রাস ফুল বা (সংস্কৃত: কুরুন্টক)  (বৈজ্ঞানিক নাম: Barleria cristata - বারলেরিয়া ক্রিস্টাটা) হলো অ্যাক্যানথেসি (Acanthaceae) পরিবারের এক প্রজাতির উদ্ভিদ। এই প্রজাতির উদ্ভিদটি ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় এশিয়ায় পাওয়া যায়। ঝোপাকৃতির এই উদ্ভিদ প্রাথমিকভাবে মৌসুমী শুষ্ক গ্রীষ্মমন্ডলীয় বায়ুমণ্ডলে বৃদ্ধি পায়। ভেষজ গুণের জন্য ওষুধ হিসাবে, পরিবেশগত ব্যবহার এবং খাবারের জন্য ব্যবহৃত হয়।[] এই সপুষ্পক উদ্ভিদ ভারত, নেপাল, দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন এবং মায়ানমারেও পাওয়া যায়। বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তথা রাস-পূর্ণিমা উৎসবের নামাঙ্কিত শীতকালীন ফুল গাছটি ভারত ও বাংলাদেশের সমতলভূমির সরস মাটিতে প্রচুর জন্মায়। উদ্ভিদটির ভেষজ গুণ আছে।

রাসফুল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
জগৎ/রাজ্য: প্লান্টি (Plante)
গোষ্ঠী: ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes)
ক্লেড: সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস)
ক্লেড: ইউডিকটস
গোষ্ঠী: অ্যাস্টেরিডস (Asterids)
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Acanthaceae
গণ: Barleria
L.
প্রজাতি: B. cristata
দ্বিপদী নাম
Barleria cristata
L.
ভারতের তেলেঙ্গানার ভিকারাবাদ জেলার অনন্তগিরি পাহাড়ে ।
ফিলিপাইন ভায়োলেট

বিতরণ এবং বাসস্থান

সম্পাদনা

এটি দক্ষিণ চীন থেকে ভারত এবং মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। গ্রামে এবং বাগানের শোভাবর্ধনে বাহারি উদ্ভিদ হিসাবে চাষ করা। হাওয়াইয়ের শুষ্ক আবহাওয়ায় উদ্ভিদটি আবাসভূমি হয়ে উঠেছে। ফিজিতে এটি "টমবিথি" নামে পরিচিত। এবং ভারত মহাসাগরের ক্রিসমাস দ্বীপে পথের পাশে এবং সমুদ্রতটের কাছাকাছি জায়গা হতে ১০০ মিটার পর্যন্ত অঞ্চলে বন্য প্রজাতি হিসাবে জন্মায়। [] দক্ষিণ ভারতে, ফুলটি ডিসেম্বর মাসে প্রস্ফুটিত হয় বলে দক্ষিণ ভারতে এটি 'ডিসেম্বরের ফুল' নামে পরিচিত। মহিলারা সাধারণত ফুলের মালা হিসাবে তাদের চুলে পরে থাকেন। তেলেগু ভাষায় এই ফুলকে 'ডেসেম্বারালু' বলা হয়, তামিল ভাষায় এর পরিচয় 'ডিসেম্বর পু' নামে।

বর্ণনা

সম্পাদনা

এই উদ্ভিদের কাণ্ড ৬০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ঝোপের মত বেড়ে ওঠে। উদ্ভিদটির ৩-৫ ইঞ্চির (৭-১২ সেমি) উপবৃত্তাকার বা সরু ডিম্বাকৃতি পাতাগুলির উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ এবং নীচের পৃষ্ঠ ফ্যাকাশে সবুজ। ৫ সেন্টিমিটার লম্বা নলাকার ফুল অনেকটা রজনীগন্ধা ফুলের মত, তবে পাপড়ি পাতলা। ফুলের রঙ সাদা ছাড়াও বেগুনি, গোলাপী রঙের হয়ে থাকে। সাদা রঙের ফুল 'শ্বেত ঝাঁটি' (ইংরাজীতে হোয়াইটবেল বারলেরিয়া) (সংস্কৃত নাম শ্বেত-কুরুন্টক) নামেও পরিচিত। অন্যদিকে বেগুনী রঙের রাস ফুল 'ফিলিপাইন ভায়োলেট' , 'ব্লুবেল বারলেরিয়া' বা 'ক্রেস্টেড ফিলিপাইন ভায়োলেট' নামে পরিচিত।

বীজ থেকে উদ্ভিদটির বংশবৃদ্ধি হয়। বর্ষার শুরুতে চারা বের হয়, গ্ৰীষ্মে গাছ শুকিয়ে যায়। তবে সরস উর্বর জমিতে একাধিক বছর‌ও উদ্ভিদটিকে বেঁচে থাকতে দেখা যায়। শীতের শেষে সমগ্ৰ উদ্ভিদ ছোট ছোট করে কেটে ছায়ায় শুকনো করে বায়ুরোধক পাত্রে বা ব্যাগে ভরে রাখতে হয়।

উপযোগিতা

সম্পাদনা

থাইল্যান্ডে อังกาบ নামে পরিচিত, এই উদ্ভিদটি ঐতিহ্যগতভাবে ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি টনিক, মূত্রবর্ধক এবং রক্ত ​​পরিশোধক হিসাবে কাজ করে। ঔষধ হিসাবে, নিরাপদ এবং অ-বিষাক্ত এই উদ্ভিদের গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য, ইঁদুরের উপর গবেষণা করা হয়েছিল এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ডোজ সহ কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা মৃত্যু পাওয়া যায়নি। []

গ্যালারি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Kew Science - Plants of the world online - Barleria cristata L"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৫ 
  2. Pacific Island Ecosystems at Risk (PIER)
  3. Kumar, Harish; Agrawal, Rohini (২০১৮)। "Barleria cristata: Perspective towards phytopharmacological aspects": 475–487। ডিওআই:10.1111/jphp.12881