যাঁতা
যাঁতা (বা জাঁতা) হল ডাল ভাঙ্গার এক প্রকার হস্তচালিত যন্ত্র। বর্তমানে এটি ইঞ্জিল চালিত যন্ত্রের সাথে লাগিয়ে ডাল, চাল, হলুদ-মরিচ বা অন্য যে কোন কিছু গুঁড়া করতে ব্যবহার করা হয়। তবে গ্রামাঞ্চলে যাঁতা বলতে এখনও হাতে এক খণ্ড কাঠি দিয়ে গোলাকৃতির চাকার মত পাথরের যে যন্ত্রটি ঘুরিয়ে ডাল বের করা হয় তাকেই বোঝায়। হাতে চালিত ডাল জাতীয় শস্য ভাঙ্গার যন্ত্রটি আজ উপমহাদেশে বিলুপ্তির পথে। [১]
বিবরণ
সম্পাদনাএটি পাথর দ্বারা নির্মিত একটি হাতল যন্ত্র। যার দুইটি অংশ থাকে। দেখতে অনেকটাই চাকার মতো। একটির উপর অপরটি বসিয়ে দিতে হয়। আর এর মুখের মধ্যে ডাল শস্য (মসুর, খেসারি, ছোলা, মাষকলাই ইত্যাদি) মুঠি মুঠি দিয়ে, কাঠির একপ্রান্ত যাঁতার উপরের অংশের কাঠি বাঁধানোর নির্দিষ্ট স্থানে বাঁধিয়ে ঘুরালেই; যাঁতার দুই শাণিত অংশের মাঝে পরে শস্য গুলো ডাল হয়ে বের হয়। এছাড়া চাউলের আটাও বানানো হয় এর মাধ্যমে।তবে এটা বাঁকা দিকে ঘোড়ালে সমস্ত শস্য পড়ে যায়।
ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ
সম্পাদনাআগে যাঁতা ব্যবহার করা হতো ধান, চাল, ডাল, গম, যব ভাঙিয়ে চাল, চালের গুঁড়া, পায়রা ইত্যাদি বানানোর কাজে। তবে এসব কাজের বেশিরভাগ-ই করা হতো ঢেঁকি এর মাধ্যমে। তা-ও অল্প পরিমাণে ভাঙানোর কাজে যাঁতা ব্যবহার করা হতো। আগেকার দিনের নববধূরা তাদের বাবার বাড়ি থেকে উপহার হিসেবে যাঁতা পেত। অর্থাৎ, একসময় যাঁতা উপহার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এগুলো গ্রাম্যমেলায় কিনতে পাওয়া যেতো। কালের বিবর্তনে যাঁতা এর ব্যবহার অনেককাংশে হ্রাস পেয়েছে। খুব কম পরিবার-ই এখন যাঁতা প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে। অনেকে ঐতিহ্য হিসেবে যাঁতা সংরক্ষণ করে থাকেন। তাই কিছু কিছু বাড়িতে এখনো যাঁতা দেখতে পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক পটভূমি
সম্পাদনাএটার কবে থেকে প্রচলন হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে এটা গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহাসিক জিনিস। এই ঐতিহাসিক জিনিসটাই এখন বিলুপ্তির পথে।
বিলুপ্তর কারন
সম্পাদনাক্রমশ আধুনিক মেশিননির্ভর শিল্প ও প্রযুক্তির দাপটে ব্যবহার কমে গেছে এসব শিল্প। সেই সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরাও।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আবু নাসের হুসাইন (২০১৬-০৭-০৩)। "কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাঁতা বিলুপ্তির পথে"। উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১২।