা তাকে বেরিয়ে যেতে বলে। স্ত্রী পুত্র নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার বাড়িতে সহিংসতা হয়।[১৬] অনেক সংগীত শিল্পী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান৷ সংগীত শিল্পী অর্ণব সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে বিষয়টিকে শেয়ার করে বলেন, খাল কেটে কোন কুমির আনলাম আমরা?[১৭] পারিবারিক বন্ধুসূত্রে, রাহুল এবং তার স্ত্রী পরবর্তীতে জানান এই আগুন সাম্প্রদায়িক কারণে বা শুধুমাত্র তাদের লক্ষ্য করে লাগানো হয় নি। ৩২ নং রোডে অবস্থিত একাধিক বাড়িতে আগুন লাগানোর সময় রাহুলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।[১৮][১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "জলের গানের রাহুল!"। আনন্দ আলো। ২০১৮-১২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫।
- ↑ "সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রাহুল আনন্দ"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২২-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫।
- ↑ "শুভ জন্মদিন রাহুল আনন্দ"। ক্যাম্পাস টুডে। ২০২০-০৬-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ফেসবুকে রাহুল আনন্দের 'পাতাকাহিনি'"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫।
- ↑ "মধ্যরাতে জলের গান খ্যাত রাহুলের স্টুডিওতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট, কী উপহার দিলেন?"। Eisamay। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৬।
- ↑ "মধ্যরাতে জলের গান খ্যাত রাহুলের স্টুডিওতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট, কী উপহার দিলেন?"। Eisamay। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৮।
- ↑ "জলের গান"। উইকিপিডিয়া। ২০২৩-০৮-২৭।
- ↑ প্রতিবেদক, বিশেষ (৫ আগস্ট ২০২৪)। "পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ Pratidin, Bangladesh (৬ আগস্ট ২০২৪)। "দেশজুড়ে আনন্দ উল্লাস"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ডেস্ক, বিশাল বাংলা (৬ আগস্ট ২০২৪)। "দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকান-উপাসনালয়ে হামলা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ডেস্ক, বিশাল বাংলা (৬ আগস্ট ২০২৪)। "দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকান-উপাসনালয়ে হামলা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "সুপ্রিম কোর্টে থেমিসের ভাস্কর্য ভাঙচুর"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকার ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র"। ৭ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ "রাহুল আনন্দের বাড়ি পোড়ানো বিষয়ে যা বললেন তার স্ত্রী"। www.kalerkantho.com। আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, বিনোদন (৭ আগস্ট ২০২৪)। "স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় রাহুল আনন্দকে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "জলের গানের রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুন, লুটপাট"। জলের গানের রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুন, লুটপাট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ Ananda, A. B. P. (৬ আগস্ট ২০২৪)। "'আমাদের সকলের প্রিয় বাড়িটি নেই', ব্যান্ডের পোস্টে সিলমোহর, গায়ক রাহুল আনন্দের বাড়ি পুড়ে ছাই"। bengali.abplive.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, বিনোদন (১৩ আগস্ট ২০২৪)। "'রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই'"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২৪।