রন স্যাগার্স
রোনাল্ড আর্থার স্যাগার্স (ইংরেজি: Ronald Arthur Saggers; জন্ম: ১৫ মে, ১৯১৭ - মৃত্যু: ১৭ মার্চ, ১৯৮৭) নিউ সাউথ ওয়েলসের মারিকভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সময়কালে অস্ট্রেলীয় দলে সংক্ষিপ্তকালের জন্য ছয় টেস্টে অংশ নেন। তার টেস্ট ক্রিকেট জীবনে ২৪ ডিসমিসাল (১৬ ক্যাচ ও ৮ স্ট্যাম্পিং) এবং ১০.০০ গড়ে ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।[১] এছাড়াও, নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন রন স্যাগার্স।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | রোনাল্ড আর্থার স্যাগার্স | |||||||||||||||||||||
জন্ম | মারিকভিল, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | ১৫ মে ১৯১৭|||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৩ মে ১৯৮৭ হারবোর্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স ৬৯)|||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বিশেষজ্ঞ উইকেট-রক্ষক | |||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১৮২) | ২২ জুলাই ১৯৪৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৩ মার্চ ১৯৫০ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | |||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||
১৯৩৯–১৯৫১ | নিউ সাউথ ওয়েলস | |||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ আগস্ট ২০১৭ |
উইকেট-রক্ষক হিসেবে স্যাগার্স ‘সুচারু ও মুখচোরা প্রকৃতির’ ছিলেন এবং ১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফরে ডন টলনের সাফল্যে তিনি ম্লান হয়ে যান।[২][৩] দলনায়ক ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ মৌসুমে সফরকারী দল ‘অপরাজেয়’ বা ‘অজেয়’ ডাকনামে পরিচিতি পায় এবং বৈশ্বিক ক্রিকেট অঙ্গনে অন্যতম শক্তিশালী দলের মর্যাদা লাভ করে।[৪] হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে স্যাগার্স অংশ নেন ও তিনটি ক্যাচ পান। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের সদস্যরূপে অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করেন যাতে সবগুলো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। স্যাগার্স পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই অংশ নেন ও ২১ ডিসমিসাল লাভ করেন। কিন্তু, পরের মৌসুমে স্বদেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে টলন তার স্থলাভিষিক্ত হন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে স্যাগার্স ১৯৪৮ সালে নিয়মিত অধিনায়ক ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অংশগ্রহণকারী আর্থার মরিসের পরিবর্তে দুইবার নিউ সাউথ ওয়েলস দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৩৯ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটের সবগুলো খেলায় অংশ নেন।[১]
ঘরোয়া জীবন
সম্পাদনা১৯১৭ সালে সিডনির কাছাকাছি মারিকভিল এলাকায় স্যাগার্স জন্মগ্রহণ করেন।[৫] ১৯৪১ সালে আনানডেল এলাকায় মার্গারেট হিদার (বিবাহ-পূর্ব র্যাঙ্কিন) নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।[৬] ক্রিকেটের বাইরে স্যাগার্স বীমা শিল্পে কাজ করেছেন।[৭]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯৩৭ সালে স্যাগার্স দুইবার নিউ সাউথ ওয়েলস কোল্টস দলের হয়ে কুইন্সল্যান্ড কোল্টসের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করেন। এরপূর্বে তিনি সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মাঝামাঝি সময় থেকে সাউদার্ন রেডব্যাকসের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটিয়ে জানুয়ারি, ১৯৪০ সাল পর্যন্ত খেলেন।[৮] বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলার জন্য নির্বাচিত হন ও ভবিষ্যতের সার্ভিসেস খেলোয়াড় স্ট্যান সিসমে উইকেট রক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। অভিষেক খেলায় ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৫ ও ৫৭ রান তুলেছিলেন।[৯] মৌসুম শেষ হবার পূর্বে তিনি আরও দু’টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। মৌসুম শেষে ৩৪.৬৬ গড়ে ২০৮ রান সংগ্রহসহ স্ট্যাম্পের পিছনে তিনটি ক্যাচ নিয়েছিলেন।[১০]
