মোহাম্মদ রফি খান

বাংলাদেশী শিশু বিশেষজ্ঞ

এম আর খান (১ আগস্ট ১৯২৮ - ৫ নভেম্বর ২০১৬) বাংলাদেশের প্রথিতযশা অধ্যাপক, চিকিৎসক ও শিশুবিশেষজ্ঞ। এম আর খান নামে তিনি সর্বাধিক পরিচিত হলেও তার পুরো নাম মোহাম্মদ রফি খান। বাবা মা, প্রতিবেশী সকলের কাছে ‘খোকা’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হয়েছেন।

এম আর খান
জন্ম(১৯২৮-০৮-০১)১ আগস্ট ১৯২৮
সাতক্ষীরা
মৃত্যু৫ নভেম্বর ২০১৬(2016-11-05) (বয়স ৮৮)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাজাতীয় অধ্যাপক, চিকিৎসক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

এম আর খানের জন্ম ১৯২৮ সালের ১ আগস্টে সাতক্ষীরায়। বাবা আলহাজ্ব আব্দুল বারী খান, মা জায়েরা খানম। তাদের চার ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। মায়ের হাতে পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়। এরপর রসুলপুর প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন। সাতক্ষীরা সদরের প্রাণনাথ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় (পিএন স্কুল)-এ ভর্তি হন তিনি। পড়াশুনায় মেধাবী ছিলেন খুব। ছেলেবেলায় খুব ভাল ফুটবল খেলতেন। রসুলপুর স্কুল টিম লিডার হিসেবে তিনি ১৩টি ট্রফি লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে এ স্কুল থেকেই কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। মেট্রিক পাস করার পর তিনি কলকাতায় যান। ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৫ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন তিনি। এরপর ১৯৫৬ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বৃটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে একই সালে ডিপ্লোমা ইন ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (ডিটিএমএন্ডএইচ) ডিগ্রী লাভ করেন। স্কুল অব মেডিসিন লন্ডন থেকে তিনি ডিপ্লোমা ইন চাইল্ড হেলথ (ডিসিএইচ) ডিগ্রিও লাভ করেন। ১৯৬২ সালে 'এডিনবার্গের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান' থেকে তিনি এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ফেলো অব কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (এফসিপিএস) এবং ১৯৭৮ সালে এডিনবার্গ থেকে ফেলো অব রয়েল কলেজ অ্যান্ড ফিজিশিয়ানস (এফআরসিপি) ডিগ্রি লাভ করেন।

পরিবার

সম্পাদনা

রসুলপুর গ্রামের মেয়ে এম আর খানের দূর সম্পর্কের আত্মীয় আনোয়ারা বেগম আনুর সাথে ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আনোয়ারা বেগম ও ডা. এম আর খান দম্পতির একমাত্র মেয়ের নাম দৌলতুন্নেসা (ম্যান্ডি)।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৫২ সালে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন এম আর খান। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ১৯৫৬ সালে তিনি সস্ত্রীক বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে পড়াশুনা শেষ করে তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার কেন্ট এবং এডিনবার্গ গ্রুপ হাসপাতালে যথাক্রমে সহকারী রেজিস্টার ও রেজিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসোসিয়েট প্রফেসর অব মেডিসিন পদে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (শিশুস্বাস্থ্য) পদে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে যোগ দেন এবং এক বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ১৯৭০ সালে তিনি অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে তিনি ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর)-এর অধ্যাপক ও ১৯৭৩ সালে এই ইনস্টিটিউটের যুগ্ম-পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে অধ্যাপক ও পরিচালকের পদে যোগদান করেন। একই বছরে পুনরায় তিনি আইপিজিএমআর-এর শিশু বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে অধ্যাপক ডা. এম আর খান তার সুদীর্ঘ চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

পুরস্কার প্রদান

সম্পাদনা

পেনশনের টাকা দিয়ে মা ও শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন ডা. এম আর খান ও আনোয়ারা ট্রাস্ট। এ ট্রাস্ট থেকে শিশু স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অনুদান, হাসপাতাল ও স্কুল প্রতিষ্ঠা, মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে ভালো অবদানের জন্য দেয়া হয় ডা. এম আর খান ও আনোয়ারা ট্রাস্ট স্বর্ণপদক।[] ২০১১ সালে এ স্বর্ণপদক পেয়েছেন কমিউনিটি মাদার এ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এখলাসুর রহমান।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

শিক্ষা, চিকিৎসা, শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্গত অসহায় মানুষের সেবাসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজে অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ডা. এম আর খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক দেয়।[] ২০০৯ সালে তিনি একুশে পদক[] এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।[]

রচিত গ্রন্থ

সম্পাদনা
  • Practice of Paediatrics Medicine
  • An Essential Aid on Paediatrics Medicine
  • Essence of Paediatrics with Prof. M. Ekhlasur Rahman
  • প্রাথমিক চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • আপনার শিশুর জন্য জেনে নিন
  • শিশুকে সুস্থ রাখুন
  • ড্রাগ থেরাপি ইন চিলড্রেন

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "প্রথম আলো"। ১১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪ 
  2. "জনকন্ঠ"। ২০২০-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-০৩ 
  3. "সমকাল"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২ 
  4. "৪"। ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২ 
  5. "Muhith, Maqsudul, Bannya are among 14 named for 2016 Independence Award"। bdnews24.com। মার্চ ৭, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৫, ২০১৬