'ম্যাগনা কার্টা হল রাজার ক্ষমতা খর্ব করার একটি ঐতিহাসিক দলিল। যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন স্বাক্ষরিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে ম্যাগনা কার্টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে একে বর্তমান সাংবিধানিক শাসনের সূচনা বলা যেতে পারে। ১১৮৮ সালে রাজা দ্বিতীয় হেনরি সব অস্থাবর সম্পত্তির উপর কর ধার্য করেন। কেননা, যুদ্ধের বিপুল ব্যয়ভার রাজার উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেছিল যে, অতিরিক্ত কর ধার্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অন্য দিকে তার পুত্রদ্বয় রিচার্ড ও জন ছিলেন স্বৈরাচারী। বিশেষ করে রাজা জনের স্বেচ্ছাচারমূলক কাজের জন্য ভূস্বামীগণ অতিষ্ঠ হয়ে রাজার ক্ষমতা সংকোচনের জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা জন সামন্তদের চাপে পড়ে রাজার অধিকার সংক্রান্ত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মানে ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যাগনাকার্টা প্রনীত হয়। এই চুক্তির কারণে রাজা কেও হতে হয়েছিলো নিয়মের অধীন। ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে ম্যাগনা কার্টা প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর শর্ত গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, রাজা প্রতিনিধি স্থানীয় লোকদের অনুমোদন ছাড়া কারো স্বাধীনতায় বা সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এই চুক্তির সুপ্রভাব শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতা লিপ্সু রাজা সহজেই এই চুক্তি তে স্বাক্ষর করতে চান নি। কিন্তু সকল সামন্ত মিলে রাজা জন কে লন্ডনের কাছে এক দ্বীপে বন্দি করে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এই চুক্তি বিচার বিভাগকেও অনেকটা নিরপেক্ষ করছিলো। ইংল্যান্ডের সংবিধান বলতে নির্দিষ্ট কোনো দলিল নেই। এই দলিলটি সে দেশের অন্যতম সাংবিধানিক দলিল। প্রজাদের অধিকার ও রাজার ক্ষমতা হ্রাসের যৌক্তিক এ দলিল পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহুদেশে মানবাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে। পরবর্তীকালে এই ম্যাগনা কার্টার ওপর ভিত্তি করেই ভারতীয় সংবিধান রচিত হয়েছে।১২১৫ সালের লন্ডনে এক নদীর পাড়ে একটি ঘটনা ঘটেছিলো, যা ইংরেজি ভাষাভাষী অঞ্চলসহ বিশ্বের ঘটনা প্রবাহকে পাল্টে দিয়েছিলো। রাজা নিজের খুশিমতো জোর করে নাগরিক সমাজের সম্পত্তি আত্মসাৎ বা করায়ত্ত করে নিতেন। এরই বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ একত্রিত হন। ম্যাগনাকার্টা সনদের শর্ত গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, রাজা প্রতিনিধি স্থানীয় লোকদের অনুমোদন ছাড়া কারো স্বাধীনতায় বা সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না কিন্তু আংশিকভাবে। এই চুক্তির সুপ্রভাব শুধু ইংল্যান্ডেই নয়, অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতালিপ্সু রাজা সহজেই এই চুক্তি তে স্বাক্ষর করতে চান নি। কিন্তু সকল সামন্ত মিলে রাজা জন কে লন্ডনের কাছে এক দ্বীপে বন্দি করে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

ম্যাগনা কার্টা

নদীর পাড়ে রানীমেড নামক স্থানে জড়ো হয়ে সমবেত নাগরিক স্থির করেন যে, রাজার ক্ষমতার রশি টেনে ধরতে হবে। এর ফল হচ্ছে ম্যাগনাকার্টা। এটি ৬৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত ৪ হাজার শব্দের এক সমৃদ্ধ দলিল। শতশত বছর ধরে ইংরেজ জাতি এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ এই মূলনীতি অনুসরণ ও ব্যাখ্যা করেছে এবং স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে উঠেছে। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং বিল অব রাইট লেখা হয়েছে এর উপর ভিত্তি করে। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছে এর ধারণাসমূহ। সরকারের শাসনের রাশ টেনে ধরার ক্ষেত্রে একে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়।


১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ ঘোষিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৬ দফাকে ম্যাগনা কার্টা চুক্তির সাথে তুলনা করা হয়।কারন এটি ছিল পাকিস্তানি শাসকদের জনগণের উপর অন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ বন্ধের একটি দলীল।

ব্রিটিশ শ্বাসনতন্ত্রের বাইবেল নামে খ্যাত এই ম্যাগনাকার্টা।

বিশ্ব ইতিহাসে এই সনদে সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয় যে, কোনো দেশের রাজাসহ সে দেশের সকল মানুষ সে দেশের সকল রাষ্ট্রের আইনের অধীন।