১৯৪০-১৯৪১ মৌসুমে তিনি আট খেলার সবগুলোতেই অংশ নেন। ২৯.৫০ গড়ে ৪১৩ রান করেন যাতে দুইবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান সংগ্রহ করেছিলেন।[১০] প্রথম খেলাটি কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলেন। সেখানে তিনি ২২ ও ৪৫ রানসহ তিনটি স্ট্যাম্পিং, একটি ক্যাচ ও একটি রান আউটে সহায়তা করেন।[১১] এরপর নিজ মাঠে ১ ও ৩৩ রানসহ উভয় ইনিংসে একটি করে মোট দু’টি স্ট্যাম্পিং করেন।[১২] নিজ মাঠে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৩৫ ও ৪ রান তোলেন[১৩] এবং প্রতিপক্ষের মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ তোলেন।[১৪] ২২ নভেম্বর, ১৯৪০ তারিখে বছরের স্যাগার্সের খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র খেলায় অংশ নেন। ব্রিসবেনে নিউ সাউথ ওয়েলস দল কুইন্সল্যান্ড-ভিক্টোরিয়ার সম্মিলিত দলের মুখোমুখি হয়। স্যাগার্স ৫৮ রান তোলেন যাতে তার দল ৪২৯ রান সংগ্রহ করে। এ রানের জবাবে প্রতিপক্ষীয় দল ২০২ রানে অল-আউট হয়। কুইন্সল্যান্ড-ভিক্টোরিয়া দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৬ রান তুললেও স্যাগার্স ঐ ইনিংসে সাত ক্যাচ নিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সমান ভাগীদার হন।[১৫] তারপর স্যাগার্স সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৭[১৫] এবং ১ জানুয়ারি, ১৯৪১ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৮ তোলেন।[১৬] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পরার পূর্বে তার শেষ খেলায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৩ তোলেন।[১৭] ঐ মৌসুমে গ্লাভসের সাহায্যে ১৮ ক্যাচ ও ১৩ স্ট্যাম্পিং করেন।[১০]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সম্পাদনা১৯৪১ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত স্যাগার্সের খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৪১ তারিখে সিডনিতে রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সে (আরএএএফ) তিনি তালিকাভূক্ত হন। লিডিং এয়ারক্রাফটসম্যান আরএ স্যাগার্স ৪২১০৪৩ হিসেবে এলিমেন্টারি ফ্লাইট স্কুলে কাজ করেন। ২৯ জুলাই, ১৯৪২ তারিখে তিনি এ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পান।[৫] তাস্বত্ত্বেও ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করতে পারেননি।[১][১০] ১৯৪৫-১৯৪৬ মৌসুমে তিনি সাত খেলায় অংশ নেন, ২১.০০ গড় ১৬৮ রান এবং ১২ ক্যাচ ও পাঁচ স্ট্যাম্পিং করেন।[১০] তারপর তিনি ব্যাট হাতে রান খরায় ভুগতে থাকেন; ১৯৪৬-১৯৪৭ মৌসুমে আট খেলায় ২১.০০ গড়ে তিনি মাত্র ১৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাস্বত্ত্বেও ১৬ ক্যাচ ও সাত স্ট্যাম্পিং করে উইকেট-রক্ষক হিসেবে কার্যকরী ছিলেন।[১০] ১৯৪৭-১৯৪৮ মৌসুমে তার ব্যাটিংয়ে প্রাধান্যতা ফিরে আসে। ১০ খেলায় ২৯৮ রান তুলেন ও প্রথমবারের মতো ৯০-এর ঘরে যান। এছাড়াও, গ্লাভস হাতে খুবই সফলতম মৌসুম উপভোগ করেন, খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ২১ ক্যাচ ও চার স্ট্যাম্পিং করেন।[১০]
প্রত্যাবর্তন
সম্পাদনাইংল্যান্ড সফরের পর স্যাগার্সের খেলার ধরন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে এএল হ্যাসেট একাদশের পক্ষে টেস্টের প্রস্তুতিমূলক ও আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির খেলায় অন্তর্ভুক্ত হন। পাশাপাশি নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি।[৮] পরবর্তীতে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ রান তোলেন।[১৮] একই সময়ে তিনি নিবন্ধনপত্রে তিন বছর কমিয়ে জ্যাক মরনিকে নিউ সাউথ ওয়েলসে ক্রিকেট খেলায় ফিরে আসতে সহায়তা করেন।[১] সর্বোপরি, ১৯৪৮-১৯৪৯ মৌসুমে তিনি নয় খেলায় ২৫.০০ গড়ে ৩০০ রান করেন যা তার মৌসুমে সর্বোচ্চ। এছাড়াও ২১ ক্যাচ ও ৬ স্ট্যাম্পিং করেন।[১০] ১৯৪৯-১৯৫০ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর অস্ট্রেলিয়া ফিরে পুনরায় ১৯৫০-১৯৫১ মৌসুমের শেষ মেয়াদে অংশ নেন। কিন্তু একটিমাত্র খেলায় অংশ নিয়ে পাঁচ রান সংগ্রহ করেন ও দুই ক্যাচ নেন।[১০] ১৯৩৯ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত তার পূর্ণাঙ্গ প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ৭৭ খেলায় অংশ নেন। সফরে এসেক্সের বিপক্ষে একটি শতরান করেন ও নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে আটটি অর্ধ-শতক করেন। ২৩.৮৯ গড়ে ১,৮৮৮ রানসহ ১৪৬ ক্যাচ ও ৭৫ স্ট্যাম্পিং করেন।[১]
