মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
মো. খলিলুর রহমান (জন্ম: অজানা, - মৃত্যু: ১৯৯৮ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
মো. খলিলুর রহমান | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৯৮ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
- একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন খলিলুর রহমান।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাখলিলুর রহমান জন্ম শরীয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জ উপজেলার কোড়ালতলী গ্রামে। তার বাবার নাম খবিরউদ্দীন দেওয়ান এবং মায়ের নাম আম্বিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম খাদিজা বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে ও চার ছেলে।
কর্মজীবন
সম্পাদনাখলিলুর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা ইপিআর উইংয়ের অধীনে মেহেরপুর সীমান্তে। তখন তার পদবী ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের লালবাজার ও শিকারপুর সাব-সেক্টরে। তিনি প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনামুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ। সীমান্তের ওপারে যখন এই খবর এল, তখন রাত। মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে চরম উত্তেজনা। অবরুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধারের দায়িত্ব পড়ল স্পেশাল প্লাটুনের ওপর। গভীর রাতেই ভারতের নদিয়া জেলার বেতাই থেকে মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হলেন বাংলাদেশে। মাথাভাঙা নদী পার হয়ে তারা ধর্মদহের চরে নামলেন। নদীর পশ্চিম পাশে বেতাইয়ে ছিলেন মো. খলিলুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধা ২৫ জন। মুক্তিযোদ্ধারা অবরুদ্ধ হয়েছেন মহেশকুন্ডিতে। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার অন্তর্গত মহেশকুন্ডি। সেখানে আছে সীমান্তচৌকি। এর পার্শ্ববর্তী স্থান—উত্তরে নারায়ণপুর, পূর্বে ডামারকা, দক্ষিণে ধর্মদহ ও পশ্চিমে ভারত। ধর্মদহ চরের অদূরে প্যারাকপুর সীমান্তচৌকি। তার পেছনে ইসলামপুর ও মহেশকুন্ডি গ্রাম। মহেশকুন্ডিতে সড়কপথে যেতে হলে আগে যেতে হবে তেকালা বাজার। সেখানেও আছে পাকিস্তানিদের সজাগ দৃষ্টি। ধর্মদহের চরে স্পেশাল প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা দুটি দলে বিভক্ত হলেন। একটি দলের নেতৃত্বে থাকলেন মো. খলিলুর রহমান। অপর দলের নেতৃত্বে আবুল খায়ের। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন মো. খলিলুর রহমান তার দল নিয়ে প্যারাকপুর আক্রমণ করবেন। আবুল খায়ের আক্রমণ করবেন তেকালা বাজার হয়ে মহেশকুন্ডিতে। মো. খলিলুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে নদীতে নেমে স্রোতের অনুকূলে সাঁতরে প্যারাকপুর রওনা হলেন। এই পথও বেশ বিপজ্জনক। প্যারাকপুরে নদীর পার ঘেঁষে আছে দুটি বাংকার। পাকিস্তানিরা ওই বাংকারে অবস্থান করে ২৪ ঘণ্টা নদীতে নজরদারি রাখে। ভোর হয় হয়। এমন সময় মো. খলিলুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে পৌঁছালেন ওই বাংকারের কাছে। মুক্তিযোদ্ধারা নদী থেকে নিঃশব্দে তীর বেয়ে উঠে অতর্কিতে হামলা চালালেন বাংকারে। কোনো গুলি খরচ নয়, বেয়নেট চার্জ করে তারা হত্যা করলেন বাংকারে থাকা পাকিস্তানি রক্ষীদের। প্যারাকপুরে ছিল অল্প কয়েকজন পাকিস্তানি। একই কায়দায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরও ঘায়েল করলেন। পাকিস্তানিরা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পেল না। ওদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দলটি মহেশকুন্ডিতে আক্রমণ করেছে। একটু পর খলিলুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে পেছন দিক দিয়ে সেখানে আক্রমণ চালালেন। তখন সকাল হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিমুখী আক্রমণে হতাহত হলো অনেক পাকিস্তানি সেনা। পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগী মিলে মহেশকুন্ডিতে ছিল অনেক। তাদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো। এতে খলিলুর রহমান ও তার সহযোদ্ধারা দমে গেলেন না। সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আটকে পড়া বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধার করেন। তাঁদের সাহসিকতায় বেঁচে যায় অনেক প্রাণ। মহেশকুন্ডির যুদ্ধ ছিল উল্লেখযোগ্য এক লড়াই। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অনেক পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী নিহত হয়। অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। [২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৬-০৫-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা 283। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।