রবীন চট্টোপাধ্যায়
রবীন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক যিনি প্রায় ৯০টির বেশি চলচ্চিত্রে সুরারোপ করেছিলেন। তিনি ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে জনপ্রিয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। রবীন চট্টোপাধ্যায় ১৯৪২ সালের পরিণীতা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত রচনা থেকে শুরু করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে গোধূলী, বিপাশা, সাগরিকা, কমললতা, দ্বীপের নাম টিয়া রং ইত্যাদি চলচ্চিত্রে সুন্দর চিরসবুজ গানের সুর রচনা করেছিলেন।[১]
রবীন চট্টোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | কলকাতা, ভারত | ৮ জানুয়ারি ১৯১৪
মৃত্যু | ২ এপ্রিল ১৯৭৬ কলকাতা, ভারত | (বয়স ৬২)
ধরন | বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র সঙ্গীত |
পেশা | সঙ্গীত পরিচালক |
সঙ্গীত জীবন
সম্পাদনারবীন চট্টোপাধ্যায় ৮ জানুয়ারি ১৯১৪ সালে বাংলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিন্দুস্তানি সঙ্গীত কোম্পানিতে সঙ্গীত পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন, তার আগে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪২ সালে চলচ্চিত্র পরিণীতার মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ এবং গানগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি বাংলা এবং হিন্দি ভারতীয় চলচ্চিত্রে অনেক নেপথ্য কণ্ঠশিল্পীর সাথে কাজ করেছিলেন। হিন্দি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে তালাত মেহমুদ রাজলক্ষ্মী (১৯৪৫) চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।[২]
রবীন চট্টোপাধ্যায় ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে চলচ্চিত্র পরিচালক অগ্রদূতের সাথে বেশির ভাগ সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছিলেন এবং তাদের কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে -
- সবার উপরে (১৯৫৫) - চলচ্চিত্রটির গানগুলির মধ্যে ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া "ঘুম ঘুম চাঁদ" এবং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়া "কাঁটার আঘাতে ছিন্ন পায়ে রক্ত ঝরে" গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।[৩]
- পথে হলো দেরি (১৯৫৭) - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া এবং তাঁর সুরে জনপ্রিয় গানগুলি হল "এ শুধু গানের দিন", " এই ছায়া ঘেরা লগনে আজ কে ডাকে আমার" এবং "তুমি না হয় রহিতে কাছে"।[৪]
- লালু ভুলু (১৯৫৯) - চলচ্চিত্রের সমস্ত গানগুলি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন, যার মধ্যে "এই প্রাণ ঝরনা জাগল" , "দুঃখ আমার শেষ করে দাও" , " দুঃখের পথে নামলি যদি" , "আকাশ মোর আলোয় দিয়েছো ভোরে", "যার হিয়া আকাশের" এবং "সূর্য তোমার সোনার তোরণ" ।
- বিপাশা (১৯৬২) - চলচ্চিত্রে তাঁর সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান "ক্লান্তির পথ বুঝিরা ফুরালো", এবং "আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি"।[৩]
১৯৫৫ সালে, তিনি গোধুলী চলচ্চিত্রের জন্য সুর করেছিলেন তার মধ্যে একটি গান ছিল "পিয়া পিয়া পিয়া কে ডাকে আমারে"। ১৯৫৭ সালে, তিনি উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত সুপারহিট চলচ্চিত্র সাগরিকার জন্য সুর করেছিলেন। সেই ছবিতে শ্যামল মিত্র গান গেয়েছিলেন "আমার স্বপ্নের দেখা রাজকন্যা থাকে" গানটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।[১]