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ
সম্পাদনাঅপরাজেয় দল
সম্পাদনাইংল্যান্ডে ১৯৪৮ সালের অ্যাশেজ সফরে দলের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক টলনকে সহায়তার লক্ষ্যে স্যাগার্স অন্যতম সদস্যরূপে মনোনীত হন। লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে কাউন্টি খেলার প্রথমটিতে তিনি ছয় রানসহ দুই ক্যাচ নেন[১৯] এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুই স্ট্যাম্পিং ও এক ক্যাচ নেন।[২০] তারপর তিনি এসেক্সের বিপক্ষে খেলেন যাতে অস্ট্রেলিয়া ৭২১ রান তুলেছিল। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে স্যাগার্স তার নিজস্ব সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৪* রান করেন। তার এ শতকটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একমাত্র শতক ছিল। স্যাম লক্সটনের সাথে ৬৫ মিনিটে ১৬৬ রানের জুটি গড়েন। বিল ব্রাউন ও ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের সাথে লক্সটনও শতরান করেছিলেন।[২১] এরপর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখোমুখি হন এবং ছয় রান সংগ্রহসহ এক ক্যাচ নেন।[২২] পরবর্তীতে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ২২ ও এক ক্যাচ,[২৩] হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে আরও একটি স্ট্যাম্পিং,[২৪] ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ২২,[২৫] সারের বিপক্ষে ১২ ও চার স্ট্যাম্পিং[২৬] এবং গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে আরও তিনটি স্ট্যাম্পিং করেন।[২৭]
২২ জুলাই, ১৯৪৮ তারিখে হেডিংলিতে অপরাজিত দলের ইংল্যান্ড সফরের চতুর্থ টেস্টে তার অভিষেক ঘটে।[১] ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রান তুললেও স্যাগার্স ডেনিস কম্পটনকে ২৩ ও জিম লেকারকে চার রানে ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন।[২৮] এর প্রত্যুত্তরে অস্ট্রেলিয়া ৪৫৮ রান তোলে। কিন্তু লেকারের বোলিংয়ে মাত্র পাঁচ রানে ইংরেজ উইকেট-রক্ষক গডফ্রে ইভান্সের হাতে ধরা পড়েন। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬৫ রান তুলে যাতে কেন ক্রানস্টনের একমাত্র ক্যাচ নেন। পরবর্তীতে আর্থার মরিসের ১৮২ ও ব্র্যাডম্যানের অপরাজিত ১৭৩* রান তুললে তাকে আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার প্রয়োজন পড়েনি। অস্ট্রেলিয়া সাত উইকেটে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে।[২৮] ১৯৪৮ সালের অ্যাশেজের বাদ-বাকী আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেননি তিনি। এ সফরে তিনি ২৩.২২ গড়ে ২০৯ রান তোলেন। তন্মধ্যে এসেক্সের বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৪* রান করেন। এছাড়াও রেকর্ড হিসেবে ২৩ ক্যাচ ও ২০ স্ট্যাম্পিং করেন। এ সফরের পর ব্র্যাডম্যান তার ‘‘ফেয়ারওয়েল টু ক্রিকেট” গ্রন্থে স্যাগার্স সম্বন্ধে লিখেছেন যে, তিনি টলনের ন্যায় গতিশীল বা ক্ষিপ্রতার সমকক্ষ নন কিন্তু সর্বদাই প্রকৃত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের চেষ্টা চালিয়েছেন। সর্বাপেক্ষা পরিচ্ছন্ন ও খেলোয়াড় তিনি।[২৯]
দক্ষিণ আফ্রিকা
সম্পাদনা১৯৪৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে স্যাগার্স তার পরের টেস্টে অংশ নেন।[৩০] ঐ সফরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক ছিলেন ও পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই অংশ নেন। ১৯৪৮ সালের ইংল্যান্ড সফরে সফলতার আলোকে স্যাগার্স মন্তব্য করেন যে, ‘আমাকে এখনই দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে দাও। কিন্তু আমি তার ভবিষ্যতের দ্বিগুণ নিশ্চয়তা দিতে পারি না, অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চয়তা চাই।’[৩] নাটালের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় স্যাগার্স ১৭ রান ও চার ক্যাচ নেন[৩১] এবং নর্থ ইস্টার্ন ট্রান্সভালের বিপক্ষে এক ক্যাচ ও দুই স্ট্যাম্পিং করেন। কিন্তু কোন ইনিংসেই তাকে ব্যাটিং করতে হয়নি।[৩২] তবে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে তিনি ৩২ রানসহ তিন স্ট্যাম্পিং ও তিন ক্যাচ নিয়েছিলেন।[৩৩] অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে না পারলেও দুই স্ট্যাম্পিং করেছিলেন।[৩৪] এরপর ট্রান্সভালের বিপক্ষে এক ও অপরাজিত শূন্য রান করেন।[৩৫]
