রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্মঃ ২১ ডিসেম্বর,১৮২৭ — মৃত্যুঃ ১৩ মে, ১৮৮৭) একজন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক [৩] এবং প্রবন্ধকার ছিলেন।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ২১ ডিসেম্বর ১৮২৭ [১] বাকুলিয়া, হুগলী জেলা, ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে[২] |
মৃত্যু | ১৩ মে, ১৮৮৭ (৬০ বছর) কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি,ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে |
পেশা | কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক |
জাতীয়তা | 🇮🇳 ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | পদ্মিনী উপাখ্যান, কর্মদেবী, শূরসুন্দরী |
জন্ম ও পরিবার
সম্পাদনা১৮২৭ সালে মাতুলালয়, বর্ধমান জেলার কালনার সন্নিকটস্থ হুগলী জেলার বাকুলিয়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার আদি নিবাস বর্তমান হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়া সন্নিকটস্থ রামেশ্বরপুর৷[২] তার পিতার নাম রামনারায়ণ এবং মাতার নাম হরসুন্দরী দেবী। [১] পিতা মারা যাবার পরে মাতুলালয়ে লালিত-পালিত হন।[৪]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনারঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাকুলিয়ার স্থানীয় পাঠশালা ও মিশনারী স্কুলে শিক্ষা শেষে হুগলি মহসিন কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেন।[৩] ইংরেজি, সংস্কৃত এবং প্রাচীন ওড়িয়া কাব্য ও সাহিত্যে তার জ্ঞান ছিল।
কর্মজীবন
সম্পাদনাকবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সাহায্যে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তিনি সাহিত্য রচনা আরম্ভ করেন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত এডুকেশন গেজেট পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন। সেই সময়ের এডুকেশন গেজেটে তাঁর গদ্য এবং পদ্য দুই রকম রচনাই প্রকাশিত হত।
১৮৫২ সালে প্রকাশিত 'মাসিক সংবাদ সাগর' ও ১৮৫৬ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'বার্তাবহ' পত্রিকা দুটোতে তিনি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ৬ মাস অধ্যাপনা করবার পর আয়কর অ্যাসেসর এবং ডেপুটি কালেক্টর হন। তারপর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে সুনামের সাথে চাকরি করে ১১ এপ্রিল ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অবসর নেন।[৫]
রচনাসমগ্র
সম্পাদনাতিনি মূলত স্বদেশপ্রেমিক কবিরূপে বিখ্যাত। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মিনী উপাখ্যান, কর্মদেবী এবং শূরসুন্দরী। টডের অ্যানাল্স্ অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিস্ অফ রাজস্থান থেকে কাহিনীর অংশ নিয়ে তিনি পদ্মিনী উপাখ্যান রচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্বদেশী যুগের বিপ্লবীদের মধ্যে পদ্মিনী উপাখ্যানের অংশ -
“ | স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় |
” |
খুবই বিখ্যাত ছিল। তিনি ১৮৭২ সালে কালিদাসের সংস্কৃত কুমারসম্ভব ও ঋতুসংহারের পদ্যানুবাদ করেছিলেন। একই বছরে প্রকাশিত নীতিকুসুমাঞ্জলি তাঁর অপর পুস্তিকা, যা সংস্কৃত নীতি ও তত্ত্বমূলক কবিতার অনুবাদ। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রচিত কাঞ্চী কাবেরী কাব্যগ্রন্থ প্রাচীন ওড়িয়া কাব্যের অনুসরণে লিখিত। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় 'উৎকল দর্পণ' নামে উড়িয়া ভাষায়ও একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। উৎকল দর্পণ নামে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 'উৎকল দর্পণ'-এ তিনি উরিষ্যার পুরাতত্ব ও উড়িয়া ভাষা সম্পর্কে অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন।[৩] তাঁর কলিকাতা কল্পলতা গ্রন্থটিই সম্ভবত বাংলা ভাষায় প্রথম কলকাতার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। ইংরেজি প্রভাবিত বাংলা সাহিত্যের তিনি অন্যতম পথপ্রদর্শক।
১৮৮২ সালে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন কবি মুকুন্দরামের "কবিকঙ্কন চন্ডী"। বাংলা সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে বিচরণকারী এই কবির উল্লেখযোগ্য অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো:
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "বাংলা কাব্য-সাহিত্যের নবযুগের প্রধান প্রবর্তক কবিবর রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়"। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বিচিত্রা দৈনিক স্টেটসম্যান,কলকাতা। ২০২০-০৬-০৮।
- ↑ ক খ "Rangalal Bandyopadhyayer Granthabali"।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জীবনী, বাংলাপিডিয়া, এশিয়াটিক সোসাইটির জ্ঞানকোষ।
- ↑ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা-৩৩৭, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬
- ↑ প্রথম খণ্ড - সংশোধিত চতুর্থ খণ্ড। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ।
- ↑ "রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-১৩।