মোহাম্মদ আবদুর রশীদ
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (জন্ম: ২২ জুলাই, ১৯৪৪ - মৃত্যু: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ | |
---|---|
জন্ম | ২২ জুলাই, ১৯৪৪ |
মৃত্যু | ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআবদুর রশীদের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার গাউটিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল খালেক এবং মায়ের নাম আনোয়ারা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা রশীদ। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনামোহাম্মদ আবদুর রশীদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে প্রেষণে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। ২৫ মার্চের পর তিনি রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মকর্তা ও ইপিআর বিওপির বাঙালি সেনাদের সংগঠিত করে নিজেই একটি দল গঠন করেন। পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলায় তিনি তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের মোতায়েন করেন ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেললাইনে। মোহাম্মদ আবদুর রশীদ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনারা রাজশাহী শহরের দিকে আসছে—খবর পেয়ে মোহাম্মদ আবদুর রশীদ এক দল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অবস্থান নিলেন পথে। অগ্রগামী পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেওয়া মাত্র শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা মোহাম্মদ আবদুর রশীদের নেতৃত্বে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। মোহাম্মদ আবদুর রশীদ পরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের শেখপাড়া সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সাব-সেক্টরে বেশ কটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ছিল রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। এই এলাকা ছিল পাকিস্তানিদের অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা। বিশাল পদ্মা নদীর নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ রাজশাহী ও এই এলাকার জন্য বিরাট প্রতিবন্ধক ছিল। শেখপাড়া সাবসেক্টরের অধীন এলাকায় অপারেশন করার জন্য পদ্মা নদী পার হতে হতো। মুক্তিযোদ্ধারা তার নেতৃত্বে বাঘা, বাজুবাঘা, বেসপুকুরিয়া, চারঘাট ও দুর্গাপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন চালান। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে আসতে থাকে। আরিচা ঘাট দিয়ে যমুনা নদী অতিক্রম করে তারা নগরবাড়ী আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি দল তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য গোলাগুলি হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী ও নাটোর হয়ে আবার রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। তখন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ তার দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করেন। তার অধীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। সেই সময় এই যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মোহাম্মদ আবদুর রশীদের দলের তখন প্রস্তুতি এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ যে পরিমাণ থাকা দরকার, তা ছিল না। তার পরও তিনি দুর্দম আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তার এই প্রত্যয় অব্যাহত থাকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৫-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৮১। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৩০৪। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।