২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে জোহেন্সবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে কুয়ান ম্যাকার্থি’র বলে লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লিউ) হবার পূর্বে ১৪ রান তোলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো-অনে পড়লে তিনি তিন ক্যাচ নেন যাতে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৮৫ রানে জয় পায়।[৩৬] কেপটাউনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে স্যাগার্স একবার ব্যাট করার সুযোগ পান। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৫২৬ রানে ডিক্লেয়ার করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো-অনে পড়ে (ধারাবাহিকভাবে দুইবার ব্যাটিং) ও আট উইকেটে পরাজিত হয়। খেলায় তিনি চার ক্যাচসহ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে কলিন ম্যাককুলের বলে তিন স্ট্যাম্পিং করেন।[৩৭] এছাড়াও তিনি তৃতীয় টেস্টে দুই ক্যাচ ও এক স্ট্যাম্পিং করেন এবং প্রথম ইনিংস দুই রান তোলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলেও অস্ট্রেলিয়া পাঁচ উইকেটে জয় পায়।[৩৮] পুনরায় জোহেন্সবার্গে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্যাগার্স পাঁচ রানে অপরাজিত ছিলেন এবং খেলা ড্র হওয়ায় তার ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন পড়েনি। খেলায় তিনি দুই ক্যাচ নিয়েছিলেন।[৩৯]
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক এলাকায় অবস্থিত ক্রুসেডার্স গ্রাউন্ডে ৩ থেকে ৬ মার্চ, ১৯৫০ তারিখে পঞ্চম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত চার রান করার পর স্যাগার্স দুই ক্যাচ ও চার স্ট্যাম্পিং করেন যাতে অস্ট্রেলিয়ার ৫৪৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছতে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫৮ ও ১৩২ রানে অল-আউট হয়।[৪০] খেলায় অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ২৫৯ রানে জয়ী হবার পাশাপাশি ৪-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয় করে। কিন্তু টলনের দলে প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষিতে জাতীয় দলে খেলার আর সুযোগ ঘটেনি তার। স্যাগার্স একবার কট, স্ট্যাম্পড একবার ও একবার লেগ বিফোর উইকেটে আউট হলেও কখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোল্ড হননি।[৪১] আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তার চূড়ান্ত মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩.৮৭ গড়ে ১১১ রানসহ ৩০ ক্যাচ ২০ স্ট্যাম্পিং করেন যা এক বর্ষপঞ্জীতে তার সর্বোচ্চ।[৪২] পুনরায় তিনি টলনের স্থলাভিষিক্ত হলেও খেলার মান পড়ে যাওয়ায় ১৯৫২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বিপক্ষে খেলার জন্য গিল ল্যাংলি তার পরিবর্তে দলে অন্তর্ভুক্ত হন।[৪৩] ১৯৫১ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি এবং ১৯৮৭ সালে নিউ সাউথ ওয়লসের হারবোর্ড এলাকায় তার দেহাবসান ঘটে।[১]
টেস্টে ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন
সম্পাদনাব্যাটিং[৪৪] | উইকেট-রক্ষণ[৪৫] | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
প্রতিপক্ষ | খেলা | রান | গড় | সর্বোচ্চ | ১০০/৫০ | ক্যাচ | স্ট্যাম্পিং | ইনিংসপ্রতি ডিসমিসাল | সর্বাধিক ডিসমিসাল (ইনিংস) |
ইংল্যান্ড | ১ | ৫ | ৫.০০ | ৫ | ০/০ | ৩ | ০ | ১.৫০ | ২ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ৫ | ২৫ | ১২.৫০ | ১৪ | ০/০ | ১৩ | ৮ | ২.৩৩ | ৪ |
সর্বমোট | ৬ | ৩০ | ১০.০০ | ১৪ | ০/০ | ১৬ | ৮ | ২.১৮ | ৪ |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ ইএসপিএনক্রিকইনফোতে রন স্যাগার্স (ইংরেজি) retrieved 28 April 2008
- ↑ Lord of the crease from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ ক খ Alfred, p. 57.