এছাড়া তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, আরতি মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, গীতা দত্ত, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, এবং উৎপলা সেনের মতো অনেক বাঙালি গায়কগায়িকার সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
রবীন চট্টোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়কে প্রথম সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং তিনি একটি গানের প্রতিযোগিতায় সেলিব্রিটি বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে আরতি মুখোপাধ্যায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিল। তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য গান গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং পরে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে একজন জনপ্রিয় প্লেব্যাক গায়িকা।
সুরকার হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনা- পরিণীতা (১৯৪২)
- অভয়ের বিয়ে (১৯৪২)
- সমাধান (১৯৪৩)
- পথ বেঁধে দিল (১৯৪৫)
- স্বপ্ন ও সাধনা (১৯৪৭)
- সমপিকা (১৯৪৮)
- সাধরণ মেয়ে (১৯৪৮)
- বঙ্কলেখা (১৯৪৮)
- অনির্বাণ (১৯৪৮)
- সিংহদ্বার (১৯৪৯)
- সংকল্প (১৯৪৯)
- সমর্পন (১৯৪৯)
- নিরুদ্দেশ (১৯৪৯)
- বিদুষী ভার্য্যা (১৯৪৯)
- অভিজাত্য (১৯৪৯)
- বিদ্যাসাগর (১৯৫০)
- সহোদর (১৯৫০)
- বানপ্রস্থ (১৯৫০)
- সহযাত্রী (১৯৫১)
- রত্নদীপ (১৯৫১)
- প্রত্যাবর্তন (১৯৫১)
- নষ্টনীড় (১৯৫১)
- বাবলা (১৯৫১)
- সুভদ্রা (১৯৫২)
- সবার উপরে (১৯৫৫)
- পরিশোধ (১৯৫৫)
- গোধূলি (১৯৫৫)
- সাহেব বিবি গোলাম (১৯৫৬)
- সাগরিকা (১৯৫৬)
- ফাল্গু (১৯৫৬)
- যাত্রা হল শুরু (১৯৫৭)
- হার জিত (১৯৫৭)
- অভয়ের বিয়ে (১৯৫৭)
- পথে হলো দেরি (১৯৫৭)
- তানসেন (১৯৫৮)
- জল-জঙ্গল (১৯৫৯)
- শুন বরনারী (১৯৬০)
- শহরের ইতিকথা (১৯৬০)
- ইন্দ্রধনু (১৯৬০)
- উত্তর মেঘ (১৯৬০)
- স্মৃতি টুকু থাক (১৯৬০)
- মায়ার সংসার (১৯৬২)
- কাজল (১৯৬২)
- বিপাশা (১৯৬২)
- অভিসারিকা (১৯৬২)
- উত্তরায়ণ (১৯৬৩)
- উত্তর ফাল্গুনী (১৯৬৩)
- সূর্যশিখা (১৯৬৩)
- দ্বীপের নাম টিয়া রং (১৯৬৩)
- আকাশ প্রদীপ (১৯৬৩)
- মোমের আলো (১৯৬৪)
- জয়া (১৯৬৫)
- শুধু একটি বছর (১৯৬৬)
- হারানো প্রেম (১৯৬৬)
- প্রস্তর স্বাক্ষর (১৯৬৭)
- গৃহদাহ (১৯৬৭)
- বৌদি (১৯৬৮)
- আরোগ্য-নিকেতন (১৯৬৯)
- কমললতা (১৯৬৯)
- অপরিচিত (১৯৬৭)
- কলঙ্কিত নায়ক (১৯৭০)
- খুঁজে বেড়াই (১৯৭১)
- নায়িকার ভূমিকায় (১৯৭২)
- দুরন্ত জয় (১৯৭৩)
সুরকার হিসেবে হিন্দি চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনা- রত্নদীপ (১৯৫১)
- রত্না দীপম (তামিল) (১৯৫১)
- পেহলি সাধি (১৯৫৩)
- ফেরদৌস (১৯৫৩)
- মজবুরি (১৯৫৪)
- সাইয়ান সে ভাইলে মিলনভা (ভোজপুরি) (১৯৬৪)
- আরজু (১৯৬৫)
- চিমনি কা ধুয়া (১৯৭৩)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Robin Chatterji"। Cinemaazi (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ "Robin Chatterjee – Atul's Song A Day- A choice collection of Hindi Film & Non-Film Songs"। Atul’s Song A Day- A choice collection of Hindi Film & Non-Film Songs (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ ক খ "Robin Chatterjee Songs: Listen Robin Chatterjee Hit Songs on Gaana.com"। Gaana.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ "Listen to Top 5 Bengali Songs Of Sandhya Mukherjee & Robin Chatterjee (Audio Jukebox) | Bengali Video Songs - Times of India"। timesofindia.indiatimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ https://www.moviebuff.com/robin-chatterjee