- ↑ "Sporting greats - Australia reveres and treasures its sporting heroes."। Australian Government - Culture and Recreation Portal। ৮ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০০৭।
The 1948 Australian cricket team captained by Don Bradman, for example, became known as 'The Invincibles' for their unbeaten eight-month tour of England. This team is one of Australia's most cherished sporting legends.
- ↑ ক খ World War II Nominal Roll, Commonwealth of Australia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে retrieved 27 December 2007
- ↑ New South Wales Registry of Births, Deaths and Marriages - Ronald Arthur Saggers ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুলাই ২০১১ তারিখে retrieved 30 April 2008
- ↑ Pollard, p. 913.
- ↑ ক খ Teams played for by Ron Saggers from Cricket Archive, retrieved 29 April 2008
- ↑ New South Wales v South Australia, 1939/1940 from Cricket Archive, retrieved 29 April 2008
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ First-class Batting and Fielding in Each Season by Ron Saggers from Cricket Archive, retrieved 28 April 2008
- ↑ Queensland v New South Wales 1940/1941 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ New South Wales v Queensland 1940/1941 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ New South Wales v Victoria 1940/1941 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Victoria v New South Wales 1940/1941 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ ক খ Clowes, p. 221.
- ↑ Clowes, p. 228.
- ↑ South Australia v New South Wales 1940/1941 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Clowes, p. 234.
- ↑ Leicestershire v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Cambridge University v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Rubbing their noses in it from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Oxford University v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Lancashire v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Hampshire v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Yorkshire v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Surrey v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Gloucestershire v Australia 1948 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ ক খ The Ashes - 4th Test, England v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Bradman, p. 227.
- ↑ RA Saggers - Test matches - All Round Analysis from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Natal v Australia in 1949/1950 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ North Eastern Transvaal v Australia 1949/1950 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ South African XI v Australia 1949/1950 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Orange Free State v Australia 1949/1950 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Transvaal v Australia 1949/1950 from Cricket Archive retrieved 29 April 2008
- ↑ Australia in South Africa Test Series - 1st Test - South Africa v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Australia in South Africa Test Series - 2nd Test - South Africa v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Australia in South Africa Test Series - 3rd Test - South Africa v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Australia in South Africa Test Series - 4th Test - South Africa v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Australia in South Africa Test Series - 5th Test - South Africa v Australia from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ RA Saggers ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে from Test Cricket Tens, retrieved 28 April 2008
- ↑ RA Saggers Test matches - Series by Series from CricInfo retrieved 28 April 2008
- ↑ Browning, p. 10.
- ↑ "Statsguru - RA Saggers - Test matches - Batting analysis"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০০৮।
- ↑ "Statsguru - RA Saggers - Test Bowling - Fielding analysis"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০০৮।
আরও দেখুন
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Alfred, L. Testing Times: The Story of the Men Who Made SA Cricket, New Africa Books, 2003. আইএসবিএন ০-৮৬৪৮৬-৫৩৮-৪
- Bradman, Donald (১৯৯৪)। Farewell to cricket। Editions Tom Thomson। আইএসবিএন 1-875892-01-X।
- Browning, M. Rod Marsh: A Life in Cricket, Rosenberg Publishing, 2004. আইএসবিএন ১-৮৭৭০৫৮-২৩-৮
- Clowes, C. 150 Years of NSW First-Class Cricket: A Chronology, Allen & Unwin, 2007. আইএসবিএন ১-৭৪১৭৫-০৮২-২
- Pollard, Jack (১৯৮৮)। Australian Cricket: The game and the players। Sydney: Angus & Robertson। আইএসবিএন 0-207-15269-1।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে রন স্যাগার্স (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে রন স্যাগার্স (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)